টাংগাইলে সাগরদিঘী নামক একটি বিখ্যাত দিঘী

টাংগাইলে সাগরদিঘী নামক একটি বিখ্যাত দিঘী

সাগরদিঘী বাংলাদেশের টাংগাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কি.মি. পূর্বে সাগরদিঘী নামক একটি স্থান রয়েছে,এটি ঘাটাইল উপজেলার একটি ইউনিয়ন।এখানে ১২.৮০ একর জমির উপর একটি বিখ্যাত দিঘী আছে। দিঘীটি খনন করেন স্থানীয় পাল বংশীয় সাগর রাজা। জনশ্রুতি আছে, রাজা সাগর পাল তার প্রজাদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার জন্য ২০০০ শ্রমিক নিয়ে ২ বছরের মধ্যে খনন কাজ শেষ করেন।

পর্যাপ্ত গভীরতা থাকা সত্ত্বেও রহস্যজনকভাবে দিঘির তলানীতে পানি না উঠায় রাজা চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে রাজা স্বপ্ন দেখেন রানীকে দিঘিতে না নামালে পানি উঠবে না। রাজা রানীকে তার স্বপ্নের কথা বললেন। সব শুনে রানী দীঘিতে নামার জন্য মন স্থির করেন। দিনক্ষণ ঠিক করা হলো বিস্ময়কর এমন সিদ্ধান্তের বাস্তব দৃশ্য নিজ চোখে দেখার জন্য নির্দিষ্ট দিনে কৌতুহলী জনতা দিঘির চারপাশে ভিড় জমায়। রানী দিঘীতে নামেন,তিনিই যতই নামছিলেন  ততই পানি বাড়ছিল। এক পর্যায়ে দিঘী পূর্ণ হয়ে যায় পানিতে।  আর সেই সঙ্গে রানী পানিতে ডুবে হারিয়ে যান। রানীকে উদ্ধারের চেষ্টার কোন কমতি ছিল না  রাজার। দিঘীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা প্রজারাও  এই দৃশ্য দেখে ব্যাথিত হোন। কিন্তুু নিয়তির কি পরিহাস বাঁচানো গেলোনা রাণীকে। রানীর আত্মা বিসর্জন এর মাধ্যমে দিঘীতে পানি ভরে উঠলো।  সাগর রাজার নামেই দিঘীটির নামকরণ করা হলো।এ অঞ্চলের সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকদের বিশ্বাস এখনো রাণীর আত্মা ঘুড়ে বেড়ায় দিঘীর পাড়ে তাই তারা রাণীর আত্মাকে শান্ত রাখতে বিভিন্ন সময় পূজা অর্চনা করে থাকে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি সাগর রাজার স্মৃতিবিজড়িত দিঘীটি আজ ধ্বংসের মুখে।সময়ের সাথে সাথে দিঘীর জৌলুস হারিয়ে গেছে।দিঘীর পাড় দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে লেয়ারের খামার।লেয়ারের বজ্য ফেলা হচ্ছে দিঘীর পানিতে।লীজ এর মাধ্যমে দিঘীতে করা হয় মাছ চাষ।যার ফলে দূষিত হচ্ছে পানি এবং বাতাসে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এর ফলে সাধারণ মানুষদের পোহাতে হয় দুর্ভােগ।দিঘীর দুর্গন্ধের কারণে তাদের নাক বন্ধ করে চলতে হয়। এক সময় দিঘীর সৌন্দর্য ছিলো চোখে পড়ার মতো,ভোরের আলোয় যে দিঘীর জলে দেখা যেত ঝিকিমিকি আলোর স্ফুরণ, যে দিঘীর জলে ভেসে উঠত পূর্নিমার চাঁদের  আলো। বিশুদ্ধ বাতাস ও নৈসর্গিক প্রকৃতির টানে দিঘীর সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য ছুটে আসতো প্রকৃতিপ্রেমীরা।কিন্তুু দিঘীটি দূষিত হওয়ার কারণে   দর্শনার্থীদের আগমন নেই বললেই চলে।জীববৈচিএ্য এবং পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় ঐতিহ্যবাহী দিঘীটি দূষণ ও দখলমুক্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা মনে করেন এই দীঘির ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ দরকার চারপাশের অবৈধ স্থাপনা স্থানান্তর বা উচ্ছেদ করে দীঘির চারপাশ সংস্কার করে এটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুললে এটি হতে পারে টাঙ্গাইল ঘাটাইলের সেরা পর্যটন কেন্দ্র।

তারেক আহমেদ
ঘাটাইল, টাঈাইল

আপনি আরও পড়তে পারেন