চীনা মিডিয়ায় পাক-কাশ্মীরকে ভারতের ম্যাপে দেখানোয় জল্পনা

চীনা মিডিয়ায় পাক-কাশ্মীরকে ভারতের ম্যাপে দেখানোয় জল্পনা

পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরকে কি ইচ্ছাকৃতভাবেই ভারতের মানচিত্রে ঢুকিয়েছিল চীনের সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক (সিজিটিএন)? তাতে কি বেইজিংয়ের কোনো আপত্তি ছিল না? মানচিত্র নিয়ে বরাবরই খুব খুঁতখুঁতে চীনা প্রশাসন ওই চ্যানেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সেই জল্পনা শুরু হয়েছে।

ভারতীয় কূটনীতিকদের একাংশ মনে করছেন, সাম্প্রতিক সময়ে এটা ভারত-চীন সম্পর্কের একটা সদর্থক দিক।

চীন সরকারের একটি সূত্রের খবর, বন্দুকধারীদের হামলায় করাচির চীনা উপ-দূতাবাসের দুই নিরাপত্তারক্ষীর মৃত্যুর ঘটনায় যথেষ্ট বিব্রত বেইজিং। এর আগেও প্রায় একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে নির্মানাধীন অর্থনৈতিক করিডরে।

ওই করিডর যারা বানাচ্ছে, সেই চীনা শ্রমিকদের ওপর আগেও হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানের জঙ্গিরা। এই সব ঘটনার প্রেক্ষিতেই চীনের ধারণা হয়েছে, পাক ভূখণ্ডে চীনা নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না ইসলামাবাদ। তাই পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে ইচ্ছাকৃতভাবেই ভারতের মানচিত্রে ঢোকানো হয়েছিল চীনের সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচারিত খবরে।

আনন্দবাজারের খবর বলা হয়েছে, গত ২৩ নভেম্বর এই টেলিভিশন চ্যানেলে দেখানো হচ্ছিল, পাকিস্তানের করাচিতে চীনা উপ-দূতাবাসে হামলার ঘটনা। ওই হামলায় চীনা উপ-দূতাবাসের দুই নিরাপত্তারক্ষীর মৃত্যু হয়। সেই খবর সম্প্রচারের সময় ওই অঞ্চলের যে ম্যাপ দেখানো হয়, সেখানেই পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে ভারতের অংশ হিসেবে দেখায় সরকার নিয়ন্ত্রিত এই সংবাদ মাধ্যম। এর আগে পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে কখনও ভারতের মানচিত্রে দেখায়নি কোনো চীনা সংবাদ মাধ্যম।

চীনের সরকারি চ্যানেলে এই ছবি দেখানো যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, ভারতের দীর্ঘ দিনের আপত্তি সত্ত্বেও চীন বরাবর পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অংশ হিসেবেই মনে করে এসেছে। চীনের সরকারি বয়ানেও তার ব্যাতিক্রম ঘটেনি। আর মানচিত্র নিয়ে বেইজিং এতটাই খুঁতখুঁতে যে, স্কুলপাঠ্য বা কোনো ম্যাগাজিনে প্রকাশিত মানচিত্রে কোনো ভুল থাকলে তা সঙ্গে সঙ্গে বাজার থেকে তুলে নেয় বা তাকে ‘ব্লক’ করে দেয় বেইজিং।

পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ওপর দিয়েই যাচ্ছে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের একটি অংশ। ভারতের মত না নিয়ে এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে চীন ও পাকিস্তান রাস্তা এবং রেলপথ বানানোয় দীর্ঘ দিন ধরেই আপত্তি জানাচ্ছে দিল্লি।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর ভারত ও চীনের সামরিক বাহিনীর যৌথ মহড়া হবে। তার আগে একটা সহায়ক পরিস্থিতি তৈরির বার্তা দিতেই ওই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

ভারতীয় কূটনীতিকদের একাংশের ধারণা, পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে ভারতের মানচিত্রে দেখিয়ে দিল্লির দীর্ঘ দিনের দাবিকে মান্যতা দিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের অর্থনৈতিক করিডর গড়ে তোলার কাজে আর কোনও বাধা রাখতে চাইছে না বেইজিং। যাতে, ‘সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না।’

অভ্যন্তরীণ নীতি ঘোষণার আগে বা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেশের অবস্থান বদলের সময় বেইজিং এর আগেও সরকারি নিয়ন্ত্রণে থাকা সংবাদমাধ্যমগুলিকে দিয়ে এইভাবে মানুষের মতামত বুঝে নিতে চেয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু ভেবে নেওয়াটা ঠিক হবে না। কারণ, ভারত ও পাকিস্তান নিয়ে নিজেদের অবস্থানে বদল আনছে চীন, সরকারি ভাষ্যে এখনও পর্যন্ত তার কোনো ইঙ্গিত দেয়নি বেইজিং।

বিশেযজ্ঞদের মতে, তেমন কোনো সম্ভাবনাও নেই। কারণ, পাকিস্তানের সঙ্গে নির্মীয়মাণ অর্থনৈতিক করিডরের জন্য ইতিমধ্যেই বহু খরচ করেছে চীন। ফলে পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে ভারতের মানচিত্রে ঢুকিয়ে বেইজিং সেই অর্থনৈতিক করিডরের ভবিষ্যতকে কখনওই অনিশ্চিত করে তুলতে পারে না।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment