সিরাজদিখানে ঈদ যেন অধরাই রয়ে গেল বেদে পল্লীতে

 ইসমাইল খন্দকার,সিরাজদিখান(মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ

আধুনিক সভ্যতার অগ্রযাত্রায় সিরাজদিখানের আদিবাসী বেদেঁ পরিবারগুলো এখন অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছে। নগরায়নের এই যুগে ঢাকার পাশের জেলা মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলাটি অতি দ্রুত শহরায়ন হয়ে উঠছে। তৈরী হচ্ছে নতুন নতুন মার্কেট, গড়ে উঠেছে আধুনিক দোকানপাট। তাই গায়েঁর পথে ঝুড়ি মাথায় কিংবা কাঁধে লম্বা ব্যাগ ঝুলাঁনো বেদেঁ পরিবারের সদস্যদের আগের মতো চুরী ফিতা বিক্রি করতে দেখা যায় না। সভ্যতার অগ্রযাত্রায় ব্যস্ত এ সময়ে মানুষ আর আগের মতো জড়ো হয়ে সাপ খেলা দেখার সময় পায় না। তাছাড়া  ইন্টানেটের এই যোগে মিডিয়া গুলো অহরহ সাপ নিয়ে মেগা সিরিয়াল তৈরী করায়, সাপ খেলা দেখার আগ্রহও মানুষের এখন নেই বললেই চলে। তাই সিরাজদিখান উপজেলার বেদে পল্লীতে এবার ঈদ আনন্দ আর আগের মতো দেখা যাবে না। কোন রকমে দুমুঠো খেয়ে পড়ে বেচে আছে এ অঞ্চলের বেদেরা। তাদের কাছে ঈদ আনন্দ এখন উচ্ছ্বসিত হয় না। অর্থের অভাবে কোরবানী দেওয়া আর হয়ে উঠে না এখানকার বেদেদের। তাই ঈদের দিনও অন্য সব দিনের মতোই মনে হয় তাদের কাছে। বেদে পরিবারের শিশু-কিশোরদের মাঝে ঈদ নিয়ে হইচই নেই। ঈদ সামনে রেখে বিগত সময়ের মতো এখন আর বেদে পরিবারের শিশু-কিশোরদের আঁতশবাজি করতে দেখা যায় না। ঈদের আনন্দ এখন মনে ধরে না বেদেদের।   সিারজদিখান উপজেলার সিরাজদিখান বাজারের গোডাউন ঘাটে ইছামতি নদীতে ভাসমান ভাবে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকায় বর্তমানে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছে ৫০ টি বেদে পরিবার। বংশ পরম্পরায় এ নদীতে বসবাস করে আসছে ওই বেঁদে পরিবারগুলো। ইতিহাসে আছে ১৬৩৮ খ্রীস্টাব্দে শরনার্থী আরাকান রাজ বল্লার রাজার  সাথে বেঁদেরা প্রথম মুন্সীগঞ্জ জেলার এই সিরাজদিখান উপজেলায় আসে। উপজেলার সিরাজদিখান বাজার,তালতলা,রাজানগর,শেখরনগর,তুলশীখালী,ভবানিপুড়সহ প্রায় ৫০০ টি পরিবার বসবাস করে আসছে।     সিরাজদিখান বাজারে ঝোলা কাঁধে বের হওয়া বেদে পরিবারের সদস্য শুক্কুরি বেগম (৪০) জানান, ‘আমাদের কাছ থেইক্কা মানুষ আগে চুরী ফিতা কিনলেও এখন বাড়ির বউ-ঝিরা হাট বাজারে গিয়া কিনে। এ ছাড়া যেহানে সেহানে ডাক্তার থাকায় আমাগো কাছ থেকে সিংগা ও তাবীজ কিনে না।   সিরাজদিখানের মোতালেব মিয়া(৬০) ও বসবাসকারী বেঁদে পরিবারের সদস্যরা জানান, নারীদের আগের মতো গ্রামে গঞ্জে চুড়ি, ফিতা বিক্রি, সিংগা লাগানো, তাবিজ বিক্রি কিংবা সাপ খেলা দেখানো পেশায় আর এখান কোন উপার্জন নেই বললেই চলে। তবে বিভিন্ন গ্রামীন মেলায় ছোট ছোট দোকান বসিয়ে খেলনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাটির তৈরী সামগ্রী,মেলায় চুরী, ফিতা, নেলপালিশ, বিক্রি করে এখোন কিছুটা উপর্জন হয় তাদের। পুরুষরা মাছ ধরে নারীদের পাশাপাশি  কিছুটা উপর্জন করে। এতে অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করছে তারা। কাজেই এবার কোরবানীর ঈদে বেদেদের মাঝে তেমন কোন আনন্দ উপলব্দি হচ্ছে না। তাদের কাছে ঈদ বলতে কোন বিশেষ দিন হিসেবে দেখার সুযোগ নেই এখন। ঈদ তাদের মনে নাড়া দিয়ে যায় না। তাই এবার ঈদ আনন্দ তাদের কাছে অন্য সব দিনের মতোই লাগবে। সিরাজদিখানের বেদে পল্লীর সর্দার বোরহানউদ্দিন(৫৬) জানান, ভোটার হওয়া সত্ত্বেও সকল প্রকার নাগরিক সুবিধা হতে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। তাদের দাবি দেশের সকল নাগরিকদের মতো তাদেরকেও সকল ধরণের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হউক। সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানবীর মোহাম্মদ আজিম জানান, বেদেঁদের ভোটার তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করে তাদের সকল ধরনের নাগরিক সুযোগ সুবিধাদানের চেষ্টা চলছে।সরকারী সকল সুযোগ সুবিধাই তাদের পর্যায়ক্রমে দেয়া হচ্ছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment