লেলাং গণহত্যা দিবস আজ, ঈদের দিন ২৯ জনকে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী

 মোস্তাফা কামরুল, ফটিকছড়ির (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

১৯৭১ সাল, পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন। ঈদের নামাজ পড়ে সবে ঘরে আসল মাত্র। তখনি হানাদার বাহিনীর হায়নার দল আক্রমণ করল লেলাং ইউনিয়নে। শাহনগর ও গোপালঘাটা গ্রাম থেকে নিরীহ লোকদের ধরে নিয়ে আসে দুই গ্রামের মধ্যবর্তী সীমানা মনাইছড়ি খালের পাড়ে। সেখান থেকে ৩০ জনকে রেখে বাকীদের ছেড়ে দেয়। সেই ৩০ জনের হাত পা বেধে গুলি করে হত্যা করে মাটিচাপা দিয়ে চলে যায় পাক হানাদার বাহিনী।পরে গ্রামবাসী সেখানে গেলে গুলিবিদ্ধ একজনকে জীবিত দেখতে পায়, ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে গেলেও বাকি ২৯ জন শহীদ হন। নৃশংস, ভয়ঙ্কর ও বিভীষিকাময় সেই দিনটি আজ ২১ নভেম্বর। শহীদ কৃষ্ণহরি নাথ ও সুধাংশু বিমল নাথ পরিবার সদস্য অতুল চন্দ্র নাথ বলেন, আমার দাদা ও জেটাকে ঐ দিন হত্যা করা হয়। স্বাধীনতার এত বছর পর ও শহীদ পরিবার হিসাবে আমরা সরকারী ভাবে কোন ভাতা, অনুদান পায় না। এই সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক সুযোগ সুবিধা প্রদান করলেও আমরা তা থেকে বঞ্চিত। এমনকি তাদের স্বরণে কেউ কোন স্বরণসভা। আমি শহীদ পরিবারের সন্তান হিসাবে স্থানীয় চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আকুল আবেদন জানাচ্ছি ঐ দিনের সকল শহীদ পরিবার যেন মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যায় সকল সুযোগ সুবিধা পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। লেলাংয়ের মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াছ (এল,এম,জি) বলেন, এই শহীদ পরিবার গুলাকে ভাতা প্রদানের জন্য আমরা সংশ্লিষ্টদের কাছে বারবার দাবি জানিয়ে আসছি, তারা আশ্বাস দিলে ও পরবর্তীতে তা আর বাস্তবায়ন হয় না। লেলাং ইউপি চেয়ারম্যান সরোয়ার উদ্দীন চৌধুরী শাহীন ও সদস্য সয়োয়ার হোসেন বলেন, লেলাং এর কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে আমরা ঢাকাতে অবস্থান করায় ও আজ পবিত্র মিলাদুন্নবী হওয়ায় বড় কোন স্বরণসভা করা হয়নি, তবে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে পুষ্পমাল্য অর্পন ও মসজিদে খতমে কোরআন ও মিলাদ মাহফিল করা হয়েছে। তারা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয় থেকে কোন বাতা পান না, আমার পরিষদের পক্ষথেকে তাদের বিধবা ও বয়স্ক ভাতা দিয়ে সহযোগিতা করছি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নব নিযুক্ত ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুসফিকুর রহমান এই প্রতিবেদক কে বলেন, লেলাং গণহত্যা দিবস সম্পর্কে আগে কেউ আমাকে অবগত করেনি, এই মাত্র আপনার মাধ্যমে জানলাম। আগে জানলে অবশ্যই একটি স্বরণসভা আয়োজন করতাম। লেলাং মুক্তিযোদ্ধা কমন্ডার আমার সাথে যোগাযোগ করলে আমি শহীদ পরিবার ভাতা পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিব। যারা শহীদ হয়েছেন, মুহাম্মদ জহুরুল ইসলাম মুহাম্মদ ইউনূস, নূর আহমেদ, আফসার আহমদ, নূরুল ইসলাম, মুহাম্মদ এয়াকুব, মুহাম্মদ নূরুল আলম, মুহাম্মদ রুহুল আমিন, মুহাম্মদ তোফাহেল আহমেদ, ফয়েজ আহমদ, জগির আহমেদ, চিকন মিয়া, জনূর আহমেদ, মুহাম্মদ ইদ্রিস, মুহাম্মদ সোলেমান, বজল আহমদ, জমিল উদ্দিন, রফিকুল আলম, রমেশ চন্দ্র নাথ, সুরেশ লাল নাথ, গৌরহরি নাথ, কৃষ্ণহরি নাথ, সুধাংশু বিমল নাথ, হরিপদ নাথ, বিপিন চন্দ্র নাথ, নগরবাসী নাথ, হরিলাল নাথ, হরিধর নাথ, ক্ষেমেশ চন্দ্র ভট্রাচার্য নাথ।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment