গ্রেপ্তার আতঙ্কে বিএনপি নেতারা

দলের কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ। এতে করে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে দেখা দিয়েছে গ্রেপ্তার আতঙ্ক। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতির কারণে কমে গেছে নেতাকর্মীদের আনাগোনা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, দলের প্রতিটি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শত শত মামলা। সরকারের নির্যাতন-নিপীড়নের দলের নেতাকর্মীরা বিপর্যস্ত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মারমুখী আচরণে নেতাকর্মীরা একটু নিরাপদ দূরত্বে থাকছে। গ্রেপ্তার এড়িয়ে চলতে এই কৌশল নিচ্ছে। তার মানে এই নয় যে নেতাকর্মীরা মনোবল হারিয়ে ফেলছে। তাদের মনোবল অটুট আছে। দলের কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য নেতাকর্মীরা যে কোনো ত্যাগ শিকারে প্রস্তুত আছে।

Epsoon Android tv

বিএনপির পক্ষ থেকে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরের কাছে অভিযোগ করে বলেন, হাইকোর্টের সামনে সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন করে ধরপাকড় শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।

নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্কের পেছনে কাজ করছে গত মঙ্গলবারের কর্মসূচি। ঐদিন দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি এবং জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন হাইকোর্ট এলাকায়। এতে হাইকোর্টের সামনের রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ

রাস্তা ছেড়ে দিতে বললে নেতাকর্মীরা রাস্তা ছাড়তে রাজি হয়নি। এ নিয়ে এক পর্যায়ে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে নেতাকর্মীরা হাইকোর্ট এলাকায় গাড়ি ভাঙচুর করে। ওই ঘটনায় গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ৫ শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা করে শাহবাগ থানা পুলিশ। মঙ্গলবার রাত ১০টায় মামলা দায়েরের পর গভীর রাতে মালয়েশিয়া হয়ে আমেরিকা যাওয়ার পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার হন ইশতিয়াক আজিজ উলফাত।

হাইকোর্টের ঘটনায় মামলা দায়ের ও মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতিকে গ্রেপ্তারের পর নেতাকর্মীদের আতঙ্ক ডেয়ে বসে। আত্মগোপনে চলে যান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, শওকত মাহমুদ, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য আবদুস সালামসহ আরও অনেকে।

গত মঙ্গলবার রাতে শাহবাগ থানায় মামলা হওয়ার পর গত বুধবার সকাল থেকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। দুপুরে কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা যায়, কার্যালয়ের সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশের আনোগোনা। কার্যালয়ের প্রধান ফটকের দুইপাশের্^ অবস্থান নেয় সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। কার্যালয়ের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের এমন উপস্থিতির কারণে এবং এ খবর ছড়িয়ে পড়লে কার্যালয়ে দলের নেতাকর্মীদের আনাগোনা কমে যায়। বিশেষ করে কার্যালয়ে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সংবাদ সম্মেলনে চিহ্নিত যেসব নেতাকে দেখা যায় সব সময়Ñ তাদের কাউকে গত বুধবার দেখা যায়নি। একই অবস্থা ছিল গতকাল বৃহস্পতিবারও। এরই মধ্যে দলের নেতাকর্মীদের না পেয়ে ফারুক ও মঞ্জু নামে কার্যালয়ের দুই কর্মচারীকে আটক করেছে পল্টন থানা পুলিশ।

এদিকে হাইকোর্টের সামনে গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় জামিন নিতে গতকাল বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে জামিন নিতে যাওয়ার পথে পুলিশের হাতে আটক হন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ এবং যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন। দুপুর আড়াইটায় হাইকোর্ট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান। এই তিন নেতাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) এস এম শামীম বলেন, তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রয়েছে। এ কারণে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অবশ্য পরে তাদের নিম্ন আদালতে নেওয়া হলে আদালত তাদের জামিন দেয়। এছাড়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ^র চন্দ্র রায় ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন