পদ্মা সেতুতে বসছে দশম স্প্যান

জাজিরার পর এবার মাওয়া প্রান্তে বসছে পদ্মা সেতুর স্প্যান। আজ বুধবার মাঝনদীতে ১৩ ও ১৪ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হবে এ স্প্যানটি। দুই প্রান্ত মিলিয়ে দশম এ স্প্যানটি বসলে দৃশ্যমান হবে পদ্মা সেতুর পুরো দেড় কিলোমিটার।

এদিকে চলতি মাসে আরও একটি স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। তিনি বলেছেন, এখন থেকে প্রতি মাসে একাধিক স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন তারা।

পদ্মা সেতুতে এখন পর্যন্ত নদীতে স্প্যান বসেছে ৯টি। এর মধ্যে ৮টি স্প্যানই জাজিরা প্রান্তে। এ প্রান্তেই তাই কার্যত দৃশ্যমান সেতুর কর্মযজ্ঞের বড় অংশ। বাকি যে একটি স্প্যান মাওয়ার ৩ ও ৪ নম্বর পিলারে বসানো আছে, এটি মূলত সাময়িকভাবে রাখা এখানে। ৫ ও ৬ নম্বর পিলারের কাজ পুরো শেষ হলে এ স্প্যানটি সেখানে সরিয়ে নেওয়া হবে।

এবার মাওয়া প্রান্তে প্রথমবারের মতো নির্ধারিত পিলারে বসতে যাচ্ছে স্প্যান। নদীর ৩ নম্বর মডিউলের ১৩ ও ১৪ নম্বর পিলার দিয়ে এখানে শুরু হবে স্প্যান বসানোর কাজ। যা ধীরে ধীরে এগিয়ে নেওয়া হবে জাজিরার দিকে।

মাওয়া প্রান্তে আরও বেশ কটি পিলার পুরো প্রস্তুত বলে চলতি মাসেই দুটি স্প্যান তোলার পরিকল্পনা সেতু কর্তৃপক্ষের। প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এপ্রিলে অন্তত দুটি হওয়া উচিত। আরও বেশি হতে পারে।’

এ লক্ষ্যে যে স্প্যানটি বসানো হবে, সেটি তুলে দেওয়া হয়েছে ৩৬শ’ মেট্রিক টন ওজন বহনে সক্ষম বিশ্বের সর্বাধুনিক ক্রেনে। অন্য সময় মাওয়ার ইয়ার্ড থেকে জাজিরায় স্প্যান বয়ে নিতে পাড়ি দিতে হতো প্রায় ৬ কিলোমিটার পথ, তাই আগের দিন রওয়ানা দিতো ক্রেন। এবার নদীর পাড় থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে মাওয়া প্রান্তে স্প্যান বসানো হবে বলে যে দিন তোলা হবে, সেদিন সকালেই এটি নিয়ে রওয়ানা হবে ক্রেনটি।

এই দশম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে নদীতে দৃশ্যমান হবে পুরো দেড় কিলোমিটারের সেতু। অর্থাৎ ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে দৃশ্যমান হবে চার ভাগের এক ভাগ। তবে নদীতে এখনো ১০টি পিলার দৃশ্যমান থাকায় বাকি তিন ভাগ কাজ দ্রুততম সময়ে শেষ করার আশাবাদী প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

সেতুর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে বাংলাদেশে পৌঁছেছে ২১টি। এর মধ্যে ৯টি সেতুর খুঁটিতে বসানো হয়েছে। দুটি পুরোপুরি প্রস্তুত। কুমারভোগের বিশেষায়িত ওয়ার্কশপে তিনটিতে রঙের ও চারটির ওয়েলডিংয়ের কাজ চলছে। আরও তিনটি রয়েছে ওয়েল্ডিংয়ের অপেক্ষায়। বাকি ২০টি স্প্যানের মধ্যে ১৬টিই চীনে তৈরি হয়ে আছে। এগুলো দেশে আসার জন্য পথে বা অপেক্ষায় আছে।

কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে স্থান সংকুলান না হওয়ায় চীন থেকে ধীরে ধীরে স্প্যান আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলীরা।

পদ্মা নদীর বুকে এ পর্যন্ত সেতুর ২১৫টি পাইল স্থাপিত হয়েছে। আলোচিত ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটিতে সাড়ে ছয়টি করে পাইল বসে গেছে। দুই-তিন দিনের মধ্যে এ দুটি খুঁটিতে সাতটি করে পাইল বসানো শেষ হবে।

এ ছাড়া ২৯, ৮, ১০ ও ১১ নম্বর খুঁটিতে বাকি পাইল বসানোর কাজ চলছে। ২৪০০ ও ৩৫০০ কিলোজুল ক্ষমতাসম্পন্ন হ্যামার দুটি পাইল বসাচ্ছে। এখনো ১৯০০ কিলোজুল ক্ষমতার হ্যামারটি সচল করা যায়নি। ভায়াডাক্টের কাজও দ্রুত এগিয়ে চলেছে। সব পাইলে ক্যাপ বসানো শেষ প্রায়। চলছে নদীশাসনের কাজও। ব্লক, বালুর বস্তা ফেলা, ড্রেজিংসহ সব কাজই চলছে দ্রুতগতিতে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment