আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়াসহ পুরো বিশ্বকে অস্থিতিশীল করতে পারে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে। দেশটিতে চলমান পরিস্থিতির ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছে ঢাকা। তবে আফগানিস্তান নিয়ে বাংলাদেশের শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ দেখছেন না পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
রোববার (১১ জুলাই) আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে ড. মোমেন বলেন, আফগানিস্তান নিয়ে আমরা অত শঙ্কিত নই। আফগানিস্তান নিয়ে পাকিস্তান বা ইরান, এরা শঙ্কিত থাকার কথা, বিশেষ করে উজবেকিস্তান। আমাদের অত শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে আমরা বিষয়টির ওপর নজর রাখছি।
আফগানিস্তান থেকে আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশের সৈন্যরা চলে যাচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলোর সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তুতি যখন একেবারে শেষ পর্যায়ে, তখন দেশটিতে তালেবানের হামলা বেড়েছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে বড় ধরনের অভিযান শুরু করেছে সশস্ত্র সংগঠনটি।
অভিযানে সরকারি সেনাদের কাছ থেকে বেশকিছু এলাকার দখল নিয়েছে তালেবান। বিভিন্ন এলাকায় তুমুল লড়াই চলছে সরকারি বাহিনী ও তালেবান যোদ্ধাদের মধ্যে। এ প্রেক্ষাপটে দেশটিতে বর্তমানে যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের দূতাবাস বন্ধ করে কূটনীতিকরা কাবুল ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতিতে রয়েছেন। অনেক দেশ তাদের কূটনীতিকদের স্বদেশে ফিরিয়ে নিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক), অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসির) সদস্য দেশ ছাড়াও প্রতিবেশী হিসেবে আফগানিস্তানের অস্থির পরিস্থিতির ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছে বাংলাদেশ। কাবুলে ঢাকার কোনো দূতাবাস না থাকায় দেশটির সীমান্ত লাগোয়া উজবেকিস্তানের তাসখন্দের বাংলাদেশ দূতাবাসকে দেশটির পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, আমরা আফগানিস্তানের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। আমাদের উজবেকিস্তানের দূতাবাসকে দেশটির পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই, দেশটিতে চলমান অস্থিরতা কেটে যাক। কারণ দেশটির অস্থিরতা এর নিকট প্রতিবেশী ছাড়াও পুরো অঞ্চলের জন্য সুখকর হবে না।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে হামলা চালিয়েছিল আল-কায়েদা। সেই হামলার জেরে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ২০ বছর অবস্থান করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটোর সামরিক বাহিনী। এ বছরের এপ্রিলের মাঝামাঝি আফগান যুদ্ধ অবসানের জন্য বাইডেন প্রথম আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। তখন বাইডেন বলেছিলেন, চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বরের আগেই শেষ মার্কিন সেনা আফগানিস্তান ছেড়ে আসবেন। তার মধ্য দিয়ে দুই দশকের আফগান যুদ্ধের অবসান ঘটবে।
এরইমধ্যে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন জানিয়েছে, আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের কাজ ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা দেন, আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক মিশন আগামী ৩১ আগস্ট শেষ হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেনা সরিয়ে নেওয়া শুরুর পর থেকে তালেবানরা বিভিন্ন এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়া শুরু করে। শুক্রবার (৯ জুলাই) সশস্ত্র গোষ্ঠী দাবি করে, তারা আফগানিস্তানের ৮৫ শতাংশ এলাকা দখলে নিয়েছে। দেশটির ৪০০ জেলার মধ্যে ২৫০টিই তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, তালেবান কর্তৃক আফগানিস্তান দখল হয়ে গেলে এ অঞ্চলে জঙ্গিবাদ বাড়ার আশঙ্কা আছে। এতে এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে। যা শুধু বাংলাদেশকে নয়, এ অঞ্চলের অন্য রাষ্ট্রগুলোকে কিছুটা শঙ্কিত করছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, যে সংগঠনটি আফগানিস্তান দখল করছে, সেটি হচ্ছে তালেবান। এটি একটি জঙ্গি সংগঠন। আফগানিস্তান যদি রাষ্ট্র হিসেবে জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতা পেতে থাকে, তাহলে এ অঞ্চলে জঙ্গিবাদ বাড়ার সম্ভাবনা আছে। এর ফলে, আমাদের এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা নষ্ট হতে পারে। বিষয়টি এ অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোকে কিছুটা হলেও শঙ্কিত করছে।
তিনি বলেন, আমরা যদি অতীতে তালেবানদের কর্মকাণ্ড দেখি, তবে দেখা যাবে তাদের সঙ্গে পাকিস্তানের পৃষ্ঠপোষকতা আছে। জঙ্গিবাদের সঙ্গে সেটি তখন যুক্ত হয়ে যাবে। এ অঞ্চলের ভূ-রাজনীতিকে প্রভাবিত করার জন্য জঙ্গিবাদকে তারা ব্যবহার করবে। সেটিই হচ্ছে শঙ্কার কারণ। আশপাশের প্রতিটি দেশের জন্য শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়াবে এটি।
এদিকে, আগামী ১৫ ও ১৬ জুলাই মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো যোগাযোগ বা কানেক্টিভিটি ইস্যুতে উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে দুদিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বসতে যাচ্ছে। ওই সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, পাকিস্তান এবং ইইউসহ বিশ্বের অন্তত ৪০টি দেশ ও জোটের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা অংশ নেবেন।
দুদিনের সম্মেলনে সমকালীন প্রসঙ্গ হিসেবে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে তাসখন্দ সম্মেলনে আলোচনা হতে পারে।