শিশুসন্তানসহ পদ্মায় পড়ে যান মা, উদ্ধার করল ঘাটশ্রমিক

শিশুসন্তানসহ পদ্মায় পড়ে যান মা, উদ্ধার করল ঘাটশ্রমিক

সকাল ৯টা। হঠাৎ দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাটে হৈ চৈ। দূর থেকে শোনা যাচ্ছিল মানুষের শোরগোল। একটু সামনে এগোতেই জানা গেল শিশুসন্তানসহ মা অসাবধানতায় ফেরির পন্টুন থেকে পদ্মায় পড়ে গেছেন। এ সময় ফেরিঘাটে কাজ করছিল ঘাটশ্রমিক মনির শেখ।

বিষয়টি তার নজরে আসলে তিনি তৎক্ষণাৎ উত্তাল পদ্মায় ঝাঁপ দিয়ে তাদের উদ্ধার করেন। এ সময় নদীতে তীব্র স্রোত ছিল। অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান শিশুসন্তানসহ মা।

শুক্রবার (১৩ আগস্ট) সকাল ৯টার দিকে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাট এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে।
পদ্মায় পড়ে যাওয়া ওই গৃহবধূর নাম রোকসানা ইয়াসমিন (২৭) ও তার শিশুসন্তান মেহেরাব হোসেন (৪)।

রোকসানা মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মাসাইলাকুসা ইসাপুর গ্রামের মো. হাসান উজ্জামানের স্ত্রী। হাসান উজ্জামান গাজীপুরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সকাল ৯টার দিকে পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া ঘাটে আসে রো রো ফেরি আমানত শাহ। ফেরিটি ৫ নম্বর ফেরিঘাটে ভিড়ার পর যানবাহন আনলোড করে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। এ সময় ঘাটে ফেরি দেখে দ্রুত ওঠে পড়েন রোকসানার স্বামী হাসান উজ্জামান।

হাসানুজ্জামানের পেছনেই ছিল তার স্ত্রী ও তার একমাত্র সন্তান মেহেরাব। রোকসানা তার শিশুসন্তান নিয়ে ফেরির সংযোগ সড়ক দিয়ে ফেরিতে উঠছিল। ঠিক সেই সময় হানিফ পরিবহনের একটি বাস ও তাদের শরীরঘেঁষে ফেরিতে উঠছিল।

সে সময় রোকসানা কোনো বুঝে ওঠার আগেই ভয়ে ফেরির পন্টুন থেকে কোলে থাকা শিশুসন্তানকে নিয়ে পদ্মা নদীতে ঝাঁপ দেন। এ সময় নদীতে প্রচণ্ড স্রোত থাকায় তারা ভেসে যাচ্ছিলেন। ওই ঘাটে দায়িত্ব পালন করছিলেন ঘাটের শ্রমিক মনির শেখ। তিনি বিষয়টি দেখার পর সঙ্গে সঙ্গে নদীতে ঝাঁপ দেন।

এক হাতে শিশু মেহেরাব, আরেক হাত দিয়ে রোকসানাকে ধরে ফেলেন। ফেরি থেকে স্বামী হাসান উজ্জামান দেখতে পেলে পন্টুন থেকে তিনিও লাফ দেন। হাসান উজ্জামান তার স্ত্রীকে ও মনির শেখ শিশুসন্তানকে টেনে তুলে আনেন।

মনির শেখ বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওই সময় ঘাটে দায়িত্বে ছিলাম। আমি দেখামাত্রই লাফ দিয়ে তাদের ধরে ফেলি। তারা ফেরি ও পন্টুনের মাঝে পড়ে যান। এদিকে তার স্বামীও লাফ দিলে তিনি তার স্ত্রীকে এবং আমি শিশুটিকে ওপরে তুলে নিয়ে আসি।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. শিহাব উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। এক ঘাটশ্রমিক তার জীবনবাজি রেখে শিশুসন্তানসহ মাকে উদ্ধার করে।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন