ঢাকা ও নেত্রকোনায় নিহত ৭

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে গতকাল রবিবার কালবৈশাখীর কোনো সতর্কবার্তা ছিল না। তারপরও প্রকৃতি তার খেয়ালি স্বভাবের জানান দিল। রাজধানী ঢাকাসহ এদিন অনেক অঞ্চলে হঠাৎ আঘাত হানে মৌসুমের প্রথম কালবৈশাখী, যার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৭৪ কিলোমিটার। ঝড়ের পাশাপাশি কোথাও কোথাও শিলাসহ মুষলধারে বৃষ্টিপাতও হয়েছে।

ঝড়ের সময় বজ্রাঘাত, ইটের আঘাতে, গাছচাপা এবং নৌকাডুবে ঢাকায় ৬ এবং নেত্রকোনায় একজন নিহত হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের তিন শিক্ষার্থীসহ আহত হয়েছেন আরও অর্ধশতাধিক।

আকস্মিক এ ঝড়কে কালবৈশাখী নিশ্চিত করে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, আগামী ২-৩ দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করতে পারে। তবে রবিবার দুপুর ৩টা থেকে পরবর্তী ১২ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়া ও শিলাসহ বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টির প্রকোপ বেশি থাকতে পারে।’

আবহাওয়াবিদরা জানান, পশ্চিমা লঘুচাপের সঙ্গে মৌসুমি লঘুচাপের প্রভাবে এই ঝড় হচ্ছে। এ মৌসুমে ঝড়বৃষ্টি হওয়াটা স্বাভাবিক। বর্তমানে পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও এর আশপাশের এলাকায় বাংলাদেশের পশ্চিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। আর মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ অবস্থান করছে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে।

ঝড়ের কবলে পড়ে গতকাল সন্ধ্যায় সংসদ ভবন এলাকায় গাছচাপায় নিহত হন মিলি ডি কস্তা (৬০) নামে এক নারী। একই সময় পুরানা পল্টন মোড় এবং পশ্চিম শেওড়াপাড়ায় বহুতল ভবন থেকে ইট পড়ে মারা যান মো. হানিফ (৪৫) নামে এক চা দোকানি ও দুলাল মিয়া (৪০) নামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক গাড়িচালক। কদমতলী থানা এলাকার পলাশপুরে দেয়ালচাপা পড়ে নিহত হন মো. হাসান (৪০) নামে এক রিকশাচালক।

শেরেবাংলানগর থানার ওসি জানে আলম বলেন, মিলি ডি কস্তা মণিপুরি পাড়ায় বসবাস করতেন। তার মরদেহ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। পল্টন থানার ওসি মাহমুদুল হক বলেন, ইটের আঘাতে গুরুতর অবস্থায় হানিফকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আশপাশে অনেক বহুতল ভবন রয়েছে। তবে কোন ভবন থেকে ইট পড়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

মিরপুর থানার ওসি দাদন ফকির জানান, পশ্চিম শেওড়াপাড়ায় একটি টিনশেড ঘরে থাকতেন দুলাল। সেখানে নির্মাণাধীন বাড়ির দেয়াল থেকে ইট পড়ে তিনি আহত হন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান। এ ছাড়া কদমতলী থানার ওসি জামালউদ্দীন মীর জানান, পলাশপুর ৫ নম্বর সড়কে একটি বাড়ির সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দেয়াল ধসে মারা যান হাসান।

ফায়ার সার্ভিস কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ বলছে, গতকালের ঝড়ে রাজধানীতে অন্তত ২৫টি স্থানে গাছ পড়ার ঘটনা ঘটে। শাহবাগ থানার সাইনবোর্ড উড়ে গেছে। মিন্টো রোডে পুলিশ ভবনের সামনে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে পড়ে। ধানমন্ডি তিন নম্বর সড়কেও গাছের ডাল ভেঙে পড়ে সড়কে। কাকরাইলের মিন্টো রোডে রাস্তার পাশে থাকা একটি গাছের ডাল অটোরিকশা ও প্রাইভেটকারের ওপর ভেঙে পড়ে। এতে অটোরিকশাচালক সামান্য আহত হন। ঝড়ের সময় মগবাজারের আদ-দ্বীন হাসপাতালের একটি দেয়ালও ধসে পড়ে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। রাস্তায় গাছ পড়ার কারণে মিন্টো রোড, হেয়ার রোড, মগবাজার, কাকরাইল, ধানমন্ডি, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘক্ষণ যানবাহন আটকে থাকে। এতে ওইসব এলাকার সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। পরে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা এসে গাছ কেটে সরিয়ে নিলে রাত ১০টার দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এদিকে ঝড়ের মধ্যে বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌকা ডুবে এক নারী ও তার ছেলের মৃত্যু হয়েছে। নিহত মা ও পাঁচ বছর বয়সী ছেলের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেনি পুলিশ। কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি শাকের মোহাম্মদ জুবায়ের জানান, কেরানীগঞ্জের মাদারীপুর ঘাট দিয়ে কামরাঙ্গীরচরে যাওয়ার সময় ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকাটি।

কালবৈশাখী তাণ্ডব চালিয়েছে নেত্রকোনায়ও। পাশাপাশি সেখানে ব্যাপক শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাত হয়েছে। ঝড়ের সময় বজ্রাঘাতে প্রাণ হারান সদর উপজেলার রৌহা ইউনিয়নে বাহাদুরপুর গ্রামের আছর উদ্দিন (৬৫)। বিকালে মগড়া নদীর পাড়ে কৃষি জমিতে কাজ করার সময় তিনি বজ্রাহত হন।

এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও সিরাজদিখান উপজেলায় কালবৈশাখীতে ২৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন জায়গায় ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ থেকে পদ্মা নদীতে ঘুরতে আসা একটি ট্রলার ঝড়ের কবলে পড়ে গুরুতর আহত হন ২৩ জন। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বৈরী আবহাওয়ার কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল সাময়িক বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ।

গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়-রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০-৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রঝড়সহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

এ ছাড়া দেশের অন্যত্র পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা-ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা ও চট্টগ্রামের কিছু স্থানে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কুমারখালীতে দেশের সর্বোচ্চ ১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment