এবারের বৈশাখে বর্ণিল সাজে সাজবে তিতুমীরের ক্যাম্পাস, চলছে প্রস্তুতি

বাঙালি ঐহিত্যের চিরন্তন সাংস্কৃতিকে ধারণ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ’ গানের সুরে বৈশাখী ভোরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে নতুন বছরকে আগমনে স্বাগত জানানোর

গ্রীষ্মের খরতাপ উপেক্ষা করে বাঙালী মিলিত হবে তার সর্বজনীন এই অসাম্প্রদায়িক উৎসবে। দেশব্যাপী থাকবে নানা আয়োজন। পথে- ঘাটে ,মাঠে-মেলায়, অনুষ্ঠানে থাকবে কোটি মানুষের প্রানের চাঞ্চল্য, আর উৎসব মুখরতার বিহবলতা। রাজধানীর রমনা বটমূল থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাম্য মেলায় প্রাণের উৎসবে । তারই ধারাবাহিকতায় বর্ণিল সাজে সাজবে রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের ক্যাম্পাস।

প্রতি বছরের মতো এবারও সরকারি তিতুমীর কলেজে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের আয়োজনটিকে বর্ণিল করে তুলতে ব্যস্ত বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। আয়োজক কমিটিরও যেন দম ফেলার ফুরসতও নেই।

পহেলা বৈশাখের মূল আর্কষন হিসেবে থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বৈশাখী রঙ্গে রাঙিয়ে তুলতে মূল ফটক থেকে শুরু করে বিজ্ঞান ভবনের আঙিনা পর্যন্ত রাঙানো হবে আলপনায়। থাকবে বাঙালীর ঐতিহ্যের দেশীয় সংস্কৃতি। বিজ্ঞান ভবনের সামনে আলোকিত হবে বৈশাখী মঞ্চ। এমনটাই জানিয়েছে আয়োজক কমিটির প্রধান ও সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তালাত সুলতানা।

আয়োজক কমিটির অন্যতম সদস্য ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রিতা খন্দকার জানান, পহেলা বৈশাখকে স্বাগত জানানো প্রায় ৯০%কাজ শেষ। এখন চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। রঙিন দাওয়াতি চিঠি গুলো দিয়ে দাওয়াতের কাজ ইতমধ্যে প্রায় শেষ। ১৪ই এপ্রিল সকাল ৮.৩০ মিনিটে বিজ্ঞান ভবনের আঙিনায় আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে শুরু হবে অনুষ্ঠান । এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আশরাফ হোসেন। আয়োজনে থাকছে ছাত্রছাত্রীদের অংশ গ্রহনে গান,কবিতা আর বিএনসিসি সদস্যদের পরিবেশনায় নৃত্য । দিনব্যাপী নানা আয়োজনে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া হবে।

সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে সরকারি তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আশরাফ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ আমাদের অস্তিতকে নতুনরুপে আবিষ্কার করে। বাংলার প্রতিটি সংস্কৃতিমনা মানুষের কাছে পহেলা বৈশাখ তথা বাংলা নববর্ষ একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ হয়ে ধরা দেয়। তাই আমরা নতুন বছরকে সাদরে বরণ করে নিতে নানা উৎসব ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করি।

এ সময় প্রকৃতির বুকেও এক চিরচিরায়িত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যেমনটি মানব হৃদয়ে বৈশাখের উচ্ছল অভিব্যক্তি ঘটে। বর্ষবরণের আয়োজনে বাঙালির সংস্কৃতিকে শতভাগ ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা থাকে আমাদের। ইতমধ্যে আয়োজনকে সাফল্য মন্ডিত করার লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে আয়োজক কমিটি। প্রতিবছর শোভাযাত্রার জন্য রঙ-বেরঙের মুখোশ তৈরি করা হলেও এবার রাষ্ট্রীয় নির্দেশনার কথা মাথায় রেখে মুখোশ তৈরি করা হচ্ছে না। এছাড়াও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রস্তুতি শেষ করার জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করছে আমাদের শিক্ষার্থীরা।

ব্যস্ত থাকা শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায় পহেলা বৈশাখকে বরণ করার জন্য রাতদিন কাজ করলেও কোন ক্লান্তি স্পর্শ করতে পারেনি তাদের । লোকগান, বাউল গান, আবৃত্তির পাশাপাশি থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও বিশেষ আয়োজন। বিএসিসির এক সদস্য বলেন,সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে আমরা গ্রাম বাংলার সংস্কৃতিকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করবো। সকাল থেকে রিয়াক্সেল করে শরিরের উপর ধকল গেলে তবুও প্রানে যে বাঁজে কখন আসবে বৈশাখ।

প্রতিটি বাঙালীর বছরের নতুন জীবন। এ দিনে আমরা নতুন চেতনায় উদ্দীপিত হই যেন এমনটাই প্রত্যাশা। এ চেতনা যেন নিছক একটি দিনের আনুষ্ঠানিকতায় হারিয়ে না যায়। সবার জীবনে সাফল্য ও আনন্দ বয়ে আসুক। বিদূরিত হোক সব ধরনের অশুভ শক্তির অপচ্ছায়া। পুরানো বছর প্রেরণা যোগাক নতুন বছরে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে যেতে। প্রতিটি বৈশাখের আমেজ যেন আমাদের জাতীয় ঐক্যের সন্ধান দেয় ও দেশপ্রেমী হতে অনপ্রেরণা যোগায়।

একটি বছরের নিরাশা আর বেদনাকে ধুলোর সঙ্গে মিশিয়ে আকাশের দিকে ছুড়ে দিতে চায় বৈশাখের ঝড়ে দূরে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশায়। নববর্ষ মানুষকে দেয় আশা আর পরিতৃপ্তির কামনা, মন বারবার বলে ওঠে‘ছাড়ো ডাক, হে রুদ্র বৈশাখ ভাঙিয়া মধ্যাহ্ন তন্দ্রা জাগি উঠে বাহির ধারে’।

 

 

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment