সাহস থাকলে দেশে আসুন, তারেককে কাদের

সাহস থাকলে দেশে আসুন, তারেককে কাদের

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে ‘শব্দ বোমা’ না ফাটিয়ে দেশে ফিরে সাহসের প্রমাণ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।তারেককে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘রাজনীতি যখন করেন, তখন বিদেশে বসে দেশের রাজনীতির অঙ্গনে শব্দ বোমা ফাটাচ্ছেন কেন? আসুন, রাজপথ মোকাবেলা করুন।’

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে গ্রেপ্তার হন তারেক। পরের বছর চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়ে যুক্তরাজ্যে যান তিনি। কিন্তু জামিনের মেয়াদ শেষ হলেও দেশে ফেরেননি বিএনপি নেতা। এর মধ্যে বিদেশে অর্থপাচারের এক মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড ও ২০ কোটি টাকা জরিমানা এবং যে মামলায় মা খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে, সেই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তারেকের ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং দুই কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা হয়েছে তারেক রহমানের।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেকের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। এ ছাড়াও ইতিহাস বিকৃতি এবং মানহানির একাধিক মামলার আসামি বিএনপি নেতা।এর মধ্যেই গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর পর তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন করেছে বিএনপি।

সম্প্রতি কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দিতে যুক্তরাজ্যে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে দেশে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, তারেক রহমানকে অবশ্যই দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের মুখোমুখি করতে হবে। শুক্রবার রাজধানীতে আওয়ামী লীগের এক সেমিনার শেষে তারেক রহমানকে ফেরানোর বিষয়টি নিয়ে কাদেরের কাছে প্রশ্ন রাখেন সাংবাদিকরা। জবাবে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘বিষয়টি হচ্ছে তারেক রহমানের সাহস আছে কিনা, কত সাহস আছে।… রাজনীতি যখন করেন জেলে যাওয়ার সাহস নেই, সেই রাজনীতি কোন দিন সফলকাম হবে না। রাজনীতি করলে জেল জুলুম সহ্য করতে হবে।’

তারেককে ফেরানোর চেষ্টা ও আগামী নির্বাচনের মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এমন প্রশ্নও ছিল গণমাধ্যমকর্মীদের। জবাব আসে, ‘নির্বাচনের আগে তারেক রহমানকে কে ফিরিয়ে আনবে? আমরা? বিদেশে পালিয়ে থাকা দণ্ডিত আসামিকে আইনগতভাবে ফিরিয়ে আনতে আদালতের নির্দেশ আছে। সেক্ষেত্রে কোন সমীকরণের বিষয় নেই।’

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার নিয়ে বিএনপির দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘তাদের (বিএনপি) নিজেরাই তো ঠিক নেই। কখনও বলে সহায়ক সরকার, কখনও বলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আমরা কোনটা গ্রহণ করব?’ ‘পরিস্কার বলে দিচ্ছি, আর পাঁচ-ছয় মাস পরে নির্বাচনের তফসিল। নির্বাচনের আগে এখন আর সংবিধানের বাইরে যাওয়া কোন সুযোগ নেই।’ ‘তার বাইরে যেতে চাইলে চিৎকার করতে পারেন, আন্দোলন করে আদায় করবেন। এই কথা তো শুনেছি নয় বছর আগে থেকে। নয় বছরে নয় মিনিটও দাঁড়াতে পারেননি।’

সেমিনারে গিয়েই সেমিনারের বিরোধিতা

বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রাথমিক স্বীকৃতিপত্র পাওয়ার বিষয়ে সেমিনারটির আয়োজন করে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটি। এই সেমিনারে গিয়েই এই ধরনের আয়োজনকে অপ্রয়োজনীয় বলেন কাদের। বলেন, ‘এখন আমি এ ধরনের সেমিনারের পক্ষপাতি নই। কারণ আগামী নির্বাচন খুবই নিকটে। এখন আমাদের অ্যাকশন প্রোগ্রাম নিতে হবে।’

‘বসে বসে ঘণ্টা পর ঘণ্টা আমরা সেমিনার করব, প্রচার সেল তা করেও আসছে। কিন্তু এ মুহূর্তে এটার আর প্রয়োজন নেই। এখন অনেক কাজ রয়েছে।’‘আমাদের কৌশল নির্ধারণ করতে হবে, কোন সময়ে কোন কাজ করব, তা আমাদের ঠিক করতে হবে। …এয়ার কন্ডিশনড রুমে সেমিনার না করে তাপদগ্ধ মাঠে বেরিয়ে পড়তে হবে।’

‘আর ছয় মাস পরে নির্বাচনের শিডিউল। এখন পর্যন্ত আমাদের থিম শ্লোগান ঠিক হয়নি। গতবার যেমন ছিল, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ, ভিশন ২০২১’। কিন্তু এবারের শ্লোগান এখনও ঠিক হয়নি। আমরা ফ্রি স্টাইলে একজন এক একটা বলে যাচ্ছি।’কিছু শ্লোগানের প্রস্তাবও রাখেন কাদের। বলেন, সেটা হতে পারে, ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’, ‘বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ অথবা ‘সবার জন্য সোনার বাংলা’।

সামাজিক মাধ্যমকে গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ

সামাজিক মাধ্যমে প্রচারে আওয়ামী লীগের অবস্থানের দুর্বল বলেও মনে করেন কাদের। বলেন, ‘এটা খুবই স্ট্রং (শক্তিশালী) নেটওয়ার্ক, এটাকে ইগনোর (অগ্রাহ্য) করার কোনো সুযোগ নেই। এটাকে প্রচার সেল গুরুত্ব দেবে বলে আমি মনে করি।’ প্রচার ও প্রকাশনা উপ-পরিষদের চেয়ারম্যান এইচটি ইমামের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিন আহমেদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান প্রমুখ।

সেমিনার সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। মূল প্রবদ্ধ উপস্থাপন করে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান শফিক উজ জামান।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment