সার্বজনীন শিশুদিবস উপলক্ষে রাবিতে নবজাগরণের “একদিন স্বপ্নেরদিন -২০১৮” উদযাপন

সার্বজনীন শিশুদিবস উপলক্ষে রাবিতে নবজাগরণের "একদিন স্বপ্নেরদিন -২০১৮" উদযাপন

সুন্দরভাবে জীবনে বাচঁতে হলে সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন দেখতে হয়। কিন্তু সেই স্বপ্ন যদি পূরণ না হয় তাহলে পরিপূর্ণ জীবন পাওয়া যায় না। তাই সবারই স্বপ্ন দেখার অধিকার আছে। আর এমনই দেশের প্রতি ভালোবাসা, সম্মান আর ভালো কিছু করার দায়িত্ব আমাদের সবারই।সমাজের প্রতিটি শিশুই স্বপ্ন দেখে হাসিখুশি একটা দিন।বড়রাও চায় তাদের সন্তানটি ভালো খাবার, ভাল কাপড় চোপড়, ভাল মানের শিক্ষা গ্রহণ করুক  । কিন্তু দারিদ্র‍্যের তাড়নায় হয়ে উঠে না স্বপ্নগুলি পূরণের।একদিন স্বপ্নের দিন তাদের কাছে   এমন একটা  দিন যেন একটি স্বপ্নের দিনের মতো।

সারাবিশ্বে যুদ্ধ, দারিদ্র‍্য, পুষ্টিহীনতা ও প্রাণঘাতী রোগ শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত করছে। বাংলাদেশের শিশুরাও ভালো অবস্থায় নেই। প্রায় ৫০ লাখ শিশু শ্রমিক রয়েছে বাংলাদেশে যারা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসাসহ সব ধরনের মৌলিক প্রয়োজন থেকে বঞ্চিত। অভাবের তাড়নায় তারা রাস্তায় পাথর ভাঙে, গার্মেন্টেস এ কাজ করে, ঠেলাগাড়ি চালায়, কাগজ কুড়ায়, পার্কে ফুলের মালা বিক্রি করে এমনকি এ বয়সেই চুরি করছে ও পকেট মারার মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এরা কোনো মতে খেয়ে পরে বাঁচতে পারলেই তারা খুশি হয়। এসব শিশু ভালোভাবে বেড়ে ওঠার কোনো স্বপ্ন দেখে না বা দেখতে জানে না।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) নবজাগরণ ফাউন্ডেশন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের
শতাধিক সেচ্ছাসেবীর অংশগ্রহনে ১০ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে সর্বমোট ৩২৭ জন অংশগ্রহনকারীকে নিয়ে  সারাদিনব্যাপী এরকম ই একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে,যেখানে ঘোরাঘুরি,খেলা,মজা আর আনন্দ উদযাপনের মাধ্যমে তাদের সুস্থজীবনধারার প্রতি আগ্রহী করে তোলার ও চেষ্টা করা হয়।দেশের হতে যাওয়া কর্ণধারদের সঙ্গে দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধারদের মেলবন্ধন সৃষ্টিও তাদের একটি উদ্দেশ্য।

জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় নবজাগরণ ফাউন্ডেশন কতৃক শিশু দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ‘একদিন স্বপ্নের দিন’। প্রতি দুইজন স্বেছাসেবক এর দায়িত্বে একজন করে সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে দেওয়া হয় তার দিনটাকে স্বপ্নের মতো করে উপহার দেওয়ার জন্য। এরপর রাবি  ক্যাম্পাসের শেখ রাসেল স্কুল মাঠে   বিভিন্ন মজার মজার খেলার মাধ্যমে তাদেরকে আনন্দ দেওয়া হয়। প্রায় আটটি খেলাধুলার ইভেন্ট এর আয়োজন করা হয় তাদের জন্য এবং দুইটি ইভেন্ট রাখা হয় ভলান্টিয়ারদের জন্য।

অনুষ্ঠানে উদ্ভোধকের  বক্তব্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের  ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. লায়লা আরজুমান বানু বলেন, শিশুদের মৌলিক অধিকার যথাযথ ভাবে পূরণের মাধ্যমেই গড়ে উঠবে সোনার বাংলা। আর তারই অংশ হিসেবে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জীবনমান উন্নত করার লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে নবজাগরণ ফাউন্ডেশন। এছাড়াও সেখানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা ও সমাজকর্ম বিভাগের সাবেক  সভাপতি অধ্যাপক সাদেকুল আরেফিন মাতিন,হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের প্রফেসর  ড.রুকসানা বেগম,  সৈয়দ আমীর আলী হলে প্রাধ্যক্ষ ড.আমিনুল ইসলাম,শহীদ শামসুজ্জোহা হলের প্রাধ্যক্ষ ড.মো জুলকার নায়েদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড.সুলতান মাহমুদ, পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মনিমুল হক,এবং আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাদিকুল ইসলাম প্রমুখ।

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরষ্কার বিতরণ করা এবং নবজাগরণের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল শিক্ষককে সংবর্ধনা দেওয়ার  মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

সংগঠনটির সভাপতি খন্দকার মার্জান আতিক বলেন, “আমাদের দেশের  পিছিয়ে পড়া জনপদগুলোর জন্য কাজ করা সমাজের সচেতন নাগরিকদের দায়িত্ব। আমরা প্রতিবছরের ন্যায় এবারো অন্যান্য আয়োজনের মত একদিন স্বপ্নের দিন উদযাপন করছি।আমরা তাদের জন্য কাজ করতে পেরে আনন্দিত।”

শুভেচ্ছা বক্তব্যে নবজাগরণ ফাউন্ডেশন এর সাধারণ সম্পাদক নাঈম হোসাইন বলেন, “শিশুরাই আগামীর ভবিষ্যৎ। আমাদের সুবিধাবঞ্চিত শিশুরাও সমাজের একটা বিরাট অংশ। তাদের মাঝেও লুকায়িত আছে প্রতিভা।আমরা তাদের সার্বিক বিকাশে পাশে থাকতে চাই এভাবেই।আর একদিন স্বপ্নের দিন তারই একটি অংশ।আগামীর দিনগুলোতেও আমরা যেন এভাবেই চালিয়ে যেতে পারি দোয়া করবেন সবাই।”

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে কিছু স্বপ্নবাজ তরুণের হাত ধরে যাত্রা হয় নবজাগরন ফাউন্ডেশনের। যার সকল সেচ্ছাসেবক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ২০১৪ সালে নবজাগরণ বিদ্যানিকেতন নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। যেখানে পথশিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করা হয়। সেই সঙ্গে শিশুদের পরিবারে গিয়ে তাদের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা হয়।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment