কুড়িগ্রাম চরাঞ্চলবাসীর মাঝে নেই ভোটের আগ্রহ

 কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ

২৮-১২-১৮ ভোট আনন্দ বা উৎসব বলতে সংসদ কিংবা ইউনিয়সহ কোন ভোটের বিষয়ে তেমন আগ্রহ থাকেনা কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলবাসীর মাঝে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অবহেলা, অর্থনৈতিক সংকট আর পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান না থাকাকেই দায়ী করছেন পিছিয়ে পড়া এই জনপদের অবহেলিত মানুষজন। দেশের সর্বশেষ উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম। এই জেলার তিনদিকেই প্রায় ৩কি.মি. ভারতীয় সীমানা কাটার বেস্টিত। এছাড়াও দেমের বৃহত্তম নদ-নদীময় জেলায় ব্রহ্মপুত্র নদ,দুধকমুার,ধরলা,তিস্তা নদীসহ ১৬টি নদ-নদীর ৩১৬কি.মি. দীর্ঘ নদী পথে। এখানে প্রায় সাড়ে চার শতাধিক ছোট-বড় চরাঞ্চল। এরমধ্যে প্রায় আড়াই থেকে ৩শতাধিক চরে মানুষের বসবাস। জেলায় ৯টি উপজেলা, ৭৩টি ইউনিয়ন এবং ৩টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত হয়েছে ৪টি আসন। এখানে প্রায় ৬০/৬৫টি ইউনিয়ন নদীর সাথে সম্পৃক্ত। অনেক ইউনিয়নের এক তৃতীয়াংশ নদী গর্ভে চলে গেছে। জেলার প্রায় ২১লাখ মানুষের মধ্যে ভোটার ১৫লাখ ৪৭হাজার ২জন। এরমধ্যে নারী ৭লাখ ৮৫হাজার ৮৫৭জন এবং পুরুষ ৭লাখ ৬১হাজার ১৪৫জন। প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে বসবাস করছে প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ। অধিকাংশ চরাঞ্চল বাসীকে সারা বছরই নদী ভাঙ্গনের স্বীকার হতে হয়। কৃষি নির্ভর জেলাতে কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান না থাকায় বছরের বেশির ভাগ সময় বেকার থাকতে হয়। মৌসুম ভিত্তিক কাজ থাকলেও বছরের ৫/৬ মাস কাজ থাকে না দারিদ্র পীড়িত এই জনপদের মানুষের হাতে। কাজের দিক দিয়ে বেশি অবহেলিত নারী শ্রমিকরা। অবহেলিত চরাঞ্চলবাসী নিজেদের পরিবারের সদস্যদের পর্যাপ্ত খাবার কিনতে পারে না। ফলে রাজধানী,বগুড়া, চট্রগ্রাম, ফেনি, খুলনা, বরিশাল, সিলেটসহ উন্নত শহর গুলোতে ছুটেন কাজের সন্ধানে। অনেকেই গার্মেন্টস গুলোতে চাকুরি করেন। আবার অনেকেই সরকারি-বেসরকারি চাকুরির সুবাদে থেকে যান কর্ম স্থলে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে মঙ্গা শব্দটি না থাকলেও এখনো এই জনপদে যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মকান্ডে বিনিয়োগ পিছিয়ে জেলাবাসী। তথ্য সূত্রে জানাযায়, ১৯৭৩ সালে কুড়িগ্রাম-১ আসনে ভোটার ছিল ১লাখ ২৫হাজার ১০৪জন। ভোটার উপস্থিতি ৫২.২৬%। ১৯৭৯ সালে ভোটার ১লাখ ৩৬হাজার ৪৫৬জনে ভোটার উপস্থিতি ৪৬.৫৯%। ১৯৯১ সালে ভোটার ছিল ২লাখ ৫৯হাজার ৮০৬জন। ভোটার উপস্থিতি ৪৬.৫১%। ১৯৯৬সালে ভোটার ২লাখ ৫০হাজার ৩জনের মধ্যে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬৭.৬৭%। ২০০১সালে ভোটার ৩লাখ ২২হাজার ৪৪২জন। ভোটার উপস্থিতি থাকেন ৭৯.৪৩%। ২০০৮সালে ৩লাখ ৬৪হাজার ৮৬২জনের মধ্যে উপস্থিতি ৮৯.২৫%। কুড়িগ্রাম-২ আসনে ১৯৭৩ সালে ভোটার ছিল ১লাখ ১৯হাজার ৮১২জন। উপস্থিতি ৪৫.৫০%। ১৯৭৯ সালে ভোটার ১লাখ ৩৯হাজার ৯৫৫জন। উপস্থিতি ৪৫.২৪%। ১৯৯১সালে ২লাখ ৭৬হাজার ৯৭৩জন। উপস্থিতি ৫১.২৩%। ১৯৯৬সালে ভোটার ২লাখ ৬৩হাজার ৪৪৩জনের মধ্যে উপস্থিতি ছিল ৭৩.৬৭%। ২০০১সালে ভোটার ৩লাখ ৪০হাজার ৯৮জন। উপস্থিতি ৭৩.৯৩%। ২০০৮সালে ৩লাখ ৩২হাজার ৩৯২জনের মধ্যে উপস্থিতি ৮৮.০২%। কুড়িগ্রাম-৩ আসনে ১৯৭৩ সালে ভোটার ছিল ১লাখ ২১হাজার ৮৬৫জন। উপস্থিতি ৪৩.৮৯%। ১৯৭৯ সালে ভোটার ১লাখ ৫০হাজার ৫২৮জন। উপস্থিতি ৪৮.৮১%। ১৯৯১সালে ১লাখ ৯৯হাজার ১০৪জন। উপস্থিতি ৪৪.৪১%। ১৯৯৬সালে ভোটার ১লাখ ৮০হাজার ৭৬৬জনের মধ্যে উপস্থিতি ছিল ৬২.৯০%। ২০০১সালে ভোটার ২লাখ ৩৬হাজার ৫০১জন। উপস্থিতি থাকেন ৭১.৯৫%। ২০০৮সালে ২লাখ ৯৮হাজার ৮৬৩জনের মধ্যে উপস্থিতি ৮৩.৯৩%। কুড়িগ্রাম-৪ আসনে ১৯৭৩ সালে ভোটার ছিল ১লাখ ২২হাজার ২৩৯জন। ভোটার উপস্থিতি ৪৪.৮৫%। ১৯৭৯ সালে ভোটার ১লাখ ০৮ হাজার ৪৬০জন। উপস্থিতি ৪৩.৩১%। ১৯৯১সালে ১লাখ ৮৪হাজার ১৭৩জন। ভোটার উপস্থিতি ৪১.৩৯%। ১৯৯৬সালে ভোটার ১লাখ ৬১হাজার ৯৭৬জনের মধ্যে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬৬.১৮%। ২০০১সালে ভোটার ২লাখ ১২হাজার ৫৭৪জন। উপস্থিতি থাকেন ৭৩.৬৮%। ২০০৮সালে ২লাখ ২৮হাজার ৫৪৪জনের মধ্যে উপস্থিতি ৮৯.৪৭%। সদর উপজেলার চর যাত্রাপুরের বাসিন্দা মজিবর (৩৫) আফজাল (২৮), লাইলী বেগম (৪২), রৌমারী উপজেলার ফুলুয়ার চরের বাসিন্দা হাসেম (৬০), গার্মেন্টস কর্মী শিউলি আক্তার (২৫) জানান, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে চরবাসীর তেমন কোন মূল্যায়ন থাকে না। তারা অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও ভোট শেষে আর দেখা মেলে না। তাই কর্মস্থল থেকে টাকা-পয়সা খরচ করে এসে ভোট দেবার ইচ্ছে জাগে না। অপর দিকে ঢাকায় বেসরকারি এক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সহিদুর রহমান (৩৫) বলেন, সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে ছুটি পাওয়া যায়। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোতে এই সুযোগ সুবিধা নেই বলতেই চলে। এক বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা মামুনুর রহমান(৩৬) জানান, কুড়িগ্রামের সাথে বাস কিংবা রেল যোগাযোগ তেমন উন্নত নয়। কুড়িগ্রাম-ঢাকা যাওয়া আসা একদিন চলে যায়। অর্থ খরচটিও বেশি পড়ে। ফলে প্রতিষ্ঠানে ছুটি পেলেও সার্বিক পরিস্থিতির জন্য ভোট দিতে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে আমরা যারা বাইরে কর্ম থাকি। সরকার আমাদের মতো যারা ভোটার বাহিরে থাকি তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করলে আমরাও ভোট প্রদান করে আমাদের মতামত দিতে পারবো। যাত্রাপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম জানান, নদী বেষ্টিত যাত্রাপুর ইউনিয়নে অনেক পরিবারই আছে তাদের কেউ না কেউ জেলার বাইরে গিয়ে কাজে। তারাই অনেকেই ইউনিয়ন বা সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে আসেনা। তাদের কাছে ভোট না সংসার চালানোটাই বড় হয়ে দ্বাঁড়ায়। এতে করে অনেকেই ভোট দেয়া থেকে অনুপস্থিত থাকেন। এই বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম রাকিব জানান, ভোটার অনুপস্থিতিটা বেশি লক্ষ্য করা যায় ইউনিয়ন ভোটে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উৎসব মুখর পরিবেশ থাকায় অনুপস্থিতির প্রভাব তেমনটা পড়ে না। এছাড়াও ভোটারদের কর্মস্থলে অবস্থান করা, অসচেতনতা এবং মৃত ব্যক্তির নাম সময় মতো ভোটার তালিকা থেকে কর্তন না হওয়াকেও ভোটার অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে মনে করেন এই কর্মকর্তা। #

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment