নারায়ণগঞ্জে চিহ্নিত এক জুয়াড়িকে ছাত্রলীগ পরিচয়ে ফিল্মি কায়দায় তুলে নিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে। অপহরণের তিনঘন্টা পর একটি টর্চার সেল থেকে ওই জুয়াড়িকে উদ্ধারসহ তিন যুবককে আটক করেছে পুলিশ।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটের দিকে শহরের চাষাড়ায় বংগবন্ধু সড়কে ঘটে এই অপহরণের ঘটনা।
আটককৃতরা হলেন, শহরের পাইকপাড়া পুল এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে মো. সানি (২৮), ২১৭ নং বিবি রোডের মৃত নাছির আহম্মেদের ছেলে মো. হানিফ নাঈম (৩০) এবং দেওভোগ আখড়া দিঘিরপাড় এলাকার বাবল বিশ্বাসের ছেলে শ্রী রতন বিশ্বাস (২৯)।
আটককৃতরা সবাই শহরে নিজেদেরকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়ে বেড়ায় বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে অভিযোগ রয়েছে। তবে ছাত্রলীগে এদের কোনো পদপদবী নেই বলেও সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে। পুলিশও এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেনি।
প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রে জানা যায়, পাঁচটি মোটর বাইক শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে আচমকা থামে। প্রতিটি বাইকে দুইজন করে মোট দশজন যুবক সেখানে। অনেকটা ফিল্মি স্টাইলে শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে যায় তারা। দশ যুবকের দলটি বাইক নেমেই চিহ্নিত জুয়াড়ি বড় শাজাহানকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘জুয়ার বোর্ড চালিয়ে অনেক টাকা করেছিস, চল এবার আমাদেরকে টাকা দিবি’ এই বলেই তাকে তুলে নিয়ে আসে চাষাড়ায় হক প্লাজা সংলগ্ন একটি নির্মাণাধীন ভবনে। যেটি শহরে টর্চার সেল হিসেবে পরিচিত। এখানেই তাকে তিন ঘন্টা আটকে রেখে দশ লাখ টাকার চাঁদার দাবীতে তার উপর টর্চার চালানো হয়।
অপহরণের তিন ঘন্টা পর খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে রাত নয়টার দিকে অপহৃত শাজাহানকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। এসময় আটক করা হয় ওই তিন যুবককে।
প্রতক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ছাত্রলীগ পরিচয়ধারী শান্ত ও অরিফের নেতৃত্বে পাঁচটি মোটর বাইকে করে দশজন যুবক বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে জুয়াড়ি বড় শাজাহানকে তুলে নিয়ে চাষাড়ার দিকে আসে। তারা শাজাহানকে বংগবন্ধু সড়কের হক প্লাজার উত্তর পাশে একটি ব্যাংকের সাইনবোর্ড টানানো নির্মাণাধীন বহুতল ভবনে নিয়ে আটকে রেখে দশ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে তারা। এসময় কয়েকজন যুবককে ওই ভবনের বাইরে অবস্থান নিয়ে মহড়া দিতে দেখা যায়।
এদিকে হক প্লাজা সংলগ্ন ওই ভবনের আশপাশের কয়েকটি সূত্র জানায়, ভবনটির বাইরে আরিফসহ কয়েকজনকে মহড়া দিতে দেখা যায়। আর ভবনের গেট ভেতর থেকে আটকে দিয়ে এক যুবক সেখানে পাহারায় থাকে। ভেতরে মারধরের শব্দ রাস্তা থেকে শোনা গেলেও স্থানীয় কেউ এগিয়ে যেতে সাহস দেখায়নি।
খবর পেয়ে রাত নয়টার দিকে সদর মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাফীউল আলমের নের্তৃত্বে পুলিশের একটি দল ও র্যাবের একটি পৃথক দল ঘটনাস্থলে এসে নির্মাধীন বহুতল ভনবনটিতে অভিযান চালায়। এসময় শাজাহানকে আহত অবস্থায় উদ্ধারসহ তিন যুবককে আটক করে আইন শৃংখলা বাহিনী। তবে, শান্ত ও আরিফসহ অপহরণের মূল হোতারা অভিযানের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার এসআই শাফিউল আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, অপহরণের খবর পেয়ে আমরা অভিযান চালিয়েছি। র্যাবও সাথে ছিল। শাজাহান নামে একজনকে আমরা উদ্ধার করেছি। এসময় তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সদর মডেল থানা পুলিশের অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান জানান, শাজাহান নামে একজনকে উদ্ধারসহ তিনজনকে আটক করেছি। তবে, মামলা বা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।