প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করলেন বিএনপির এমপি হারুন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য হারুন অর রশীদ বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব লাভের পর নিঃসন্দেহে দেশ অনেক এগিয়ে গেছে। সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সম্পূরক প্রশ্ন করতে গিয়ে এসব কথা বলেন বিএনপির এই সংসদ সদস্য।

হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রকৃত বিরোধী দলের সদস্য আমি।’

তবে এসময় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যসহ সরকারি দলের সদস্যরা প্রতিবাদ জানায়। তিনি তার জন্য নির্ধারিত যুবসমাজ সম্পর্কিত সম্পূরক প্রশ্ন না করে তার নির্বাচনী এলাকার সরকারি হাসপাতালের দুরবস্থার প্রসঙ্গ তুলে আনেন।

তিনি বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকার জেলা সদর হাসপাতালটি ২০০৩ সালে…।

এসময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তাকে সম্পৃরক প্রশ্ন করতে বললে সংসদ সদস্য হারুন বলেন, ‘আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ ব্যাপারে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করব।’

এরপর বিএনপির সংসদ সদস্য বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পরপর তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভের পর নিঃসন্দেহে দেশ অনেক এগিয়ে গেছে। সমৃদ্ধি অর্জন করেছে-কোনো সন্দেহ নেই।’

তিনি বলেন, ‘বৃহত্তর অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে-এতে কোনো সন্দেহ নেই । কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দীর্ঘসূত্রিতার জন্য আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। একারণে বিশেষ করে তরুণ সমাজ আমার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে জানানোর জন্য অনুরোধ করেছে যে, সারা বাংলাদেশের সত্যিকারের কী অবস্থা! মন্ত্রী-এমপি আমরা প্রটোকল নিয়ে চলাচল করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রটোকল ছাড়া একটি টিম নিয়ে ঢাকা শহরে একদিন চলাফেরা করেননি। কী অবস্থায় আমরা আছি! কী অবস্থা চলছে! যুব সমাজের প্রতিক্রিয়া কী, যুব সমাজের বর্তমান ভাবনা টা কী একটু দেখুন।’

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা কথা আছে-ধান ভানতে শিবের গীত। মাননীয় সংসদ সদস্য সেই ধান ভানতে শিবের গীত গাইছেন। যে ধরনের সম্পূরক প্রশ্ন করার কথা, সেই যুবসমাজ থেকে তিনি স্বাস্থে চলে গেছেন। তবে স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল। উনি একটা প্রশ্ন করতে চেয়েছিলেন কিন্তু করতে পারেননি। তার প্রশ্ন থেকে আমি যা বুঝে নিয়েছি, তা হলো উনার এলাকার হাসপাতালে জনবলের অভাব। এই সমস্যাটা সব জায়গায় হচ্ছে। তবে সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আছেন। তিনি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ’ আমি প্রটোকল নিয়ে চলি। সিকিউরিটি ব্যবস্থা আছে। সমস্যা আছে এটাও যেমন ঠিক, আবার একেবারে এটাও ঠিক নয় যে, দেশের অবস্থা আমি জানি না। কারণ আমি সব দিকে নজর রাখার চেষ্টা করি। তিনি বলছেন, আমি যেন ভালোভাবে লক্ষ্য রাখি। আবার যখন দেখে বেশি কাজ করি, তখন প্রশ্ন তোলেন, প্রধানমন্ত্রীকেই কেন সব কাজ করতে হবে? কেন দেখতে হবে? এটাও আবার শুনতে হয়। তবে আমি মনে করি যেহেতু আমি দেশের দায়িত্ব নিয়েছি, তাই সব দিকে নজর দেয়াটা আমার দায়িত্ব। এটা আমার কর্তব্য।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের যুব সমাজের জন্য কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। সন্ত্রাস, মাদক, জঙ্গিবাদ-এসব দূর করে তারা যাতে সুস্থ জীবনে ফিরে আসে, সে ব্যাপারে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছি।’

‘১৯৭৫ সালের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যার পর আমাদের দেশে কী অবস্থা ছিল? জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতায় আসেন তখন মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি শুরু হয়েছিল। এই সমাজকে বিপথে ঠেলে দেয়া, মাদক-এগুলো তাদের মূল বিষয় ছিল। এজন্য অনেক মেধাবী ছেলে যারা এসএসসিতে প্রথম হতো তাদের এক হাতে পুরস্কার, অন্য হাতে অস্ত্র অর্থ দিয়ে বিপদে ঠেলে দেয়া হতো। জীবনে তারা আর কিছু করতে পারত না। তারা এভাবে হারিয়ে যাক তা আমরা চাই না।’

ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে মেয়েদের ওড়না পরা নিষিদ্ধ হওয়ার খবর গণমাধ্যমে আসায় এর বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ধর্মীয় অনুভূতি ও মূল্যবোধে আঘাত করে এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে সরকার সব সময় সতর্ক রয়েছে।’

রাঙ্গাঁর অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওই অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। মেয়েদের ওড়না পরা নিষিদ্ধ করার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডিও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।’

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। বর্তমান সরকার ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য সব ধর্মের চেতনা ও মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখতে বদ্ধপরিকর।’

রাঙ্গাঁর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া আমরা শুরু করে দিয়েছি। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে এবং এটা চলতে থাকবে। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি সচেতনতার ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের জননিরাপত্তা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকার সর্বাত্মক উদ্যোগ ও সুদৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে। দুর্নীতি, মাদক নির্মূল ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণের মাধ্যমে আমাদের অভিলক্ষ্য হল- নিরাপদ জীবন ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গঠন। সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূলে পুলিশ বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’

সরকারি দলের মোরশেদ আলমের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকারের নানামুখী কূটনৈতিক তৎপরতার ফলে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিদেশগামী কর্মীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বছর গড়ে ৭-৮ লাখ কর্মী বিদেশ যাচ্ছে। ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৬৬ লাখ ৩৩ হাজার ২৫৪ জনের বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ সময়ে রেমিটেন্স এসেছে ১৫৩ দশমিক ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।’

সরকারি দলের আহসানুল ইসলামের (টিটু) সম্পুরক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই ছাত্র-ছাত্রীরা ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই হাতে-কলমে কাজ শিখবে। আর এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। এজন্য আমরা স্কুল থেকেই নির্দিষ্ট বিষয়গুলোতে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে আমরা শিক্ষাকে ঢেলে সাজাচ্ছি।’

‌‌‌‘কেউ ইচ্ছা করে বেকার থাকলে সেটা ভিন্ন কথা, কিন্তু এখন এত বেশি কর্মসূচি আমরা হাতে নিয়েছি তাতে যে কেউ চাইলে কিছু না কিছু করে খেতে পারে।’

আপনি আরও পড়তে পারেন