মানিকগঞ্জে সিপিবির গণসমাবেশ

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, ‘আমাদের দেশের বাজেট ৫ লাখ কোটি টাকা। তার চেয়ে বেশি পরিমান টাকা গত ১০ বছরে আমাদের দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে। সরকার বলছে, আমাদের দেশে উন্নয়ন হয়েছে, আমাদের প্রবৃদ্ধি শতকরা ৮ ভাগ। প্রবৃদ্ধি বাড়ার অর্থ হচ্ছে সম্পদ বেড়েছে। দেশের সম্পদ বছরে যদি ৮ ভাগ বাড়ে, তাহলে আমার শতকরা ৯৯ ভাগ গরীব ও মধ্যবিত্ত মানুষের সম্পদ বাড়ার বদলে কমে কেন? সেই টাকা গেল কোথায়?’

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মানিকগঞ্জ শহরের মুক্তিযুদ্ধের শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের পাদদেশে আয়োজিত এক গণসমাবেশে মুজাহিদুল ইসলাম এসব কথা বলেন। দুর্নীতি-লুটপাট-সন্ত্রাস-সাম্রাজ্যবাদ-সাম্প্রদায়িকতা রুখতে ভাত ও ভোটের দাবিতে এই গণসমাবেশের আয়োজন করে জেলা সিপিবি।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। এই সরকার জনগণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসেনি। রাতের অন্ধকারে বিনাভোটে হয়েছে। আগের রাতেই ভোটগ্রহণ হয়ে গেছে। এবার পুলিশ, র‌্যাব এবং গোয়েন্দা সংস্থাদের দিয়ে ভোট নেওয়া হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ তাঁদের কর্মীদের ওপরও নির্ভর করতে পারেনি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ধারা ও চেতনা, সেখান থেকে দেশপ্রেম সরিয়ে নিয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাকে বলেছিলেন, খোন্দকার মোস্তাক সাংঘাতিক খারাপ লোক, সাবধানে থাকবে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করতে চাই, দেশ এখন মুজিবের নীতিতে চলছে, নাকি মোস্তাকের নীতিতে চলছে। ১৫ আগষ্টে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মোস্তাক সমাজতন্ত্রকে বাতিল করলো, ধর্মনিরপেক্ষতা বাতিল করলো, গণতন্ত্রের নাম-নিশানা মুছে ফেললো। সেই পথ ধরেই জিয়াউর রহমান এবং পরবর্তীতে এরশাদ এগুলো। আরেকবার লড়াই হলো, এরশাদকে আমরা সরালাম। সেই লড়াইয়ে বিজয়ও হাত ছাড়া হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি- দুই দলই বলেছিল, এরশাদকে তাঁদের জোটে নেবে না। সেই সাক্ষর করা কাগজ এখনও আমার কাছে আছে। তবে ক্ষমতার লোভে তারা ক্ষমতার সমীকরণ মেলানোর প্রয়োজনের খালেদা জিয়াও এরশাদকে টানে, শেখ হাসিনাও এরশাদকে টানে। সেই টানাটানি শুরু করেছিল খালেদা জিয়া। তবে শেষ পর্যন্ত জিতে গেল শেখ হাসিনা। এরশাদের দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব কয়েকদিন আগে বলেছিলেন, শহীদ নূর হোসেন ইয়াবাসেবী ছিলেন। কতো বড় স্পর্ধা! এখনও তাঁর বিচার হয় না।

 

সিপিবি সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি- দুই দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব; তবে কোনো আদর্শ নিয়ে দ্বন্দ্ব নেই। আওয়ামী লীগ জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে বলে আবার হেফাজতকে কোলে টেনে নেয় কেন! রাষ্ট্রধর্ম এরশাদ করেছিল, শেখ হাসিনা সেটা কেন বহাল রাখেন? আদালতের নির্দেশের পরও ৭২’র সংবিধান যে আসল রূপে কেন ফিরে নেওয়া হলো না?

মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, শেয়ার কেলেঙ্কারীতে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। সালমান এফ রহমান শেয়ারবাজারের লুটপাটের সঙ্গে জড়িত। তাকে তো ধরা হয় না! উল্টো তাঁকে অর্থনৈতিক উপদেষ্টা করা হয়েছে। দেশ আজ দুই ভাগে ভাগ হয়েছে। এক ভাগ লুটেরা, আর ৯৯ ভাগ হচ্ছে শোষিত, বঞ্চিত ও অবহেলিত। আপন হিস্যা পাওয়ার জন্য পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে যেভাবে লড়াই করেছিলাম। বঙ্গবন্ধু তখন বলেছিলেন, বাঙালির হিস্যা আদায়ের জন্য সংগ্রাম করছি। তাঁর কথায় সুর মিলিয়ে বলতে চাই, এবার ৯৯ ভাগ শোষিত মানুষের হিস্যা আদায়ের জন্য এবার শেষ সংগ্রামে নামতে হবে। সেই সংগ্রামের জন্য আমাদের প্রস্তুত হতে হবে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে দিয়ে কাজ হবে না, এই কায়েমি স্বার্থের কাছে তাঁরা আজ বন্দি হয়ে গেছে।

আজ কৃষকদের পানির দরে ফসল বিক্রি করতে হয় মন্তব্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ইউনিয়নে সরকারি গুদাম ও ক্রয়কেন্দ্র থাকলে কৃষকদের লোকসান গুনতে হবে না। পেঁয়াজের কারবারে অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ৬-৭ হাজার কোটি টাকা মানুষের পকেট কেটে নিয়েছে। দেশের বাজেটের শতকরা এক ভাগের অর্থ দিয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে সংরক্ষণাগার তৈরি করে কৃষকের সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে।

জেলা সিপিবি নেতা আবুল ইসলাম শিকদারের সভাপতিত্বে ও জেলা সিপিবির সহসাধারন সম্পাদক আরশেদ আলীর সঞ্চালনায় গণসমাবেশে আরও বক্তব্য দেন, সিপিরি প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল্লাহ আল-ক্বাফী, কৃষক নেতা মোনাই গাঙ্গুলী, সিপির কেন্দ্রীয় নেতা আজাহারুল ইসলাম, জেলা সিপির সাধারন সম্পাদক মজিবর রহমান প্রমুখ। গণসমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জেলা সিপিবির সভাপতি নূরুল ইসলাম এবং মিজানুর রহমান। গণসমাবেশ শেষে জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। পরে মিছিলটি জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে গণসমাবেশস্থলে গিয়ে শেষ হয়।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন