সম্ভাবনাময় কালো বিন্নি চাল

সম্ভাবনাময় কালো বিন্নি চাল

চীনে চতুর্দশ শতক থেকে সপ্তদশ শতকে মিং যুগে কালো বিন্নি চাল চালের চাষ হতো। কিন্তু রাজা বা রাজ পরিবার ছাড়া কারো কালো চালের ভাত খাওয়ার অধিকার ছিল না। প্রজাদের জন্য এই চাল নিষিদ্ধ ছিল বলে এই চালকে বলা হয় ‘নিষিদ্ধ চাল’ বা ‘ফরবিডেন রাইস’।

থাইল্যান্ডে এই চালকে বলা হয় ‘কাও নাইও ডাহম’। ইংরেজিতে একে মানুষ বিভিন্ন নামে চেনে। যেমন;  ‘Black Sweet Rice’, ‘Black Glutinous Rice’ও ‘Indonesian Rice’। পার্বত্য এলাকায় এই চালকে বলা হয় পোড়া বিন্নি চাল। পরবর্তীতে জাপান ও মায়ানমারে এই চালের চাষ শুরু হয়। সেখান থেকে এই চাল চলে আসে বাংলাদেশে। তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার চট্টগ্রামে এটি চাষ হতো বলে জানা যায়। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকার পাহাড়ে জুমে এই চাষ অব্যাহত আছে।

বিন্নি চালের বিভিন্ন জাত-
পার্বত্য এলাকার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের কাছে এই চাল বিলাসী খাদ্য বা দামি চাল হিসেবে পরিচিত। চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তংচংগা সম্প্রদায়ের লোকজন এই চাল বেশি খায়। তাদের কাছে এই চাল ‘পোড়া বিন্নি’ নামেও পরিচিত।  পাহাড়ি এলাকার স্থানীয় জাতের মধ্যে বিন্নি আদি ধান।বর্তমানে বিন্নি চালের রঙ অনুসারে কালো, লাল ও সাদা তিন ধরনই পরিচিত। এরপরেও রয়েছে চন্দন, গেং গেং, মৌ, দুধ, রাঙা, আসানিয়া, ছৎ ছৎ, বিজাবিরাং, কুৎচিয়া, আগুনিয়া, কাককুয়া, চিচাও, লেদার, লোবা, কবা, কাশিয়া, হরিন, লক্ষী, দরিমা, গারো বিন্নি ইত্যাদি।

কালো বিন্নি চালের উপকারিতা-
কালো বিন্নি চালের উপকারিতা প্রচুর। ‘এন্টিঅক্রিডেন্ট ফ্লাভিনয়েড’ বা ‘এনথোসায়ানিন’ এটি কালো চালে খুব বেশি পরিমাণে থাকাতে চালের রং কালো হয়। আর এই উপাদানটির কারণে ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্নায়ুরোগ এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিহত করতে সহায়তা করে।

কালো চাল ক্যানসার প্রতিরোধে অনন্য। ধমনীতে রক্ত চলাচল কালো চালের উপাদানের কারণে উচ্চ রক্তচাপ হয় কম। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। এই চালে আয়রন বেশি কিন্তু শর্করা কম।

কালো চালের ভাত অনেক বেশি পুষ্টিযুক্ত ও স্বাস্থ্যকর। এই চালে শর্করার পরিমান সাদা চালের চেয়ে কম। অন্যদিকে আশ ও ভিটামিন বি-এর পরিমানও বেশি। এই চাল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।  এই চালের ভাত খেলে হজম হয় ধীরে, ফলে অনেক সময় ধরে ক্ষুধা লাগে না এবং শরীরকে শক্তি দেয়।

কালো বিন্নি চাল দিয়ে কী করা হয়-
বিভিন্ন উৎসবে বিন্নি চালের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। সমতল এবং পাহাড়ি দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যেই এই চাল দিয়ে বিভিন্ন খাবার তৈরির ঐতিহ্য রয়েছে। সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে বিন্নি চাল পাহাড়ের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিন্নি চালের গুড়া দিয়ে পায়েস, ভাপা পিঠা, মুখশালা, চিতই, ভেজানো পিঠা, পাটিসাপটা, চোক্ষা পিঠা, কলা পিঠা, ক্ষীর ইত্যাদি তৈরি করা যায়। এই চালের পিঠা অন্যান্য চালের পিঠার চেয়ে নরম হয়।

কীভাবে রান্না করতে হয়-
বিন্নি চালের ভাত রান্না করার রয়েছে বিশেষ পদ্ধতি। রান্না করার জন্য কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা এই চাল ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর পানি ঝরিয়ে নিয়ে অল্প পানি দিয়ে রাইস কুকারে পরিমাণমতো লবন এবং কুড়ানো নারিকেল ছড়িয়ে দিয়ে রান্না হবে বিন্নি ভাত। অথবা পানিতে নারিকেল আর লবন দিয়ে ফুটাতে হবে। পানি ফুটতে থাকলে চাল দিয়ে দিলে স্বাভাবিকভাবে আমরা যেভাবে ভাত রান্না করি সেভাবেই হয়ে যায়।এছাড়াও ভাপে দিয়েও ভাত রান্না করা যায় যাকে আমরা বলি স্টিমড রাইস। খেজুরের রস, দুধ চিনি দিয়ে বা মুরগীর মাংস দিয়ে বিন্নি ভাত খেতে বেশ সুস্বাদু।

আপনি আরও পড়তে পারেন