দিনে লাইনে দাঁড়ালে করোনার টিকা পাওয়া যায় না। তাই আগের দিন রাতেই টিকা পেতে কেন্দ্রের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছেন অনেকে। আলাদা দুটি লাইনে শতাধিক নারী-পুরুষ টিকা নেওয়ার অপেক্ষা করছেন।
বুধবার (১১ আগস্ট) দিবাগত রাতে রাজধানীর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে সামনে দেখা গেছে এমন চিত্র।
রাত ১২টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, টিকাকেন্দ্রের সামনে এক পাশে নারী অন্য পাশে পুরুষদের লাইন। কেউ চেয়ারে কেউ বা পাটি-চাটাই নিয়ে রাস্তায় বসে আছেন। তবে পুরুষের চেয়ে নারীদের লাইন বেশি লম্বা।
নারীদের লাইনে প্রথম বসে আছেন তানিয়া বেগম। তিনি বলেন, রাত ৯টার দিকে লাইনে দাঁড়িয়েছি। এক নম্বর সিরিয়াল। রাত্রে এখানেই থাকব। বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) সকালে টিকা নিয়ে বাসায় যাব।
বৃহস্পতিবার সকালে টিকার জন্য আগের দিন রাতেই কেন লাইনে দাঁড়িয়েছেন এমন প্রশ্নে তিনি জানান, এর আগে দুই দিন লাইনে দাঁড়িয়েও টিকা পাইনি। এত বেশি ভিড় ছিল যে লাইন শেষ হওয়ার আগেই টিকা শেষ। তাই আজ রাত্রে এসেছি।
শুধু তানিয়া নয় তার মতো ৬০ থেকে ৭০ জন নারী টিকাকেন্দ্রের সামনে বসে আছেন টিকা নেওয়ার জন্য।
গভীর রাতে সিরিয়ালে আছেন আরেকজন রানু বেগম। তিনি জানান, মতিঝিল একটা অফিসে চাকরি করি। ১০টার মধ্যে অফিস যেতে হয়। বুধবার সকালে এসেছিলাম, টিকা নিতে পারিনি। তাই রাতে এসেছি। আমার সিরিয়াল পাঁচ নম্বর। চাটাই নিয়ে বসে আছি। এখানে সারা রাত থাকব, সকালে টিকা দিয়ে তারপর বাসায় যাব।
রাতে টিকার লাইনে বৃদ্ধা থেকে শুরু করে নানা বয়সী মানুষ অপেক্ষা করছেন। বেশির ভাগই নিম্ন আয়ের কর্মজীবী মানুষ। তাদের মধ্যে অফিসের কর্মচারী, রিকশাচালক, সবজি বিক্রেতাসহ গৃহকর্মীরাও রয়েছে।
বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে কথা হয় সিরিয়ালে থাকা ফারুক নামের আরেকজনের সঙ্গে। তিনি জানান, সরকার এখন ফ্রি টিকা দিচ্ছে। পরে এ টিকা দিতে কত টাকা লাগবে জানে কে? তাই টিকা নিতে রাতেই এসেছি। কালকের পর তো আর টিকা পাব না। এখান আইডি কার্ড দিলেই টিকা দিচ্ছে। দিনে কাজ করতে হয়, সময় পাওয়া যায় না। রাতে টিকার জন্য অনেকে লাইন ধরেছেন শুনে আমিও এসেছি। সারা রাত থাকব, সকালে টিকা নিয়ে কাজে যাব।
কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা ৭২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিকুল আলম শামীম বলেন, আমাদের এখানে যারা এনআইডি নিয়ে আসছে তাদের সিরিয়াল অনুযায়ী আমরা টিকা দিচ্ছি। কিন্তু যে পরিমাণ লোকজন এসেছেন তার তুলনায় টিকা খুবই কম। আমাদের মাত্র ৩৫০ ডোজ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রতিদিন হাজারের বেশি লোক টিকার জন্য ভিড় করছেন। তাই সবাইকে আমরা টিকা দিতে পারছি না।
এলাকাভিত্তিক কেন্দ্রগুলোতে টিকার পরিমাণ ও টিকাদানের সময় বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে এ ওয়ার্ড কাউন্সিলর বলেন, করোনা থেকে সুরক্ষার জন্য সবাইকে টিকার আওতায় আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে উদ্যোগ নিয়েছেন সাধারণ মানুষ এটাকে স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করেছেন। প্রথমে করোনার এ টিকা নিয়ে নানা কথা শোনা গেলেও এখন মানুষের মধ্যে উৎসাহ বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষ এখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে করোনার টিকা নিতে আসছেন। রাতে এসেও মানুষ সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে আছেন। আমরা সিরিয়াল অনুযায়ী সবাইকে টিকা দেব। সরকার টিকার পরিমাণ ও সময় বাড়ালে সাধারণ মানুষের চাহিদা অনুযায়ী টিকা দিতে পারব।
গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে টিকাদান কার্যক্রম চালুর পর শুধু নিবন্ধনের মাধ্যমে টিকা দেওয়া শুরু হয়। এরপর গণটিকা কর্মসূচি হাতে নেয় সরকার। গত ৭ অগাস্ট থেকে দেশব্যাপী টিকাদান কার্যক্রম শুরু করে। নিবন্ধন ছাড়াই টিকা নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। দেশের সিটি করপোরেশন, ইউনিয়ন-ওয়ার্ড ও বিভিন্ন অঞ্চলভেদে ৭ আগস্ট থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত এই ক্যাম্পেইন চলছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় টিকা কম থাকায় অনেককে টিকা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে।