ইউপি নির্বাচন পোস্টার আর ব্যানারে ছেয়ে গেছে রূপগঞ্জ

ইউপি নির্বাচন পোস্টার আর ব্যানারে ছেয়ে গেছে রূপগঞ্জ

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জ ঃ “ উৎসবের আমেজ আর নাই গো ভাই। হঠাৎ করেই কোথা থেকে যে সন্ত্রাসীরা দলবল নিয়ে এসে পড়ে বুঝার উপায় নেই। উৎসব আমেজের ভোটে এখন ককটেল ফাটায়, বোমা ফোটায়, গুলিও করে। সারা দিন  র‌্যাব, পুলিশ ও ডিবির গাড়ী টহল দেয়, তারপরও ধমে না সন্ত্রাসীরা। কেমনে করমু উৎসব, কন দেহি?” কথাগুলো বলছিলেন নতুন ভোটার হওয়া কায়ছার মিয়া।
ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে প্রাচার প্রচারণায় এখন মুখর রূপগঞ্জের ৫ টি ইউনিয়ন। আগামী ১১ নভেম্বর ভোট হতে যাচ্ছে কায়েতপাড়া, ভোলাব, ভুলতা, গোলাকান্দাইল ও মুড়াপাড়া ইউনিয়নে। মুড়াপাড়া, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল ইউনিয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় নির্বাচনী আমেজ অনেকটা ফিকে হয়ে গেছে। পূর্বাচল উপশহর ও রাজধানী ঢাকার পাশর্^বর্তী হওয়ায় সবার দৃষ্টি এখন কায়েতপাড়ার দিকে। আর এখানেই প্রতিদিন কোন না কোন এলাকায় প্রচার প্রচারণায় গন্ডগোল হচ্ছেই। প্রশাসনও থামাতে পারছে না তাদের। এ নিয়ে কায়েতপাড়া ইউনিয়নবাসী আতঙ্কে রয়েছে। গোটা এলাকায় উৎসব আমেজের পরিবর্তে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
আর এ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। নির্বাচনী উৎসবকে সামনে রেখেই মাঝে মধ্যে হানা দেয় সন্ত্রাসী কার্যক্রম। এ নিয়ে গোটা রূপগঞ্জবাসী আতঙ্কে রয়েছে। রাস্তা-ঘাট, হাটবাজার ও অলিগলি নির্বাচনের প্রার্থীদের পোস্টার আর ব্যানারে ছেয়ে গেছে পুরো পৌর এলাকার জনপথ।
২৭ অক্টোবর প্রতীক বরাদ্ধ দেয়ার পর পরই পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন টানানো নিয়ে শুরু হয় তর্ক বিতর্ক। এ থেকে একপর্যায়ে গুলাগুলিও শুরু হয়ে যায়। ২৭ তারিখ রাতেই উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওড়া এলাকার ২ মেম্বার প্রার্থীর মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ১৫ জন আহত হয়। একই তারিখ দিবাগত রাতে ভোলাবতে পোস্টার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়। ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ৩’শ জনকে আসামী করে রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে।
প্রার্থীদের চলছে উঠান বৈঠক, আলোচনা সভা,মিছিল, গণসংযোগ ও মাইকিং। এ অবস্থায় সাধারণ ভোটাররা চান সব ধরনের সংঘাত এড়িয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে। কায়েতপাড়ায় ভোটের মাঠে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দেশের বৃহত্তম দুই রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীসহ মোট ১০ জন। আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী আলহাজ¦ জাহেদ আলী, বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন মিজানুর রহমান, আর একজন হেভীওয়েট প্রার্থী রয়েছেন গোলজার হোসেন। প্রার্থী ১০ জন হলেও মূল প্রতিযোগিতা এ ৩ জনের মধ্যেই হবে আশা করছেন স্থানীয় ভোটাররা।
সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত ২৭ অক্টোবর প্রতীক বরাদ্দের পর পরই আরও পুরোদমে শুরু করেছে প্রার্থীদের নির্বাচনি প্রচারণা। সকল দলের অংশগ্রহণ থাকায় জমজমাট হয়ে উঠছে এবারের নির্বাচনের মাঠ। আর এ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর তৃণমূল নেতাকর্মী ও ভোটারদের মধ্যেও বিরাজ করছে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা।
তবে নির্বাচনি প্রচারণায় চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পাশাপাশি পিছিয়ে নেই মেম্বার ও মহিলা মেম্বারু প্রার্থীরাও, তারাও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট ও দোয়া প্রার্থনা করছেন।
তাছাড়া, উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সড়কে, মোড়ে, হাট-বাজারে প্রার্থীদের ছবি সম্বলিত পোস্টার শোভা পাচ্ছে। টানানো হয়েছে ব্যানার। রাত পোহালেই বিভিন্ন গান বাজনার মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীর সমর্থকরা।
কাঁক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। ভোটারদের দিয়ে যাচ্ছেন নানা রকমের প্রতিশ্রুতি। চায়ের স্টল থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লায় চলছে প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড়।
তবে প্রার্থীরা যে যা-ই বলুক না কেন, আসন্ন নির্বাচন কেন্দ্র করে সাধারণ ভোটাররা ভাবছেন উন্নয়নের কথা। এলাকার সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবেন এবং নাগরিক সুবিধা যাদের কাছ থেকে পাবেন, এবারের নির্বাচনে এমন প্রার্থীকেই ভোট দেয়ার কথা ভাবছেন ভোটাররা।

সাধারণ ভোটাররা বলছেন, এলাকার উন্নয়নে যিনি সর্বাত্মক চেষ্টা করবে এবং গরিব-দু:খী মানুষের পাশে থাকবে এবং সর্বদাই কাজেকর্মে পাশে পাবো তাকে আমরা ভোট দেয়ার কথা ভাবছি। এদিকে, ভোটারদের চাহিদা অনুযায়ী সকল নাগরিকদের সাধারণ সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতির কথা দিয়ে ভোট চাচ্ছেন ু প্রার্থীরা।
আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত প্রার্থী আলহাজ¦ জাহেদ আলী বলেন, ‘গোটা ইউনিয়নকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, হাট-বাজারের সার্বিক উন্নয়ন, এলাকায় সড়কবাতি,পানি সরবরাহ,রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ,ড্রেন নির্মাণসহ জনগনের আশা আখাঙ্কা পূরণ করব। অপরদিকে বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ¦ রফিকুল ইসলামের ছোট ভাই মিজানুর রহমান বলেন, আমার ভাইয়ের অসম্পূর্ণ কাজগুলো করব। কায়েতপাড়াকে মডেল ইউনিয়ন বানাবো।
গোলজার হোসেন বলেন, ‘অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হলে চশমা মার্কার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।আমিই জয় পাব ইনশায়াল্লা। ভোটারদের কাছে যাচ্ছি, বেশ সাড়া পাচ্ছি। নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। উল্লেখ্য চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রসহ কায়েতপাড়া ইউনিয়নে মোট ভোটার প্রায় ৩৪ হাজার।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাচন অফিসার মাহবুবুর রহমান বলেন, দু’একটি স্থানে সংঘর্ষের ঘটনার খবর শুনেছি। তবে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, থানা পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনী সর্বক্ষণ টহল দিচ্ছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ নুশরাত জাহান বলেন, দুটি স্থানে গন্ডগোল হয়েছিল। আমরা তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহন করায় তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন