গণপরিবহন চলবে শুনে ‘মন খারাপ’ রিকশাচালকের

চলমান কঠোর বিধিনিষেধে বন্ধ সব ধরনের যান চলাচল। রাজপথের দখল নিয়েছে রিকশা। জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়ার মানুষের একমাত্র বাহন রিকশা। কাছে কিংবা দূরে যেকোনো যায়গায় নগরবাসীর একমাত্র ভরসা রিকশা। কিন্তু কঠোর বিধিনিষেধের শেষ সময়ে এসেও আক্ষেপ রয়ে গেছে রিকশাচালকদের। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে রিকশাচালকদের সঙ্গে কথা বলে তাই জানা গেল।

শনিবার (৭ আগস্ট) দুপুর ১২টায় কাওরান বাজার সার্ক ফোয়ারার সামনে বেশ কয়েকটি রিকশা যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। রিকশার কাছাকাছি কোনো যাত্রী গেলে কে কার আগে যাত্রী নেবেন সেটা নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। দু’একজনের মধ্যে শুরু হয় বাকবিতণ্ডাও।

উপস্থিত রিকশাচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে শুক্র ও শনিবার সড়কে যাত্রীদের উপস্থিতি কম থাকায় তাদের আয় কম। এ দুদিন যাত্রীর তুলনায় রিকশা বেশি বের হওয়াও অন্যতম কারণ। এছাড়া চুক্তিভিত্তিক বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালকদের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। ফলে রিকশাচালকরা দূরের ভাড়া কম পাচ্ছেন।

সার্ক ফোয়ার সামনে শিকদার আলী নামের এক রিকশাচালক বলেন, ‘লকডাউনের শুরুর দিকে আমাদের আয় বেশি ছিল। এখন আগের মতো নেই। বাস ছাড়া সব গাড়িই রাস্তায় আছে। আগে দূরের ভাড়া পেলেও মানুষ এখন হোন্ডা করেই মানুষ যাচ্ছে। শুক্র ও শনিবার একটু কম মানুষ রাস্তায় বের হয়। তাই আগের মতো ইনকাম নেই।’

চালক শিকদারের সঙ্গে কথা শেষ হতে না হতেই এক যাত্রী মহাখালী যাবে কিনা জানতে চাইলে বেশ কয়েকজন রিকশাচালক তাকে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে রীতিমতো দুই চালক বাকবিতণ্ডায় জড়ান। ভাড়া বনাবনি না হওয়ায় চুক্তিতে এক মোটরসাইকেল নিয়ে গন্তব্যে রওনা করেন।

রাজধানীর পান্থপথ মোড়ে দেখা গেছে, রিকশাচালকরা যাত্রীর অপেক্ষা করছেন। কিন্তু তার তুলনায় যাত্রী কম। আবার চালকরাও ভাড়া বেশি হাঁকছেন। যে চালক সবচেয়ে কম ভাড়ায় যেতে রাজি হচ্ছেন, যাত্রী তার রিকশায় গন্তব্যে যাচ্ছেন।

 

রুহুল আমিন নামের এক যাত্রী বলেন, ‘লকডাউনে রিকশা ভাড়া দিয়ে বেতনের সব টাকা শেষ। বাসে যেখানে ১০ টাকায় যেতাম, এখন সেখানে লাগছে ৫০-৬০ টাকা। আমাদের পকেটের সব টাকা এই কয় দিনে রিকশাচালকরা নিয়ে গেছেন। উপায়ও নেই, কতটুকু পথ হাঁটা যায়!’

এদিকে ১১ আগস্ট থেকে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চলার বিষয়টি নিয়ে এখন থেকেই মন খারাপ রিকশাচালকের। ইদ্রিস নামের এক রিকশাচালক বললেন, ‘কয়টা দিন ঢাকা শহরের সবখানে ভাড়া নিয়া চলাফেরা করতে পারছি। ১১ তারিখের পর আর পারমু না। আবার গলিতে গলিতে চালাতে হবে। ভাবছিলাম, আরও কয়টা দিন লকডাউন থাকবে।’

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে সবশেষ ১০ আগস্ট পর্যন্ত চলমান কঠোর বিধিনিষেধের সময় বাড়ানো হয়। ১১ আগস্ট থেকে দোকানপাট খুলে দেওয়া হবে ও সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চলবে বলে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর আগে ১ থেকে জুলাই ১৪ জুলাই পর্যন্ত বিধিনিষেধ ছিল। পবিত্র ঈদুল আজহার কারণে আট দিন শিথিল করা হয় এবং ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়িয়ে হয়।

আপনি আরও পড়তে পারেন