অনশনে অসুস্থ শিক্ষার্থীরা, খবর নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ

পূজার দিনে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পেছানোর দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের মতো আমরণ অনশন করছেন শিক্ষার্থীরা। রাতে প্রচণ্ড শীতের কারণে অনশনে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

অসুস্থ তিন শিক্ষার্থী হলেন অপূর্ব চক্রবর্তী, অর্ক সাহা ও জগন্নাথ হল ছাত্র সংসদের জিএস কাজল দাস। অপূর্ব চক্রবর্তী এবং অর্ক সাহাকে দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আর কাজল দাসকে রাজুকে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, বার বার আবেদন জানানোর পরও কোন সাড়া না পেয়ে অনশন কর্মসূচি গ্রহণে বাধ্য হয়েছেন তারা।

তবে অনশনে নেতৃত্বদানকারী জগন্নাথ হল সংসদের ভিপি উৎপল বিশ্বাস বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে এখানে আমরা অনশন করছি। আমাদের ৪-৫ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছে। অসুস্থ জগন্নাথ হলের জিএস কাজল দাসকে স্যালাইন লাগানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ন্যায্য দাবিতে অনশন করে অসুস্থ হয়ে পড়ছি আমরা অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কেউ আমাদের দেখতে আসেননি। তবে জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট সকালে আমাদের দেখে গেছেন এবং ডাক্তারি পরামর্শ নেয়ার ব্যবস্থা করে গেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে কমিশনের সিনিয়র সচিবের দেওয়া বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন আন্দোলনকারীরা। তারা বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীরা না বুঝে আন্দোলন করছেন’, ইসি সচিবের এমন বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা শিক্ষার্থীদের অপমান করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন বক্তব্য বা বিবৃতি দেওয়া হলে ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না। শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) টিএসসির সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে চলমান অনশনের দ্বিতীয় দিনে শিক্ষার্থীরা এমন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ঢাবি শিক্ষার্থীদেরকে অবিবেচক, নবীন ও অবুঝ বলে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দেওয়া হচ্ছে। এর দায়ভার কমিশনকেই নিতে হবে।

তারা আরও বলেন, বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজ ও ডাকসুর পক্ষ থেকে কমিশনের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবিতে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। তারাও কি অবুঝ? আপনারা কমিশন সুপ্রিম কোর্টে আপিল শুনানির দিন আপনাদের আইনজীদের মধ্যমে বিষয়টি আদালতকে জানাবেন। নির্বাচন না পেছালে অনশন অব্যাহত থাকবে বলেও জানান শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ঢাবির শিক্ষার্থীরা জানে কিভাবে রাষ্ট্রঘোষিত অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠন করতে হয়। অনতি বিলম্বে পূজার দিন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করায় দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিতে হবে ও তারিখ পরিবর্তন করতে হবে।

শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তোলেন, নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্র এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। এ অবস্থায় কিভাবে নাগরিকরা ধর্মীয় উৎসব পালন করবেন?

৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু পঞ্জিকা অনুযায়ী ২৯ জানুয়ারি সকাল ৯টা ১৫ থেকে ৩০ জানুয়ারি সকাল ১১টা পর্যন্ত সরস্বতী পূজার আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে। আর ৩০ জানুয়ারি পঞ্চমীর আগে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া যায় না। এই পূজাটি দেশের প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হয়ে থাকে। ৩০ জানুয়ারি নির্বাচন হলে এর কয়েক দিন আগে থেকেই ভোটের কার্যক্রম শুরু হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। যাতে পূজা পালনে বিঘ্ন ঘটবে বা পূজার আচার-আনুষ্ঠানিকতা বাধাগ্রস্ত হবে। তাই নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের দাবি শিক্ষার্থীদের।

একজন আইনজীবী এ দাবিতে হাই কোর্টে গেলেও আদালত মঙ্গলবার তা খারিজ করে দেয়। ফলে ভোটের তারিখ সেই ৩০ জানুয়ারিই থাকে। এরপর মঙ্গলবার বিকাল থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা শাহবাগে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। বুধবার নির্বাচন কমিশন ভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালনকালে শাহবাগে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন তারা। পরে কয়েক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আমরণ অনশনে বসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫০ শিক্ষার্থী। তাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, টিএসসি ভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠন এবং ডাকসুর প্রতিনিধিরা সংহতি জানিয়েছেন।

অনশনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা ‘পূজার দিন নির্বাচন মানি না, মানবো না; ৩০ তারিখ নির্বাচন মানি না; আমারা সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই; পূজা করবো, নাকি ভোট দেব; সংবিধানের ৪১ নং অনুচ্ছেদের কি মূল্য নাই?; হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই, নির্বাচনটা কি পূজার দিনেই তাই?; ধর্ম আমার অধিকার, ভোট আমার অধিকার কোন দিকে যাই ইত্যাদি লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড বহন করে।

 

 

 

 

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন