বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে উন্নত জীবনযাপনের দেশ কানাডা। আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়েও দেশটি শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। এজন্য চাকরি, পড়াশুনা বা বসবাসের জন্য বহু মানুষ কানাডা বেছে নেন। তবে চাইলেই কানাডায় যাওয়া সম্ভব নয়। দেশটির নির্ধারিত নিয়ম মেনেই যেতে হয়।
আগামী তিন বছরের মধ্যে বিদেশ থেকে ১০ লাখ লোক নেবে কানাডা। এর মধ্যে চলতি বছর (২০১৯) ৩ লাখ ৫০ হাজার, আগামী বছর ৩ লাখ ৬০ হাজার এবং ২০২১ সালে ৩ লাখ ৭০ মানুষ কানাডায় যেতে পারবেন।
কানাডায় আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা কম। রাজনৈতিক বন্ধুত্বপূর্ণ সংস্কৃতির কারণে বসবাসকারীরা নিরাপদ ও সুখি জীবনযাপন করেন। দেশটিতে বর্তমানে ৩ কোটি ৭০ লাখের মতো মানুষ বসবাস করে। যাদের মাথাপিছু ইনকাম প্রায় ৫০ হাজার ডলার।
অবৈধ পথে কানাডা যেতে অনেকে বিপদে পড়েন। তবে অবৈধভাবে চেষ্টা না করে বৈধভাবে বাংলাদেশিদের কানাডা যাওয়ার বিভিন্ন সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যবসা, চাকরি, পড়াশুনা, স্পন্সরশিপ, আইইসি, ভ্রমণ, ইকোনোকি প্রোগ্রাম ও ফ্যামিলি প্রোগ্রাম।
১. ব্যবসা: আপনার যদি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকে এবং আপনি কানাডায় ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে কানাডা যাওয়া আপনার জন্য সহজ। তবে নিজে কানাডায় ব্যবসা করতে না চাইলে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কানাডার কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চুক্তি থাকলেও আপনি কানাডা যেতে পারবেন। এই প্রক্রিয়ার ভিসাকে নাফটা ভিসা বলা হয়।
নাফটা ভিসায় কানাডায় যাওয়ার জন্য আপনাকে ‘লেবার মার্কেট ইম্প্যাক্ট এসেসমেন্ট’ (এলএমআইএ) জমা দিতে হবে। তবে এই সুবিধা পেয়ে থাকে শুধুমাত্র চিলি, জর্ডান, পেরু, কলম্বিয়া, লিচেনস্টাইন, সুইজারল্যান্ড, কোস্টারিকা, মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র, আইল্যান্ড, নরওয়ে, ইসরাইল এবং পানামার নাগরিকরা।
২. চাকুরি: আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না থাকলে উপরের দেশগুলোর নাগরিক না হলে আপনি চাকুরির জন্য কানাডা যেতে পারেন। এজন্য কানাডার কোনো প্রতিষ্ঠানকে আপনাকে চাকুরির অফার লেটার এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করতে হবে।
কানাডায় দক্ষ কর্মী নেয়ার জন্য বিশেষ ভিসার সুবিধা চালু রয়েছে। ৩৪৭টি পেশায় এই জনবল নিয়ে থাকে কানাডা। এর মধ্যে রয়েছে, হেয়ার স্টাইলিস্ট (নরসুন্দর), বিক্রয় কর্মী এবং প্রশাসনিক সহকারী।
৩. স্পন্সনরশিপ: কানাডায় স্থানীয় হওয়ার সবচেয়ে সহজ ও নিশ্চিত উপায় হচ্ছে কোনো কানাডার নাগরিককে বিয়ে করা। তবে এক্ষেত্রে যদি কোনো ভুয়া বা অসততার আশ্রয় নেয়া হয় তাহকে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। বিয়ে করে কানাডায় থাকার ইচ্ছা পোষণ করলে তাকে অন্তত দুই বছর অপেক্ষা করতে হয়। এই দুই বছর তাকে সরকারি কর্তৃপক্ষ পর্যবেক্ষণ করে।
৪. আইইসি: ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী যুবকরা ‘ইন্টারন্যাশনাল এক্সপেরিয়েন্স কানাডা’ (আইইসি) এর আওতায় চাকুরির অফার লেটার ছাড়াই কানাডা যেতে পারে।
তবে এই সুবিধা যেকোনো দেশের নাগরিকের জন্য নয়। এর আওতায় রয়েছে; অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, জাপান, নরওয়ে, তাইওয়ান, অস্ট্রিয়া, এস্তোনিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, পোল্যান্ড, ইউক্রেইন, ফ্রান্স, লাটভিয়া, স্লোভাকিয়া, যুক্তরাজ্য, চিলি, জার্মানি, লিথুয়ানিয়া, স্লোভেনিয়া, কোস্টারিকা, হংকং, মেক্সিকো, স্পেইন, ক্রোয়েশিয়া, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, সুইডেন, চেক রিপাবলিক, ইতালি, নিউজিল্যান্ড এবং সুইজারল্যান্ড।
৫. লেখাপড়া: কানাডা যাওয়া আরেকটি সহজ প্রক্রিয়া ‘স্ট্যাডি ভিসা’। তবে এজন্য আপনাকে কানাডার কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি প্রক্রিয়া আগেই সেরে ফেলতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি সেখানে চাকুরি করতে পারবেন শুধুমাত্র যে স্টেটে আপনি পড়ালেখা করছেন সেই স্টেটে। এই সুযোগ পৃথিবীর সব দেশের জন্য রয়েছে।
৬. ভ্রমণ ভিসা: ভ্রমণ ভিসায় কানাডা যাওয়া সহজ। তবে ভিসা পাওয়া একটু কঠিন। ছুটি কাটাতে বা ভ্রমণ করতে যারা কানাডা যেতে চান তাদের ভিসা দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ভিসা প্রার্থীর কাছে জিজ্ঞেস করা কেন যেতে চান। দূতাবাসের যে কর্মকর্তা আপনার সাক্ষাৎকার নেবেন তার কাছে যদি মনে হয় ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও আপনার না ফেরার আশঙ্কা রয়েছে তাহলে আপনাকে ভিসা দেয়া হবে না।
৭. নতুন ব্যবসা: কানাডা উদ্যোক্তাদের ভিসা দিয়ে থাকে। আপনি যদি মনে করেন আপনার নগদ টাকা রয়েছে যা দিয়ে আপনি কানাডায় ব্যবসা করতে পারবেন তাহলে আপনাকে ভিসা দেয়া হতে পারে।
নতুন ব্যবসা শুরুর জন্য কী পরিমাণ পুঁজি দরকার বা আপনার কত টাকা বিনিয়োগ করতে হবে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট গাইডলাইন রয়েছে। গাইডলাইন অনুসরণ করে আপনাকে আবেদন করতে হবে।
৮. ইকোনমিক প্রোগ্রাম: কানাডা সরকার আগামী এক বছরে ইকোনমিক প্রোগ্রাম মোট ১ লাখ ৯১ হাজার ৬০০ অভিবাসী নেবে। ইকোনমিক প্রোগ্রামের মধ্যে রয়েছে, ফেডারেল হাই স্কিলড প্রোগ্রামে ৮১,৪০০ জন, আটলান্টিক ইমিগ্রেশন পাইলট প্রোগ্রামে ২,০০০ জন, ফেয়ার গিভার প্রোগ্রামে ১৪,০০০ জন, ফেডারেল বিজনেস প্রোগ্রামে ৭০০ জন, প্রভিন্সিয়াল নমিনি প্রোগ্রামে ৬১,০০০ জন ও কুইবেক স্কিলড ওয়ার্কার অ্যান্ড বিজনেস প্রোগ্রামে ৩২,৫০০ জন।
৯. ফ্যামিলি প্রোগ্রাম: আগামী এক বছরে ফ্যামিলি প্রোগ্রামের অধীনে নেয়া হবে ৮৮,৫০০ জন। ফ্যামিলি প্রোগ্রামের মধ্যে স্পাউজ, পার্টনার ও চিলড্রেন প্রোগ্রামে ৬৮,০০০ জন, প্যারেন্টস ও গ্রান্ড প্যারেন্টস ২০,৫০০ জন, রিফিউজি অ্যান্ড প্রোটেক্টেড পারসন প্রোগ্রামে ৪৫,৬৩০ জন, হিউম্যানিটেরিয়ান প্রোগ্রামে ৪,২৫০ জন।