রোহিঙ্গা নিয়ে বড় হুমকির মূখে বাংলাদেশ

রোহিঙ্গা নিয়ে বড় হুমকির মূখে বাংলাদেশ

মোঃ সাইফুল ইসলাম

বাংলাদেশ সম্ভবনায়ী দেশ সমূহের মধ্যে একটি। যে দেশটি স্বাভাবিক ভাবে  এগিয়ে যেতে পাবে অনেক দূর। কিন্তু বাংলাদেশকে  শরণার্থী, অভিবাসন ও বাস্তুচ্যুতির এ জাতীয়  নতুন  সমস্যার মূখোমূখি  হতে হয়েছে। এ জাতীয় সমস্যাগুলির মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে বাংলাদেশের উত্থান শরণার্থী ইস্যু এবং উদ্বেগের সাক্ষ্য বহন করে। ১৯৭৮ সাল থেতে ২০২১ সালের মধ্যে বিভিন্ন কিস্তিতে মিয়েনমার সরকার দ্বারা বিতাড়িত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় চালান ছিল নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে  বাংলাদেশ মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দ্বারা নিপীড়নের কারণে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা এক মিলিয়ন এবং ২০১৭  সালের ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা। বাংলাদেশের বিভিন্ন  সমীক্ষায় তারা  বিভিন্ন অপরাধে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জড়িত থাকার বিষয়ে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি পরীক্ষা করা হয়েছে।

ভূমিকাঃ

 ১৯৭৮ সাল থেকে বার্মিজ সামরিক জান্তা পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গাদের বার্মা থেকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা শুরু করে এবং ১৯৯২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বার্মার পররাষ্ট্র মন্ত্রী সদম্ভে ঘোষণা দেন যে, মায়ানমারে রোহিঙ্গা বলে কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই, আর কোন কালেও ছিল না! ১৯৪৮ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত বার্মায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী উনু রোহিঙ্গাদের রোহিঙ্গা বলেই ডাকতেন। ১৯৮২ সালে তাদের বার্মিজ নাগরিকত্বের অধিকার রাষ্ট্রীয়ভাবেই হরণ করা হয়। সাধারণ বার্মিজদের দেয়া হয় লাল পরিচয়পত্র আর রোহিঙ্গাদের দেয়া হয় সাদা পরিচয়পত্র, যার মানে রোহিঙ্গারা সাধারণ বার্মিজ নাগরিক নয়, বরং বহিরাগত।

 এর ফলে সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়ার ও বার্মিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা লাভের কোনো অধিকারই থাকল না তাদের এবং দেশের ভেতরও আরাকান ও রাখাইন বাদে অন্যান্য এলাকায় অবাধে ভ্রমণের অনুমতি হারাল তারা। সামরিক জান্তা নিজ দেশে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিপীড়নের বৈধতা পেতে থেরাভেদা বৌদ্ধ উগ্রবাদীদের উস্কে দিল ইসলাম বনাম বৌদ্ধ ধর্মের দোহাই দিয়ে। একইসাথে অভিবাসী আইনের আওতায় তাদের উপর ততমাদো এবং বৌদ্ধ উগ্রবাদীদের নির্যাতন পেল বৈধতা!

১৯৯১-৯২ সালের শুরুতে, বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছিল এবং তাদের সমন্বিত করার জন্য যথেষ্ট প্রচেষ্টা করেছিল। জিওবির তত্ত্বাবধানে এবং ইউএনএইচসিআর দ্বারা অর্থায়নে, প্রায় ২0০,০০০ রোহিঙ্গাদের থাকার জন্য কক্সবাজার ও বান্দরবানে দুটি শিবির  হয়েছিল (কুতুপালং এবং নয়াপাড়া)  যার মধ্যে ২১ টি শিবির স্থাপন করা হয়েছিল। বর্তমানে কেবল যেখানে নিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের ২২৭,০০০ থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। দুটি শিবিরে  ৮২৬ টি শেড রয়েছে যেখানে ৪,৯৯৬ টি পরিবার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে ।  সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কুতুপালং শিবিরে ৮২১৬ শরণার্থী এবং নয়াপাড়া ১৩,৪০৫  আবাসিক ছিল। প্রকৃতির বসবাসের জায়গার আকারের সাথে জনসংখ্যার পরিমাণ স্বাস্থ্য পরিস্থিতি, জল এবং স্যানিটেশন এবং আবাসন সহ অনেক বিষয় উদ্বেগের কারণ। রোহিঙ্গা প্রবাহ এখনও থামেনি এবং এটি বাংলাদেশের জন্য প্রধান সমস্যা।

ইতোমধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত সংখ্যালঘু ও চরম নিগৃহীত সম্প্রদায় হিসেবে রোহিঙ্গাদের কে আখ্যা দেয়া হয়েছে। ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের উপর চলা গণহত্যাকে জাতিগত নির্মূল (Ethnic cleansing) বলে স্বীকৃতি দেয়। রোহিঙ্গারা বারবার মিয়ানমারের সেনাদের নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আসলেও মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ও স্থানীয় বৌদ্ধ মিলিশিয়ারা ২৫ আগস্ট ২০১৭ থেকে ‘clearance operations’ বা ‘ছাড়পত্র কার্যক্রম’ শুরু করলে ওই বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে হত্যা, ধর্ষণ নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাভাষী এই মুসলিম জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বড় সংখ্যায়, প্রায় জরিপ মতে সাড়ে সাত লাখ বাস্তবে প্রায় এগার লক্ষ রোহিঙ্গা  বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। রোহিঙ্গাদের প্রজন্ম স্বক্ষমতা ও ইতিবাচক মনোভাবের কারণে বিতাড়িত প্রায় এগার লক্ষ রোহিঙ্গা থেকে  প্রতিদিন নতুন নতুন রোহিঙ্গার মূখ দেখা যাচ্ছে।  

 এই বিষয়ে আইসিজে ২০২০ এর জানুয়ারিতে তার অন্তর্বর্তীকালীন রায় প্রদান করে মিয়ানমারের নেতৃত্বকে গণহত্যা প্রতিরোধের আইনি দায়বদ্ধতার প্রতি সম্মান জানাতে এবং রোহিঙ্গাদের হত্যা, নির্যাতন বন্ধে ‘তার ক্ষমতার মধ্যে যতটুকু সম্ভব ব্যবস্থা গ্রহণ’ করার আদেশ দেয়। আদালত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে অপরাধের প্রমাণ নষ্ট না করার এবং এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করারও নির্দেশ দেন। আদালত তার ফলাফল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাঠানোর কথা ছিল।

কিন্তু বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্ট অনুসারে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা এখনও হত্যা থামায়নি। স্যাটেলাইটের চিত্রে দেখা যাচ্ছে যে সামরিক বাহিনী তিন বছর আগে রোহিঙ্গা গ্রাম কানকায়ার ধ্বংসাবশেষে বুলডোজার চালিয়েছে এবং এর নাম এবং অন্যান্য ধ্বংসপ্রাপ্ত গ্রামের নামগুলো সরকারি মানচিত্র থেকে মুছে ফেলেছে। মিয়ানমার সরকার আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেনি বা গণহত্যা বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য তদন্তও চালায়নি।

গার্ডিয়ান জানিয়েছে গতমাসে ব্রিটেনের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে আইসিজে-র দাবি মেনে চলা, তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন, মানবিক কাজে প্রবেশাধিকারের অনুমতি এবং রোহিঙ্গা ভোটারদের নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব আনা হয়েছিল। নিরাপত্তা পরিষদের আটজন সদস্য এর পক্ষে ভোট দিলেও চীন এতে ভেটো প্রদান করে প্রস্তাবটি আটকিয়ে দেয়।

 পক্ষান্তরে পর্যবেক্ষকরা অভিযোগ করেছেন যে উদ্বাস্তুদের জন্য কাজ করা এনজিও এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নয়, কক্সবাজারে থাকার জন্য উদ্বুদ্ধ করছে। ভাসানচর একটি প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় এনজিও কর্মকর্তারা সেখানে যেতে চান না। অন্যদিকে কক্সবাজার ক্যাম্পে স্থান সংকুলান এবং পরিবেশ বিপর্যয়সহ নানা সামাজিক সমস্যা রয়েছে, তাই রোহিঙ্গাদের

আপনি আরও পড়তে পারেন