গতিশীল শিক্ষায় নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট প্রয়োজন

গতিশীল শিক্ষায় নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট প্রয়োজন

করোনা আমাদের জন্য অভিশাপ হলেও নতুন করে আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। গতানুগতিক যে ধারায় আমরা শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে আসছি, তা যে পুরোপুরি সাফল্যের পাখা মেলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই করোনাকালে সবাই হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। যেকোনো পরিস্থিতিতে শিক্ষাব্যবস্থাকে গতিশীল রাখতে ও আধুনিক এই বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সারাদেশকে ইন্টারনেট সংযোগের আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। এমনটি বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (আইবিজিই) প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. তোফাজ্জল ইসলাম। করোনা পরবর্তী শিক্ষাব্যবস্থা ও অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রমের বাস্তবতা ও প্রতিবন্ধকতা নিয়ে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল মান্নান।

করোনার পরবর্তী শিক্ষাঙ্গন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেমন পরিবর্তন আসতে পারে বলে আপনার মনে হয়?

বিশ্ব আজ করোনা মহামারিতে আক্রান্ত। বাংলাদেশেও এই করোনার মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অন্য সেক্টরগুলো চলমান থাকলেও শিক্ষা ও গবেষণা খাতগুলো থমকে আছে। গত মার্চ মাস থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও গবেষণা ল্যাবগুলো শিক্ষার্থীশূন্য হয়ে আছে। যদি করোনাকাল দীর্ঘকাল চলমান থাকে, তাহলে সময়ের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে। সেইসঙ্গে প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইন ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করতে হবে। এছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই। তাই ডিজিটাল এই সময়ে সবাইকে আরও বেশি ডিজিটালাইজড হতে হবে।

অনলাইন শিক্ষা ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কি না?

করোনার কারণে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যাহত হয়েছে সত্য, তবে নতুন অনেক কিছু করারও সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। এ কারণে আমরা অনলাইন জগতে প্রবেশ করতে শিখেছি। আজ থেকে ২৫ বছর পূর্বে আমি ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়ার বিষয়ে দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় একটি কলাম লিখেছিলাম, যার প্রতিফল এখন দেখতে পারছি। এ বছর ডিজিটাল বাংলাদেশ উদযাপন করতে যাচ্ছি, কিন্তু এখনো আমরা অনলাইন মাধ্যমে ক্লাস-পরীক্ষা নিতে ইতস্তত বোধ করছি। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চাইলে ডিজিটাল অবকাঠামো করার উদ্যোগ নিতে পারতো। 

বর্তমান পরিস্থিতি থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। পরিস্থিতি সবসময় যে স্বাভাবিক থাকবে এই রকম ধ্যান-ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এজন্য এখনি সারাদেশেকে ওয়াইফাইয়ের আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রমে নেটওয়ার্কিং যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে, তা অনেকাংশেই কমে যাবে।

অনলাইনে ক্লাস হলেও অনলাইনে পরীক্ষা হচ্ছে না। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

আমেরিকা, ইউরোপের দেশসহ বিশ্বের বহু খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় অনেক আগে থেকেই পূর্ণাঙ্গ অনলাইন ব্যবস্থা সফলতার সঙ্গে ব্যবহার করে আসছে। বাংলাদেশেও অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রক্রিয়ার অধিকাংশ কার্যক্রম অনলাইনে করে থাকে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এ ব্যাপারে অভিজ্ঞতা খুব কম থাকলেও করোনার কারণে তা আয়ত্ব করতে হয়েছে। 

বর্তমানে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে কম-বেশি অনলাইন পাঠদান চলছে। অনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া শুরু করতে পারলে দীর্ঘ এই সময়টা শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা করতে হতো না। ফলে শিক্ষাকার্যক্রমে যেমন গতিশীলতা বাড়তো, তেমনি সৃজনশীলতাও বাড়তো। পাশাপাশি সরকারকে সারাদেশে ইন্টারনেট/ওয়াই-ফাই সংযোগ চালুর উদ্যোগ নিতে হবে।

শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাংকিং বাড়াতে কী করণীয় আছে বলে আপনি মনে করেন?

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ গবেষণা করা। মৌলিক গবেষণার মাধ্যমে জ্ঞান সৃজন করা। আমাদের সোসাইটি কী চায়, সেটার পরিপ্রেক্ষিতে নিড বেসড গবেষণা করতে হবে ও আমাদের উদ্ভাবিত সেই প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। অন্যথায় সেই প্রযুক্তি বা জ্ঞানের কোনো মূল্য থাকবে না। যারা কাজ করবে, তাদের মূল্যায়ন করতে হবে। তাদের লিডারশিপে নিয়ে আসতে হবে। তাহলে যারা এই লাইনে কাজ করেন, তারা আরও বেশি নিজের কাজের প্রতি, দায়িত্বের প্রতি মননশীল হতে পারবে।

আমি মনে করি, আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে সেই সামর্থ্য রয়েছে। যারা দেশের বাইরে বিভিন্ন নামকরা সংস্থায় গবেষণা করেন, তাদের নিয়ে আসতে হবে ও প্রয়োজনে ওয়ান থাউজেন্ড ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন