শিগগিরই শেষ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার

শিগগিরই শেষ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার

চাঞ্চল্যকর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষের পথে। স্পর্শকাতর এ ঘটনায় দায়ের করা দুই মামলায় (হত্যা ও বিস্ফোরক আইন) ৪৯ জন আসামির মধ্যে ৪১ জনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। বাকি আটজনের যুক্তি উপস্থাপন শেষের মাধ্যমেই বিচারিক কার্যক্রম শেষ হবে। এরপরই বহুল প্রত্যাশিত রায়ের দিন ঠিক করবেন বিচারক। আগামী ২১ আগস্টের আগেই মামলা দুটি রায়ের জন্য আসবে বলে আশা করছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। এ দুই মামলায় সব আসামিই সর্বোচ্চ শাস্তি পাবেন, প্রত্যাশা তাদের।

রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে মামলা দুটির বিচার চলছে। এ মামলায় আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আগামী ৯, ১০ ও ১১ জুলাই দিন ধার্য রেখেছেন বিচারক। গতকাল দুই মামলার অন্যতম তিন আসামি পুলিশের সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ, আসামি রুহুল আমিন ও মুন্সি আতিকুর রহমানের পক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ করেন তাদের আইনজীবী আবদুস সোবহান তরফদার। এই তিনজনের যুক্তি শেষের মাধ্যমে ৪১ জন আসামির যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়।

এ দুই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মামলা দুটি শেষের পথে। ৪৯ জন আসামির মধ্যে ৪১ জনের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। সব আসামির যুক্তি শেষ হলেই রায়ের জন্য আসবে। তিনি বলেন, আসামিপক্ষ অহেতুক কালক্ষেপণ করছে। মামলার মেরিটে যুক্তি উপস্থাপন না করে, অপ্রাসঙ্গিক অনেক বক্তব্য আদালতে উপস্থান করছে। ফলে অহেতুক সময় নষ্ট হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ ২২৫ জন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে সব আসামিরই অপরাধ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। আশা করছি, আইন অনুযায়ী সবাই সর্বোচ্চ শাস্তি পাবেন। জানতে চাইলে আসামি পক্ষের আইনজীবী আবদুস সোবহান তরফদার বলেন, অহেতুক সময় নষ্ট করছি, এমন অভিযোগ সঠিক নয়। আসামির পক্ষে যথাযথ যুক্তি উপস্থাপনকে যদি রাষ্ট্রপক্ষ সময়ক্ষেপণ ধরে নেয়, তাহলে আমাদের কিছু করার নেই। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় একাধিক গ্রেনেড হামলা করে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায় হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি) নামের একটি জঙ্গিগোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীর নেতা ও মামলার প্রধান আসামি মুফতি হান্নানের ইতিমধ্যে অন্য এক মামলার রায় অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়ে গেছে। রাজনৈতিকভাবে চাঞ্চল্যকর এ মামলার পর্যায়ক্রমে তদন্ত ও চার্জশিটে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নামও যুক্ত হয়েছে আসামির তালিকায়। মামলার নথিসূত্রে জানা গেছে, দুটি মামলায় মোট আসামি ৫২ জন। তার মধ্যে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামী নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের এবং সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে হত্যাচেষ্টা মামলায় হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের ও শরীফ শাহেদুল ইসলাম বিপুলের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। ফলে এ মামলা থেকে তাদের নাম বাদ পড়েছে। অবশিষ্ট ৪৯ আসামির বিচার চলছে। মামলা দুটিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৪১ আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০-বি, ৩২৪, ৩২৬, ৩০৭, ৩০২, ১০৯ ও ৩৪ এবং বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের ৩, ৪ ও ৬ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়। এসব ধারায় হত্যা, হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করা, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, মারাত্মক অস্ত্র দিয়ে আঘাত, অপরাধে সহায়তা করা ইত্যাদি অভিযোগ আনা হয়েছে। এই ২১ জনের মধ্যে ১৮ জন পলাতক রয়েছে। তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীরা মামলা পরিচালনা করছেন। অন্য আট আসামি জামিনে রয়েছেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment