নওগাঁয় ভুল চিকিৎসায় গর্ভের সন্তান নষ্ট হওয়ার অভিযোগ

 স্টাফ রিপোর্টার, নওগাঁ ঃ

নওগাঁয় শহরের বেসরকারি হাসপাতাল ‘ইসলামী বাংক কমিউনিটি হাসপাতাল’ এ ভূল চিকিৎসায় খাদিজা বেগমের গর্ভের সন্তান মারা গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সদরের ইসলামী বাংক কমিউনিটি হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনায় রুগীর পরিবারের সদস্যরা হাসপাতাল ঘেরাও করলে চরম উত্তেজনা বিরাজ করে। সংবাদ পেয়ে থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসে। খাদিজা বেগম মহাদেবপুর উপজেলার উত্তরগ্রাম ক্ষুদ্রনারায়নপুর গ্রামের এনামুল হকের স্ত্রী। হাসপাতাল ও রুগীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে খাদিজা বেগমকে ইসলামী বাংক কমিউনিটি হাসপাতালে চেকআপ করানোর জন্য গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা: ফাতেমা কামরুন নাহারের কাছে নিয়ে আসেন। এরপর সেখানে আলট্রাসনোগ্রাম করে ডা: ফাতেমা কামরুন নাহার জানান পেটে বাচ্চা মারা গেছে। এরপর আবারো আলট্রাসনোগ্রাম করে দেখে বাচ্চা জীবিত আছে। এরপর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করে আবার দুই সপ্তাহ পর দেখা করতে বলেন। ঘটনার দিন সোমবার আবারো খাদিজা বেগমের আলট্রাসনোগ্রাম কারনো হয়। সেখানে বাচ্চা মৃত বলে জানান ডা: ফাতেমা কামরুন নাহার। একই মেশিনে দুই রকম রিপোর্ট আসার কারনে রোগীর লোকজন ডা: ফাতেমা কামরুন নাহারের উপর চড়াও হয়। এ সময় ডা: ফাতেমা কামরুন নাহার রুগীর লোকজনের সাথে খারাপ আচরণ করেন ও বিভিন্ন হুমকি প্রদান করে। এ ঘটনায় রুগীর পরিবারের সদস্যরা হাসপাতাল ঘেরাও করলে চরম উত্তেজনা বিরাজ করে। পরে থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসে। এ ঘটনায় আলট্রাসনো মেশিন সহ ডা: ফাতেমা কামরুন নাহারকে হাসপাতাল থেকে দ্রুত অপসারনের দাবী জানিয়েছেন বিক্ষুব্ধ জনতা ও সচেতন মহল। সচেতনদের অভিযোগ সিভিল সার্জন নিয়মিত বেসরকারী ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলো মনিটরিং করেন না। যার কারণে ক্লিনিক ও হাসপাতাল মালিকরা বার বার দূর্ঘটনা ঘটানোর পরও দেদারছে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ভাল চিকিৎসা ও বিভিন্ন ঔষধ দেয়ার নাম করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে সে সাথে প্রতারিত হচ্ছেন রোগী ও তার স্বজনরা। এতে করে হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর দৌরাক্ত দিন দিন বেড়েই চলছে। এদের লাগাম টেনে ধরা দরকার বলে মন্তব্য করেন তারা। খাদিজা বেগমের স্বামী এনামুল হক বলেন, দুই সপ্তাহ আগে ইসলামী বাংক কমিউনিটি হাসপাতালে যখন আমরা চিকিৎসা নিতে আসি তখন রুগীর আলট্রাসনোগ্রাম করে ডা: ফাতেমা কামরুন নাহার জানান বাচ্চা পেটে মারা গেছে। এরপর আমরা অন্য হাসপাতালে আলট্রাসনোগ্রাম করে দেখি বাচ্চা জীবিত আছে। এরপর পুনরায় সেখানে এই রিপোর্ট দেখানো হলে তারা আবারো আলট্রাসনোগ্রাম করে জানান বাচ্চা জীবিত আছে। তখন আমাদের রিপোর্টটা ভুল ছিল বলে দু:খ প্রকাশ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারপর ডা: ফাতেমা কামরুন নাহার ঔষুধ দেন সে ঔষুধ খাওয়ার কারনে আমার সন্তান মারা গেছে। একই মেশিনে দুই রকম রিপোর্ট ও ভুল চিকিৎসার কারনে আমার বাচ্চা মারা গেছে আমি এর সুষ্ট বিচার চাই। ইসলামী বাংক কমিউনিটি হাসপাতালের প্রশাসনিক ইনচার্জ মাইনুর ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আলট্রাসনো মেশিনে দুই রকম রিপোর্ট আসার বিষয়টি জানতে পেরে সনোলজিষ্ট ডা: আনছার আলীকে দিয়ে মেশিন চেক করাই তিনি চেক করে জানিয়েছেন মেশিনে কোন প্রকার ত্রুটি নেই। বাচ্চা কি কারনে মারা গেছে তিনি বলতে পারবেন না বলে জানান। ডা: ফাতেমা কামরুন নাহার সেল ফোন রিসিভ না করায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। নওগাঁ সিভিল সার্জন ডা. মুমিনুল হক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনায় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিষয়টি সামাধান না হওয়া পর্যন্ত ডা: ফাতেমা কামরুন নাহার যেন ওই হাসপাতাল চিকিৎসা সেবা দিতে না পারে সেই জন্যে কর্তৃপক্ষকে নিষেধ করা হয়েছে। ডা: ফাতেমা কামরুন নাহার তার সেল ফোন রিসিভ না করায় ঘটনার বিস্তারিত জানা যায়নি। তিনি আরো বলেন, ইসলামী বাংক কমিউনিটি হাসপাতালে ইতিপূর্বে আরো রোগি মারা যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে তিনি, বেসরকারী ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলো নিয়মিত মনিটরিং না করার অভিযোগ অস্বীকার করেন। নওগাঁ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাই সাংবাদিকদের বলেন, সংবাদ পাওয়ার পর রাতেই পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু রোগীর পরিবার থেকে থানায় কোন অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment