কৃষকের মাথায় হাত

ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে পাকা ও আধাপাকা ধান তলিয়ে যাওয়ায় সেগুলো দ্রুত কেটে ঘরে তুলতে না পারলে ফলনে ব্যাপক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেক এলাকায় ক্ষেতের ধান হেলে মাটির সঙ্গে বিছিয়ে পড়েছে। সাতক্ষীরায় প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমির ধান ও ৪১০ হেক্টর জমির আমের ক্ষতি হয়েছে।

মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মার তীরবর্তী চারটি ইউনিয়নের প্রায় ১২০০ হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। পিরোজপুরে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছে। ফণীর প্রভাবে ফেনীতেও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া বাগেরহাটে ৯০৩ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরÑ
সাতক্ষীরা : জেলার বিভিন্ন স্থানে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। জমির ধান হেলে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এ ছাড়া ৪১০ হেক্টর জমির আমবাগানের ক্ষতি হয়েছে।

সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক জানান, জেলার প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমির ধান, ৪১০ হেক্টর জমির আমের ক্ষতি হয়েছে। সাতক্ষীরা নার্সারি মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি নুরুল আমিন জানান, তারসহ বেশিরভাগ ব্যবসায়ীর বাগানের আমগাছের ডাল ভেঙে গেছে। এতে প্রায় ২০ শতাংশ আম ঝরে পড়েছে।
তালা উপজেলার খলিশখালী ইউনিয়নের চোমরখালী গ্রামের কৃষক মাহমুদুল হাসান জানান, তিনি ধান কেটে ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তার আগেই ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে হেলে পড়ে ধানের বেশ ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে গতকাল ফণীর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।
শিবচর : মাদারীপুরের শিবচরের পদ্মার চরাঞ্চলের নদীতীরবর্তী মাঠের পাকা ও আধাপাকা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চরাঞ্চলের চারটি ইউনিয়নের প্রায় ১২০০ হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষকরা পাকা ও আধাপাকা ধান কাটতে বাধ্য হওয়ায় উৎপাদন কম হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফণীর প্রভাবে গত ৩-৪ দিন ধরে পদ্মার পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়ে চরাঞ্চলের কাঁঠালবাড়ি, চরজানাজাত, বন্দরখোলা ও মাদবরচর ইউনিয়নের নদীতীরবর্তী ধানসহ বিভিন্ন ফসলের মাঠ তলিয়ে যায়। হঠাৎ পানি বৃদ্ধিতে পাকা ও আধাপাকা ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনুপম রায় বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে উপজেলার চরাঞ্চলের পদ্মা নদীতীরবর্তী ধানসহ ১২০০ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতি নিরুপণের কাজ চলছে।
পিরোজপুর : পিরোজপুরে গাছপালা ভেঙে পড়াসহ নদনদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে কিছু এলাকায় পানি ঢুকে নি¤œঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। দমকা হাওয়ায় কলাগাছ ও পেঁপে বাগানসহ কৃষিতে ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে। মঠবাড়িয়ার ইউএনও জিএম সরফরাজ জানান, ঝড়ে ২৩০ একর জমির ফসল সম্পূর্ণ ও ৫৭২ একর জমির ফসল আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ভা-ারিয়ায় প্রায় ৪০টি ঘরবাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গিয়ে ধান, মুগডাল ও ভুট্টা ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। এদিকে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম গতকাল ফণীর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন।
বরগুনা : জেলায় ক্ষতি হয়েছে ৪৫ হেক্টর জমির ফসল। সদর উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক দিবস হাওলাদার জানান, ফণীর প্রভাবে জোয়ারের পানিতে তার আউশ ধানের বীজতলা, মুগডাল ক্ষেত ডুবে গেছে। একই কথা জানালেন খাজুরতলা গ্রামের সুলতান মিয়া, গৌতম হাওলাদার, আবদুল জব্বারসহ অনেকে। জেলা প্রশাসক কবির মাহমুদ বলেন, ফণীর আঘাতে ৪৫ হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে।
ফেনী : জেলার ছয় উপজেলায় ১০৩ একর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জয়েন উদ্দিন বলেন, জেলায় প্রায় ১০৩ একর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে।
বাগেরহাট : জেলার বিভিন্ন এলাকায় ধানসহ ৯০৩ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৭১০ হেক্টর জমির ধান হেলে পড়েছে। বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আফতাব উদ্দিন বলেন, ৭১০ হেক্টর জমির ধান হেলে পড়েছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment