সেই প্রতিবন্ধী সুইটির পাশে বিমান বাহিনীর সার্জেন্ট সামিউল ইসলাম

সেই প্রতিবন্ধী সুইটির পাশে বিমান বাহিনীর সার্জেন্ট সামিউল ইসলাম

জিহাদ হক্কানী :

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনের ডি আর কঙ্গোতে কর্মরত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সার্জেন্ট মো. সামিউল ইসলাম সরকারের সহযোগিতায় হুইল চেয়ার পেয়েছে কষ্টে থাকা প্রতিবন্ধী সুইটি আকতার। সাম্প্রতিক সময়ে একটি হুইল চেয়ারের অভাবে কষ্টে আছে সুইটি “শিরোনামে জাতীয় পত্রিকাসহ বিভিন্ন অনলাইন গণমাধ্যমে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এমন সংবাদে ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয় । প্রতিবন্ধী সুইটির একটি হুইল চেয়ার কিনে দেয়ার জন্য একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসহ দেশ বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিবেদকের সঙ্গে যোগোযোগ করেন।

এদিকে ৬ হাজার ৯২৫ কিলোমিটার দুরে থেকেও খবরটি নজরে আসে গাইবান্ধা জেলার সদর উপজেলার চকমামরুসপুর গ্রামের সদরুল ইসলামের ছেলে সামিউল ইসলামের। সামিউল ইসলাম বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে কর্মরত রয়েছেন। জাতিসসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে বর্তমান কঙ্গোতে কর্মরত রয়েছেন। নজরে আসা খবরটি পড়ে একটি হুইল চেয়ার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পরে তিনি তার ভাই সাইফুল ইসলামের মাধ্যমে প্রতিবেদকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

রবিবার(৭ জানুয়ারি) সকালে  প্রতিবেদক রফিক ও সাইফুল ইসলাম এবং প্রতিবন্ধী সুইটির বাবা সলেমান প্রামানিকের উপস্থিতিতে প্রতিবন্ধী সুইটিকে একটি হুইল চেয়ারটি দেওয়া হয়। 
জানা যায়,গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের গিয়ে রাস্তার পাশে উঠানে দেখা মিলল শারীরিক প্রতিবন্ধী সুইটির। ছোট শিশু সুইটির পা থেকেও নেই। দুটি হাতের আঙ্গুলের উপর ভর করে মাটি ঘেঁষে চলাচল করছে। শীতের এই তীব্রতায় মোজা বা জুতা ছাড়া চলাচলের করছে। প্রতিবন্ধী সুইটির বড় সমস্যা হল তার একটি হুইল চেয়ার নেই। সুইটি মিনি মিনি কন্ঠে বলল তার একটি হুইল চেয়ার প্রয়োজন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়,পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের সুলতানপুর বাড়াইপাড়া(ডিগিপাড়া) গ্রামের সলেমান প্রামানিকের মেয়ে সুইটি আকতার। জন্ম থেকেই সুইটি শারীরিক প্রতিবন্ধী। দুইটি পা -ই তার নষ্ট। পা দুটি দিয়ে কোনো ভাবেই হাটা চলা করতে পারে না। পায়ের অধিকাংশই বাঁকা ও মোড়ানো । হুইল চেয়ার না থাকায় হাতের আঙ্গুলের উপর ভর করে মাটি ঘেঁষে যায় সে। চলাচল করতে খুব কষ্ট হয় তার। ঘেঁষে চলাচল করে হাতে পায়ে ফোসকা পড়েছে। হতাশা চোখমুখে নিয়ে বলল ছবি তুলেন কেন ? আগে কত বার ছবি উঠেছে একটা হুইল চেয়ার পাইনি। হুইল চেয়ার হলে কিছুটা স্বাভাবিক চলাচল করতে পারতাম। আমার একটি হুইল চেয়ার দিবেন ? 
প্রতিবেশী জব্বার মিয়া বলেন, সুইটি আকতার গরীব পরিবারের মেয়ে। এই শীতের মধ্যে খালি মাটিতে চলাফেরা করে। ওর দিকে তালাকে খুব কষ্ট লাগে। কত কষ্ট করে চলাচল করে সুইটি।তার একটি হুইল চেয়ার দরকার।

সুইটির মা মনিরাজ বেগম বলেন, বাড়িভিটা ছাড়া কোনো জমি নাই।  বাড়িতে ছোট একটি দোকান। যা আয় হয় তা দিয়ে পেটের ভাত জোটে না। কিভাবে হুইল চেয়ার কিনে দেই?
হুইল চেয়ার পেয়ে সুইটির বাবা সলেমান প্রামানিক আনন্দে কেঁদে ফেলেন এবং বলেন সাধ্যমতে সুইটির জন্য একটি হুইল চেয়ার কিনে দেয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু পারিনি। এখন থেকে মেয়েটার কষ্ট কমল। কঙ্গোতে মিশনে থাকা সামিউল ইসলাম জন্য দীর্ঘায়ু কামনা করেন। 

এদিকে হুইল চেয়ার পেয়ে আনন্দ আর খুশিতে সুইটি চিৎকার করছিল। চোখমুখে ফুটে উঠে এক বিশ্বজয়ের হাসি। সুইটির স্ফিত হাসি গোটা গাইবান্ধা জেলাকে যেন আলোকিত করেছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন