জাতীয় নির্বাচনের পর পরই গুঞ্জন উঠেছিল মার্চে হচ্ছে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। এরই প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় সভাপতির ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২১তম জাতীয় সম্মেলনের সময়সীমা জানান, চলতি বছরের আগস্ট অথবা অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সম্মেলন।
তবে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতা ইতোমধ্যে কার্যনির্বাহীর এক সভায় মত দিয়েছেন অক্টোবরেই হচ্ছে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য প্রতিবেদকের কাছে নিশ্চিত করেছেন, চলতি বছরের অক্টোবর মাসেই আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
দলীয় সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে, দলেও নতুন মন্ত্রিপরিষদের ন্যায় চমক আসতে যাচ্ছে। বিশেষ করে যারা মনোনয়ন ও সরকারে নেই তারাই দলটির কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসবে বলে শীর্ষ নেতৃত্বের ইচ্ছা বলে জানা যায়।
সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অক্টোবরই হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের সম্মেলন এমন ইঙ্গিত প্রতিবেদকের কাছে দেন দলেটির কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। তবে সম্ভাব্য তারিখ বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন প্রতিবেদকের কাছে।
এদিকে, অতি সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী গণভবনে দলের স্থানীয় সরকারের জন্য মনোনিত বোর্ডের এক সভায়, আসন্ন ২১তম জাতীয় সম্মেলনে দলের নতুন নেতৃত্বের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, সরকার থাকলে দলের পদে
থাকা যাবে না। অর্থাৎ একথায় স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, দলের নেতৃত্বে আমুল পরিবর্তন আসছে, বিশেষ করে সকলকে সরকারে যেমন রাখা সম্ভব হয়নি, তেমন দলেও সরকারে প্রতিনিধিত্বকারীর সংখ্যা বাড়ছে না, তা সুস্পষ্ট।
তবে সকলকে দায়িত্ব যেমন দেয়া সম্ভব না তেমনি ভাল নেতৃত্ব ছাড়া দলও চলবে না বলেও জানান আওয়ামী লীগের শুভাকাঙ্খিরা। এক্ষেত্রে তাদের আকাঙ্খা, তরুণ নেতৃত্বের মাঝে যারা অধিকতর জনপ্রিয় তাদের কাছেই দলের দায়িত্ব দিবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা নতুন নেতৃত্বের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। বিশেষ করে আসন্ন সম্মেলনকে সামনে রেখে দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা তোড়জোড় শুরু করেছেন।
এসব প্রার্থীরা ইতোমধ্যে তৃণমূলের নেতাদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন বলে শুনতে পাওয়া যাচ্ছে এবং নিজের প্রার্থীতার কথা বেশ জোরালো ভাবেই উপস্থাপন করছেন তৃণমূলের নেতাদের কাছে।
এ বিষয়ে ময়মননিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, আমি জানি না কে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী। আমি আমার কথা বলতে পারি, আমার সাথে কেউ কোন কথা বলেনি।
আমরা নেত্রীর দিকে তাকিয়ে আছি। নেত্রী যা চান, তাই আমাদের চাওয়া। তবে নতুন নেতৃত্ব দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এমন আশাবাদের কথাই জনান তিনি।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ায় সাধারণ সম্পাদক পদটির জন্য অন্য নেতাদের জন্য বড় সুযোগ হয়ে এসেছে। তবে তিনি সুস্থ থাকলেও তার বদল হওয়ার গুঞ্জন বেশ জোরালোই ছিল, ওবায়দুল কাদেরের সেরে উঠতেই দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন, অতএব মন্ত্রণালয় ধরে রাখাই তার পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, কাদের ভাইয়ের উচিত এখন কিছু সময়ের জন্য দলের দায়িত্বের বাইরে থাকা। তিনি দলকে অনেক দিয়েছেন। এখন কিছু দিন বিশ্রামে থাকাই ভালো হবে কাদের ভাইয়ের জন্য।
সাধারণ সম্পাদক পেতে যে কয়েক জনের নাম জোরালো ভাবে শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আব্দুর রহমান ও জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক এএফএম বাহাউদ্দিন নাসিম ও বিএম মোজাম্মেল হক।
বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী দল। এই দলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীর সম্ভাব্য বলতে কিছু নেই। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের দলের প্রধান এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী।
বিগত সময়গুলোতে তৃণমূলের কাউন্সিলররা জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে তাদের দায়িত্ব ভার দিয়েছেন। নেত্রী যাকে যোগ্য মনে করবেন এবং দলের জন্য নিরলস কাজ করতে পারবেন, তিনিই সাধারণ সম্পাদক হবেন।
এখানে আমার বা অন্য কারও প্রার্থীতা মূখ্য বিষয় নয়, এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতার কিছু নেই। সম্মেলনের মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীরা নতুন করে চাঙ্গা হয়ে উঠেন এবং দলের মাঝে কর্মচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।