“মেরুদণ্ডের দণ্ড প্রসঙ্গ শিক্ষা”

"মেরুদণ্ডের দণ্ড প্রসঙ্গ শিক্ষা"

শামছুল আলম সাদ্দাম।

“নচিকেতার একটা প্রতিবাদী গানের লাইন ছিলো এমন ‘আজকে যিনি কয়লা মন্ত্রী কালকে দেখেন শিক্ষা তাই কয়না কালো শিক্ষা নিয়ে মানুষ করে ভিক্ষা’শিক্ষার উদ্দেশ্য ভিক্ষা থেকে বাঁচা কিনা তা নিয়ে নচিকেতা সাথে আমার বিরোধ আছে। একটি জাতির শিক্ষা অতিব জরুরী।

শিক্ষা মানুষকে বিকশিত করবে আর জ্ঞান অর্জন করতে সাহায্য করবে। তবে আমরা পড়ি একটা ভালো চাকরির জন্য। ছোট বেলা আমাদের শিশু মনে দেওয়া হয়েছে লেখা পড়া করে যে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে।

অ অজগর আসছে তেড়ে। শিশু মনে ভয় কিম্বা তিন কেজি দুধে এক কেজি পানি মেশানোর গনিত। তার উপর একই দেশে ইংরেজি মাধ্যম, সাধারণ পাঠ্যক্রম, মাদ্রাসার দুই প্রকারের শিক্ষা। শিক্ষা যদি জাতির মেরুদণ্ড হয় তাহলে চার প্রকার মেরুদণ্ডের মনুষ্য প্রাণী হচ্ছি আমরা। 

তবে আশার কথা হল শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সব শ্রেণিতে একমুখী শিক্ষা চালু করতে যাচ্ছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যক্রম বোর্ড এনসিটিবি নতুন সিলেবাস প্রণয়ন, বইয়ের অবকাঠামো তৈরি ও শিক্ষা সংস্কার নিয়ে কাজ করছে।

বর্তমানে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত একমুখী শিক্ষা চালু আছে। তবে সব শ্রেণির ছাত্রছাত্রীর ১৪টি বই পড়ানো হয়। অথচ যখন পঞ্চম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী ৬টি বই পড়ে সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়, তখন তাকে ১৪টি বই পড়তে গিয়ে হাবুডুবু খেতে হয়। \

তারপর বিজ্ঞানের বইয়ে প্রাণিবিজ্ঞান অংশের জটিল শব্দগুলো এদেরকে আরও ভীতিকর অবস্থায় ঠেলে দিচ্ছে।আশার কথা, নতুন সিলেবাস অনুযায়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সব শ্রেণির ছাত্রছাত্রীকে ১০টি বই পড়তে হবে। বইগুলো প্রাঞ্জল ভাষায় রঙিন ছবির মাধ্যমে স্পষ্ট অক্ষরে প্রকাশিত হলে শিশু-কিশোরদের পড়ার প্রতি আকর্ষণ বাড়বে। আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলের প্রায় সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই ইংরেজি বিষয়ে দুর্বল।

তাই ইংরেজি বিষয়ের সিলেবাস এমনভাবে প্রণয়ন করা উচিত, যাতে শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীর পঠন-লিখনের মান আরও উন্নত করতে পারেন।  বাংলাদেশে ১৯৬২ সালের আগে একই ধারার শিক্ষাব্যবস্থা চালু ছিল। তখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক স্তরে নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, কলা ও বাণিজ্য বিভাগে বিভক্ত করে শিক্ষার্থীদের পছন্দ অনুযায়ী তিন ধারার শিক্ষাব্যবস্থা চালু করে।

এ ধরনের শিক্ষার সিলেবাস অনুযায়ী নবম শ্রেণির কোর্স সমাপ্তিতে ছাত্রছাত্রীর ৬টি বিষয়ের পরীক্ষা শিক্ষা বোর্ড গ্রহণ করে। ১৯৬৩ সালে দশম শ্রেণির কোর্স সমাপ্তিতে অবশিষ্ট বিষয়ের পরীক্ষা বোর্ড গ্রহণ করে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে। ১৯৬৪ সাল থেকে সব বিষয়ের (নবম ও দশম শ্রেণিতে পঠিত) পরীক্ষা একসঙ্গে গ্রহণ করে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রদান করা হয়। অদ্যাবধি সে পদ্ধতিই চালু আছে। তবে সিলেবাসের নানা পরিবর্তন-পরিমার্জন হয়েছে।


১৯৮৩ সালে রসায়ন ও পদার্থ একত্র করে ভৌতবিজ্ঞান এবং জীববিজ্ঞান নামে বিজ্ঞান বিভাগে দুটি বিষয় চালু করা হয়। কলা ও বাণিজ্য বিভাগে পূর্বের মতোই সাধারণ বিজ্ঞান আবশ্যিক রাখা হয়।

এ ধারা পরিবর্তন করে ১৯৯৬ সালে তৎকালীন সরকার বিজ্ঞান-মানবিক (কলা বিভাগ) ও বাণিজ্য বিভাগের জন্য ৭০০ নম্বরের আবশ্যিক বিষয় নির্ধারণ করে দেয়। এ বছর থেকে বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রী পূর্বের মতো রসায়ন, পদার্থ ও জীববিজ্ঞান পড়তে বাধ্য হয় এবং উচ্চতর গণিতকে ঐচ্ছিক রাখা হয়। বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রছাত্রী বাণিজ্যনীতি, হিসাববিজ্ঞান ও হিসাবরক্ষণ বা বাণিজ্যিক ভূগোল পড়ে। মানবিক বিভাগের ছাত্রছাত্রী ইতিহাস, পৌরনীতি, অর্থনীতি পড়ে।

পরবর্তীকালে বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রী জীববিজ্ঞানের বদলে গণিত বিষয় নিয়ে জীববিজ্ঞান ঐচ্ছিক পড়তে সুযোগ পায়। এ ছাড়া মাধ্যমিকের প্রত্যেক শ্রেণিতে বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়টিও চালু রয়েছে।শিক্ষার এ ধারাকে বদলে দিয়ে এনসিটিবি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে সব শ্রেণিতে একমুখী শিক্ষা চালু করতে যাচ্ছে।

অর্থাৎ পর্যায়ক্রমে আগামীতে নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্য বিভাগ বলে কোনো বিভাজন থাকবে না। সব শ্রেণির ছাত্রছাত্রী ১০টি অভিন্ন বই নিয়ে পড়াশোনা করবে। বিষয়গুলো হলো- ইংরেজি, বাংলা, গণিত, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ধর্ম, স্বাস্থ্য, জীবন-জীবিকা এবং শিক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতি।


এ ধরনের পাঠ্যবই ও সিলেবাসে বিজ্ঞান বিষয়গুলো কি সংকুচিত হয়ে যাবে! বই কমানোকে সাধুবাদ জানাই। তবে দশম শ্রেণির সমাপ্তিতে ছাত্রছাত্রী যখন একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হবে, তখন সে সিলেবাসের সঙ্গে ধারাবাহিকতা কতটুকু থাকবে- এটাও ভাবতে হবে। একমুখী শিক্ষা চালুর আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জনবল কাঠামোও পুনর্বিন্যাস করতে হবে।

আমরা একমুখী শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষা সংস্কার চাই। তবে তা হতে হবে যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত। না হলে আমরা একটি বিভক্ত জাতিতে পরিনত হবো। শিক্ষা জাতীয় মেরুদণ্ড কিন্তু তার দণ্ড যদি ঠিক না হয় তাহলে তো সমস্যা।শিশু ও কিশোর বয়সের বিকাশের সুযোগ থাকতে হবে। দেশপ্রেম, ধর্মিয় মুল্যবোধ, সৃজনশীলতা ও মুক্তচিন্তার বিকাশ থাকবে হবে। আমরা অযাচিত ভাবে কোন সম্প্রদায়ের ভয়ে হুমায়ুন আজাদের মত প্রগতিশীল লেখকদের লেখার সম্পদনা করছি।

নজরুলের কবিতা সংক্ষিপ্ত করছি। এমন করনে সৃজনশীলতার বহুমাত্রিক রূপ তার রং হারাবে। মানুষ হবার মন্ত্রটি ফিকে হয়ে যাবে শিক্ষা হবে চাকুরী পারব সহায়ক গাইড। তাই মেরুদণ্ডের দণ্ড ঠিক করতে একমুখী ও সৃজনশীল শিক্ষা দরকার।”

লেখক-সামছুল আলম সাদ্দামলেখক ও রাজনীতিবিদ।
সহ সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগঢাকা মহানগর উত্তর।

আপনি আরও পড়তে পারেন