বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেন তিনি

বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেন তিনি

অধ্যাপক ডা. ইফতেখার মাহমুদ। তিনি একজন মানবিক ও জনদরদী মানুষ। করোনাকালীন সময়ের তিনি একজন সম্মুখ সারির যোদ্ধা।

ডা. ইফতেখার মাহমুদ দীর্ঘ কর্মজীবনে পেশাগতভাবে মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন। তিনি কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ ছিলেন। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিলেও তিনি এখনো থেমে নেই। নিয়মিত চিকিৎসাসেবা দানে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। 

বৈশ্বিক করোনা মহামারির মাঝেও তিনি নিবেদিতভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কুষ্টিয়া জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। এর পাশাপাশি নিজের মরহুম বাবা-মায়ের নামে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান ‘ইয়াসিন-মাহমুদা স্মৃতি পরিষদ’-এর উদ্যোগে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা চালু রেখেছেন। 

বিশেষায়িত চিকিৎসকদের সমন্বয়ে নিয়মিত মেডিক্যাল ক্যাম্পের পাশাপাশি শীতকালে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে নগদ অর্থ দান, মেধাবী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় উৎসাহ প্রদানে বৃত্তি ও কৃতি শিক্ষাথীদের সংবর্ধনা প্রদান, হতদরিদ্র মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্যসামগ্রী ও নগদ টাকা পৌঁছানো, টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে কুষ্টিয়ার মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলার মানুষের মাঝে জায়গা করে নিয়েছেন।

এবিষয়ে হালসার বাসিন্দা মিলন আলী বলেন, ‘করোনাকালীন সময়ে বিগত এক বছরে ইয়াসিন-মাহমুদা স্মৃতি পরিষদের আয়োজনে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তিনি। তার মধ্যে ২০২০ সালের ১৩ মার্চ মিরপুর উপজেলার বহলবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে করোনাকালীন চিকিৎসাসেবা প্রদানের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু হয়।’ 

এবিষয়ে আরেকজন বাসিন্দা আ.ফ.ম নুরুল কাদের বলেন, ‘করোনাকালীন ২০২০ সালে রমজান মাসে ইয়াসিন মাহমুদা স্মৃতি পরিষদের সভাপতি প্রফেসর ডা. ইফতেখার মাহমুদের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবকেরা মিরপুর উপজেলার হালসা, আমবাড়িয়া, মালিহাট, ইশালমারী, কুর্শা, পুটিমারী, ভেদামারী, আসাননগর, আবুরি, হাজরাহাটি, পোড়াদহ, সাহেবনগর, বহলবাড়িয়া, ভেড়ামারা উপজেলার সাতবাড়িয়া, বাহাদুরপুর, ভেড়ামারা মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদানের পাশাপাশি খাদ্যসামগ্রী ও নগদ অর্থ প্রদান করা হয়।’ 

‘করোনাকালীন সময়ে প্রতিবন্ধীদের মাঝে শীতবস্ত্র ও হুইল চেয়ার বিতরণ। ২০২০ সালের ১৫ আগস্ট মিরপুরের সাহেবনগরে একটি হুহুল চেয়ার দেন। ২০২১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি হাজরাহাটি গ্রামের মানিকের অসুস্থ শিশু মীমকে একটি, ১৫ মার্চ খাদিমপুরের জাহাঙ্গীরের ছেলে নিসাদকে একটি, এই মাসের ৩ এপ্রিল কেউপুর গ্রামের আনোয়ার আলীর প্রতিবন্ধী ছেলে আসিফকে একটি ও ১০ এপ্রিল সর্বশেষ অঞ্চনগাছি গ্রামের বৃদ্ধ জামাত আলীকে দেওয়া হয় একটি হুইল চেয়ার। এই হুইল চেয়ারগুলো পেয়ে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচলের একটি নিশ্চয়তা পেয়েছেন।

এবিষয়ে অধ্যাপক ডা. ইফতেখার মাহমুদ বলেন, ‘অবসর গ্রহণের পর থেকে মানবিকভাবে কাজ করার সুযোগ ঘটে এবং অফুরন্ত সময় থাকায় সমাজের অবহেলিত মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদানের মাধ্যমে নিজেকে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে খানিকটা হলেও মুক্ত করতে পেরেছি বলে মনে করি। বাবা-মায়ের স্মৃতি রক্ষায় পারিবারিকভাবে গড়ে তোলা ‘ইয়াসিন-মাহমুদা স্মৃতি পরিষদ’-এর মাধ্যমে সেই কাজটি আরও বড় পরিসরে করার সুযোগ কাজে লাগাচ্ছি। আজীবন করে যাবো।’

আপনি আরও পড়তে পারেন