জমজমাট আওয়ামী লীগ অফিস, অন্যদের ফাঁকা

আসন্ন উপজেলা নির্বাচন ঘিরে দুই রকমের চিত্র দেখা যাচ্ছে এখন রাজনৈতিক দলগুলোর অফিসে। একদিকে জমজমাট-মুখর পরিবেশ আর অন্যদিকে নীরব-শূন্যতা। ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে সারাদেশের নেতা-কর্মীদের পদভারে উত্সবের আমেজ বিরাজ করছে। সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি সরগরম দৃশ্যপট। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা আর তাদের সঙ্গে এলাকা থেকে আগত বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীদের ভীড়ে পা ফেলার জায়গা নেই।

এর ঠিক বিপরীত দৃশ্য অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অফিসে। সদ্যসমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিক্ত অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট, ২০ দলীয় জোট, সিপিবি, বাম জোট, ইসলামী আন্দোলনসহ অনেক দল আসন্ন উপজেলা নির্বাচন বয়কটের ঘোষনা দিয়েছে।

এরশাদের জাতীয় পার্টিসহ সরকারের ১৪ দল ও মহাজোট ভুক্ত কয়েকটি দল পৃথকভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও তাদের প্রার্থীদের আগ্রহ কম।

বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বয়কটের পাশাপাশি এই নির্বাচনে যদি তাদের দলের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবেও দাড়ায় তবে তাকে দল থেকৈ বহিস্কার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ফলে দলের যারা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে অংশ নেয়ার জন্য আগ্রহী ছিলেন তারাও চুপ হয়ে গেছেন। বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান অফিস বা নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় অফিসে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। নেতাকর্মীদের কোনও আনাগোনা নেই। রাতে সিনিয়র নেতাদের কেউ কেউ গুলশান অফিসে যান। আর নয়া পল্টন অফিসে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী থাকেন। তবে অফিসটি বেশীরভাগ সময় তালা লাগিয়ে রাখা হয়। গুলশান কার্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মী জয়ন্ত জানান,সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনের সময় অনেক রাত পর্যন্ত নেতারা অফিস ছিল জমজমাট। কিন্তু নির্বাচনের পর শূন্যতা বিরাজ করছে। বর্তমানে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন সিনিয়র নেতারা অফিসে আসেন।

জাতীয়পার্টির (এরশাদ) বনানী অফিসেও খা খা শূন্যতা বিরাজ করছে। তবে কাকরাইল অফিসে রাতে কিছু লোকজনের আনাগোনা দেখা যায়। জাপা বিভিন্ন উপজেলায় মনোনয়ন দিচ্ছে । তবে প্রার্থীদের আগ্রহ কম বলে জানা গেছে।বাম জোট সংসদ নির্বাচনে দেড় শত আসনে প্রার্থী দিয়েছিল আর চরমোনাই পীর সাহেবের ইসলামী আন্দোলন ২৯৯ আসনে প্রার্থী দেয় । উপজেলা নির্বাচন বয়কট করায় তাদের অফিসগুলোতেও শূন্যতা বিরাজ করছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন,কেবল উপজেলা নির্বাচন নয়, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে আর কোনো নির্বাচনেও অংশ নেবে না বিএনপি। তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে শুধুমাত্র সরকার দলীয় নেতাকর্মী ছাড়া আর কারো বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। এমনকি সাধারন ভোটারদের মাঝেও কোন আগ্রহ নেই।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগে উত্সব চলবে সেটাই স্বাভাবিক। এছাড়া অন্যকারো, এমনকি ভোটারদের কোন রকমের আগ্রহ নেই। ভোটররা এখনো ২৯ ডিসেম্বর রাতের,ভোট ডাকাতির ঘটনার পর ধাতস্থ হতে পারছে না।

প্রসঙ্গত যে,পাচ ধাপে হবে উপজেলা নির্বাচন। প্রথম ধাপে ১০ মার্চ ৮৭ উপজেলায় নির্বাচন হবে। প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ১১ ফেব্রুয়ারি।

আওয়ামী লীগ অফিস জমজমাট

শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল পরিবেশের মধ্য দিয়ে গতকাল শুক্রবার শেষ হলো আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও জমাদান কার্যক্রম। শেষ দিনও দলীয় সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় ছিল নেতা-কর্মীদের পদচারণে মুখর। গত সোম থেকে বৃহস্পতিবার এই চার দিনে চেয়ারম্যান পদে ২ হাজার ৭৬টি এবং ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ হাজার ৪৮৫টি মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র বিক্রি করা হয়েছে। চেয়ারম্যান পদে প্রতিটি মনোনয়নের আবেদনপত্রের জন্য ২০ হাজার টাকা, ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের জন্য ৫ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। এই হিসেবে আওয়ামী লীগের পাঁচ কোটি ৮৯ লাখ পাঁচ হাজার টাকা আয় হয়েছে। গতকাল আবেদনপত্র উত্তোলন ও জমাদানের শেষ সময় ছিল দুপুর ১২টা। বিকাল সাড়ে ৪টায় গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড এবং স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কী হয়, কার ভাগ্য খুলছে-এমন খবরের অপেক্ষায় গতকাল রাত ১টা পর্যন্ত ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয় অসংখ্য নেতাকর্মীদের ভীড় লক্ষ করা গেছে।

ইতিমধ্যে সংরক্ষিত মহিলা আসনের ৪৩টিতে প্রার্থী মনোনয়নের খসড়া তালিকা করেছে আওয়ামী লীগ। এই পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ১৫১০ জন। গত ১৫ থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত এই ফরম বিক্রি করে দলটি। কিন্তু এখনো প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হয়নি, তাই সবাই এখন দলীয় কার্যালয়ে ভিড় করছেন। আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী, অভিনেত্রী, হিজড়া, বিভিন্ন পেশাজীবী নারীরা পার্টি অফিসে আসেন। এছাড়া সমাজে বিশেষ অবদান রাখা নারীনেত্রী এবং প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতাদের সহধর্মিণী ও সন্তানরা সংরক্ষিত আসনে দলীয় মনোনয়নের পাওয়ার বিষয়ে খোঁজ নিতে ভিড় করেন পার্টি অফিসে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নতুন ৩৬টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী ৮ শতাধিক নেতা। গত ২৮ জানুয়ারি মনোনয়ন প্রত্যাশী ৮ শতাধিক নেতার সাক্ষাত্ নিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। এসব মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও সুখবরের আশায় পার্টি অফিসে আসছেন নিয়মিত। তবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে মনোনয়ন প্রত্যশীদের ভিড় বেশি। সারাদেশ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। এ কারণে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় ও এর বাইরে মানুষের ভিড়।

অপরদিকে উপজেলা নির্বাচন ঘিরে অভিযোগ জমা দিতেও গতকাল পার্টি অফিসে নেতাকর্মীদের ভিড় ছিল লক্ষ্যনীয়। তৃণমূলের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, বিএনপি-জামায়াতের অনুপ্রবেশকারীদের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে তাদের নামের তালিকা কেন্দ্র পাঠানো হয়েছে। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাইয়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন দলটির নেতা নূরউদ্দীন আল মাসুদ নেতা। তিনি ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এ বিষয়ে মাসুদ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে লিখিত অভিযোগও জমা দিয়েছেন। লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, আসন্ন উপজেলা নির্বাচন উপলক্ষে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশ অমান্য ও গঠনতন্ত্রের সুনির্দিষ্ট ধারা লঙ্ঘন করে অনৈতিক উপায়ে প্রার্থী তালিকা করা হয়েছে। এছাড়া তালিকা করতে গিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো বর্ধিত সভা পর্যন্ত ডাকা হয়নি। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কোনো রকমের পরামর্শও করা হয়নি। এমনকি আমার অজান্তেই তালিকাটি করা হয়েছে। তালিকায় আওয়ামী লীগের সদস্য নয় এমন লোককেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর এই তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হয়। অভিযোগ জমা দেওয়ার পর বগুড়ার কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মোশফিকুর রহমান কাজল সাংবাদিকদের বলেন, ‘তৃণমূল থেকে আমার নাম জেলাতে পাঠানোর পরে কেন্দ্রে এসে দেখি নাম নেই। পরে খবর নিয়ে জানলাম, জেলা আওয়ামী লীগ একজনের নাম পাঠিয়েছে। এখানে স্বজনপ্রীতি হয়েছে। দলের ত্যাগী নেতা হিসেবে আমি মনোনয়নের দাবিদার। মনোনয়ন পাই বা না পাই, কেন্দ্র পর্যন্ত নাম আসবে না কেন?’ দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় বিএনপির সাবেক এক নেতার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে বলে গতকাল অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment