রূপগঞ্জে হাত বাড়ালেই মুঠো মুঠো শিম !

রূপগঞ্জে হাত বাড়ালেই মুঠো মুঠো শিম !

নজরুলইসলামলিখন, রূপগঞ্জ ঃ

তুমি যাবে ভাই, যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোটগায়।তুমি যদি যাও-দেখিবে সেখানে মটর লতার সনে, শিম আর শিম হাত বাড়ালেই মুঠি ভরে সেই খানে। পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের নেমন্ত্রণ কবিতার পংক্তিগুলোর মতোই রূপগঞ্জের পূর্বাচলে হাতবাড়ালেমুঠিভরেশিমমিলে। শিশির ভেজাশিমের ক্ষেত। লকলকেশিমেরডগায়, লাল-সাদাফুলেরপাপড়িতেচিকচিককরছেশিশিরবিন্দু। ক্ষেতেশিম।

জমিরআলেশিম। খালেরপাড়েশিম। বাদ যায়নিতিনশ’ফুটসড়কের দ’ুপাশও। বলাযায়শিমেররাজ্য পূর্বাচল। চলতি মৌসুমেরূপগঞ্জউপজেলারশুধুপূর্বাচলউপশহরের (দাউদপুর ও রূপগঞ্জসদরইউনিয়নেরআংশিক) প্রায় ১৯০০ বিঘাজমিতেশিমচাষহয়েছে। যারবিক্রি দাঁড়াবেপ্রায় ৪০ কোটিটাকা।

মাইলের পর মাইল। গ্রামের পর গ্রাম। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে যে দিকে দু’চোখযায় সে দিকেইশিমের দেখা মেলে। প্রতিবছরেরমতোএবারোশিমেরবাম্পারফলনেচাষীদেরমুখেহাসিরঝিলিক। রূপগঞ্জেশিমচাষেরজন্য যুগযুগধরেপরিচিত দাউদপুর ও রূপগঞ্জসদরইউনিয়নেরগ্রামগুলো। এখনপরিচিতপূর্বাচলউপশহরহিসাবে। প্রতিশীত মৌসুমে এ অঞ্চল থেকে অর্ধ শত কোটিটাকারশিম দেশেরপ্রত্যন্তঅঞ্চলেরপ্তানীহয়ে থাকে। রপ্তানীহয়ে থাকে বিদেশেও। কীটনাশকবিহীন ও খাওয়ায় সু-স্বাদুহওয়ায়পূর্বাচলেরশিমেরকদর দেশজোড়া।

শিমচাষেহাজারো কৃষকলাভবানহচ্ছে। শিমরপ্তানীরপাশাপাশিশিমেরবীচিরচাহিদাও কোনোঅংশে কম নয়। ফলেপূর্বাচলেরশিমপ্রতিবছরেরমতোএবারো দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে যাওয়ার সম্ভাবনারয়েছেবলেউপজেলা কৃষিঅফিস ও কৃষকদের সঙ্গে আলাপকালেজানা গেছে।

সরেজমিনেঘুরে দেখা গেছে, পূর্বাচলের ফেরচাইত, হাড়ারবাড়ি, গুচ্ছগ্রাম, ধামচি, কুলুপ, বাঘবের, গোয়ালপাড়া, সুলপিনা, গোবিন্দপুর, হিরনাল, বাঘলা, আগলা, কালনী, খৈশাইর, শিমুলিয়া, জিন্দা, মাধবপুর, রোহিলা, গুতিয়াবোসহবিভিন্নগ্রামেরজমিরআইল, ঢিলারপাশে, খালেরপাশে, তিনশ’ফুটসড়কের দুপাশে, বিলের পর বিল, ক্ষেতের পর ক্ষেত, গ্রামের পর গ্রামশুধুশিমআরশিম। দেখে মনেহবে যেনোএটাশিমেরসাগর। শিমেররাজ্য।

খোঁজনিয়েজানাযায়, পূর্বাচলেপুঁটি, ছুরি, ল্যাইটা, চিটাগাইংগামডইরাসহ ৫ প্রজাতিরশিমেরআবাদ হয়ে থাকে। তবেচিটাগাইংগা ও ছুরিশিমেরচাহিদাঅন্যান্য শিমেরতুলনায়অনেকটা বেশি। তাই এ শিমেরচাহিদারয়েছে দেশ জুড়ে। এ অঞ্চলেআগতপাইকাররা কৃষকদের ক্ষেত থেকে ছুরি ও চিটাগাইংগাশিম ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজিহিসেবেপাইকারী দরেকিনে দেশেরবিভিন্নশহরগুলোতেট্রাকযোগেনিয়েযায়।
কথাহয় ৯ নং সেক্টরের বাঙালবাড়িসংলগ্নশিমচাষীজহিরুলমিয়ার সঙ্গে। তার সঙ্গে যখনকথাহচ্ছিল, তখনতিনি ক্ষেত থেকে টাটকাশিমনামিয়েএনেমাপ-ঝোককরছেন।

ফসল কেমনজিজ্ঞেসকরতেই ফোকলা দাঁতেহাঁসিদিয়েজহিরুলের সোজাসাপটাউত্তর। ভাইঅনেকভালাফলন অইছে এইবার। দেখতাছেনতোওশি (শিম)। কতোতরতাজা। এমুনটাটকাপাওয়াযাইবোনা কোনহানে। চলতি মৌসুমেকিপরিমাণশিমবিক্রি করবেন এ প্রশ্নেতিনিবলেন, ১৫০ মণ বেচার ( বিক্রি ) আশাআছে। জহিরুলমিয়াবলেন, তিনিএবার দেড় বিঘাবর্গাজমিতেশিমচাষকরেছেন।

উপজেলা কৃষিঅফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমেরূপগঞ্জউপজেলারবিভিন্নএলাকায়প্রায় ৩২০ হেক্টর (২৩৭১ বিঘা ) জমিতেশিমচাষহয়েছে। এরমধ্যে সিংহভাগইপূর্বাচলউপশহরের দাউদপুরইউনিয়ন ও রূপগঞ্জসদরইউনিয়নেরআংশিকএলাকায়। পূর্বাচলেএবার ২৫০ হেক্টর ( ১৮৫২ বিঘা ) জমিতেশিমচাষহয়েছে।

দাউদপুরইউনিয়নেরব্লকের দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষিকর্মকর্তাআরিফুলইসলাম, আঃখালেক ও সাজেদাখাতুনবলেন, জহিরুলমিয়ারমতোপূর্বাচলেপ্রায় এক হাজারের বেশি কৃষক মৌসুমেবিভিন্নজাতেরশিমচাষকরছেন। কথাহয়হাড়ারবাড়িএলাকার কৃষকহাফিজুলইসলাম, ফোরকানমিয়া, অহিদ মিয়ার সঙ্গে। তারাবলেন, এইডাআমাগোবাপ-দাদাগোআমলের পেশা। যতদিনজমিখিলা (পতিত ) পামুততদিনআমরাতরকারীচাষকরুম। ফেরচাইতএলাকারশিমচাষীহুমায়ুন, সিরাজ ও সুরুজ। তারাতিনভাই। প্রত্যেকে ৩ থেকে ৪ বিঘিাজমিতেশিমচাষকরেন।

এবারতাদেরশিমেরফলনভালহয়েছে। তারাবলেন, এক মণশিমপাইকাররা এক হাজারটাকায়কিনে নেয়। আমরাপ্রত্যেকভাই ৫শ’ থেকে ৭শ’ মণশিমবিক্রি করি। সংসারখরচাচালিয়েওভাললাভআহে। গুচ্ছগ্রামেরজালাল, হেলু, মিয়াসহকয়েকজনশিমচাষীবলেন, এহানকারশিমেরচাহিদাঅনেক। খাইতে স্বাদ হওয়ায়পাইকরা এই শিমকিনানিয়ালাভকরবারপারে। উপজেলা কৃষিঅফিসারকায়ছুননাহারহাওলাদারবলেন, রূপগঞ্জেরপূর্বাচলেশীমেরবাম্পারফলনহয়।

আপনি আরও পড়তে পারেন