এল ক্লাসিকোতে মেসি-রামোস যুদ্ধ!

এল ক্লাসিকোতে মেসি-রামোস যুদ্ধ!

দুই দলের খেলোয়াড়দের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়, ধাক্কাধাক্কি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, মারামারিতে জড়িয়ে পড়া। এল ক্লাসিকোতে এসব নতুন কোনো বিষয় নয়। শুধু খেলোয়াড়রা নন, এল ক্লাসিকোর আগুনে উত্তেজনায় দুই দলের কোচিং স্টাফের সদস্যরাও মারামারি, ধাক্কা-ধাক্কিতে জড়িয়েছেন, এমন ঘটনাও ভুরিভুরি। সে তুলনায় গতকাল রাতের এল ক্লাসিকোর ঘটনাটা মামুলিই। তবে সেই সাধারণ ঘটনার মধ্যেও একটা বিশেষ চমৎকারিত্ব লুকিয়ে আছে। কাল যে শারীরিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন দুই দলের দুই অধিনায়ক সার্জিও রামোস ও লিওনেল মেসি।

সাম্প্রতিক কালের প্রতিটা এল ক্লাসিকোতেই রিয়াল মাদ্রিদের অধিনায়ক রামোসের সঙ্গে বার্সেলোনার অধিনায়ক মেসির বাগবিতণ্ডা হয়েছে। সেটি স্বাভাবিকও। মেসি ফরোয়ার্ড, রামোস ডিফেন্ডার। মেসির সঙ্গে রামোসের দ্বৈরথটা তাই অনিবার্য। তবে কাল একটু বেশিই উত্তেজনা দেখিয়েছেন দুজনে।

না, রাগের বশে কেউ কারো গায়ে হাত তুলেননি। তবে চরম উত্তেজনা-ক্ষোভে ক্রুদ্ধ হয়ে মাথায় মাথায় ঠোকাঠুকি করেছেন! দুজনের শারীরিক ভাষাতেই ছিল যুদ্ধাংসি মনোভাব। যেন পারলে একে অন্যকে আস্ত গিলে খাবেন। ঠাণ্ডা মাথার মেসির সঙ্গে উগ্র মেজাজী রামোসের এই শারীরিক সংঘর্ষের দায়টা আসলে রামোসেরই। বল দখলের লড়াইয়ে তিনিই সুকৌশেলে ‘হাত’ মেরে বসেন মেসির মুখে!

ঘটনাটা প্রথমার্ধের একেবারে অন্তিম মুহূর্তের। বল দখলে লড়াইয়ে রামোস তার অভ্যাস মতো বাম-হাতের ব্যবহারে মেসির মুখে ধাক্কা মারেন। ধাক্কায় এতোটাই জোর ছিল যে, মেসির পক্ষে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হয়নি। ধাক্কা খেয়ে লুটিয়ে পড়েন মাটিতে।

তিনি মাটিতে পড়ে থাকা অবস্থাতেই রেফারির বিরতির বাঁশি। সঙ্গে সঙ্গেই দুই দলের খেলোয়াড়েরা হাঁটা শুরু করেন ড্রেসিং রুমের পথে। মেসি তখনো মাটিতে পড়ে আছেন। পাশেই দাঁড়িয়ে রাগে গজগজ করছিলেন রামোস। মাটি থেকে উঠে মেসিও হিংস্র বাঘের মতো এগিয়ে আসেন রামোসের দিকে। মুখোমুখি অবস্থানে এসে একে অন্যের মাথায় মাথা ঠেকিয়ে শক্তি প্রদর্শনীতে মেতে উঠেন।

পুরো ঘটনাটিই ঘটে রেফারি হোসে আলেজান্দ্রো হার্নান্দেজ হার্নান্দেজের চোখের সামনে (তার নামই হার্নান্দেজ হার্নান্দেজ)। তিনিই এগিয়ে এসে দুজনকে আলাদা করেন। পরে মেসি ক্ষোভ ঝাড়েন রেফারির ওপরও। কারণ, মুখে হাত দিয়ে ধাক্কা মারার জন্য রামোমের বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশনই নেননি রেফারি। কিন্তু স্পেনের সাবেক রেফারিদের মতে, এই ঘটনার জন্য রামোসের লালকার্ড প্রাপ্য ছিল!

পরে মেসি সহকারী রেফারি আলবার্তো উন্ডিয়ানো মায়েঙ্কোর কাছে অভিযোগ করেন রেফারি হার্নান্দেজ হার্নান্দেজের বিরুদ্ধে। ঘটনার সবিস্তার বয়ান করেন। কিন্তু মূল রেফারি যেখানে কান পাতেননি, সেখানে সহকারীর কাছে কী বিচার পাবেন!

গত বছরও এল ক্লাসিকোতে একাধিক বিতর্কিত সিদ্ধা্ন্ত দিয়ে চরম বিতর্কিত হয়েছিলেন রেফারি হার্নান্দেজ হার্নান্দেজ। তবে গত বছর তার বিরুদ্ধে ক্ষোভটা ছিল রিয়ালের। তাদের অভিযোগ ছিল, রেফারি হার্নান্দেজ হার্নান্দেজ পক্ষপাত দুষ্টু হয়ে বার্সেলোনার পক্ষে বাঁশি বাজিয়েছেন।

রামোসকে কার্ড না দিয়ে এবার কি সেই পাপ মোচন করলেন রেফারি হার্নান্দেজ হার্নান্দেজ? এই অভিযোগ অবশ্য বার্সা করতে পারছে না। কারণ, ওই একটি ছাড়া কাল আর কোনো বড় বিতর্কিত সিদ্ধান্ত তিনি দেননি। আর ম্যাচটাও রামোসের রিয়াল নয়, জিতেছে মেসির বার্সেলোনাই।

ক্রোয়েশিয়ান মিড ফিল্ডার ইভান রাকিতিচের একমাত্র গোল জয় পেয়েছে বার্সা। নিজেদের ঘরের মাঠের এই হারে মূলত শেষ হয়ে গেছে রিয়াল মাদ্রিদের শিরোপা স্বপ্ন। কারণ, এই জয়ে রিয়ালের চেয়ে ১২ পয়েন্টে এগিয়ে গেল বার্সেলোনা। স্প্যানিশ ফুটবলবোদ্ধারা তো সরাসরিই বলে দিয়েছেন, এই জয়ের মধ্যদিয়ে লিগ শিরোপা নিশ্চিত করে ফেলল বার্সেলোনা! এখন নাকি বাকি শুধু আনুষ্ঠানিকতা!

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment