হরিনাকুন্ডু প্রতিনিধি।
ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ৩ নং তাহেরহুদা ইউনিয়নে বয়স্ক ও বিধবা ভাতা কার্ড তৈরিতে ব্যাপক অনিয়ম ও কার্ড বানিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগীরা বলেছেন, টাকা ছাড়া মিলছে না কার্ড। চেয়ারম্যানে মুনজুর আলমের প্রত্যক্ষ তদারকিতে ইউপি সচিব আসাদুজ্জামান লিটন বয়স্ক-বিধবা ভাতা কার্ড তৈরিতে এ বানিজ্য করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে । প্রকাশ্যভাবেই তারা বয়স্ক-বিধবা ভাতার কার্ড বানিজ্যে নেমেছেন বলে জানা যায় । পাচশত টাকা হলে মৃতদের নামেও বিধবা-বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়া কোন ব্যাপারই না বলে ইউপি সচিব আসাদুজ্জামান লিটন প্রায়ই প্রকাশ্যে আস্ফালন করেন বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে ইউনিয়ন পরিষদে আগত বিভিন্ন সেবাগ্রহীতারা।
জানা যায়, বয়স্ক ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষদের ক্ষেত্রে বয়স সর্বনিম্ন ৬৫ বছর এবং মহিলাদের ৬২ বছর হতে হবে, তবে সর্বোচ্চ বয়স্ক ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে।বিধবা, তালাক প্রাপ্তা, বিপত্নীক,নিঃসন্তান,পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদেরকেও অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
ডিজিটালের মারপ্যাঁচে, চেয়ারম্যান – সচিব ও দালালদের সমন্বয়ে গড়া কার্ড বানিজ্য সিন্ডিকেটের কারনে কার্ড মিলছে না প্রকৃত কার্ড পাওনাদারদের ভাগ্যে ।
তাহেরহুদা ইউনিয়নের পোলতাডাঙ্গা গ্রামের তালাক প্রাপ্তা পাখী খাতুনের ভাগ্যে কিছুতেই মিলছিলো না একটি ভাতার কার্ড। অবশেষে অনেক তদবিরের পরে ও ইউপি সচিবকে ৫০০ টাকা বখশিশ দেওয়ার পর তার কপালে মেলে বিধবা ভাতা কার্ড-এমনটাই বলছিলেন ভুক্তভোগী স্বামী পরিত্যক্তা পাখী খাতুন।
পোলতাডাঙ্গা গ্রামের মৃত গঞ্জের মন্ডলের সহধর্মিণী ফাতেমা খাতুনও একটি বিধবা ভাতা কার্ডের জন্য দীর্ঘদিন দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন সুফল পাননি বলে এই প্রতিবেদককে জানান। তিনি বলেন, অনেক চেষ্টার পর অনলাইনে আবেদন নেয়া হচ্ছে শুনে আমিও একটা আবেদন করি। এর কিছুদিন পরে ইউপি চেয়ারম্যান আমাকে পরিষদে ডেকে কাগজপপত্র জমা দেওয়ার কথা বলে সচিবের কাছে পাঠালে সচিব আমার নিকট কার্ড লেখার জন্য ১৫০ টাকা এবং অনলাইনের নামে ৫০ টাকা দিতে হবে বলে দাবী করেন। কোনও উপায়ান্তর না পেয়ে একটি কার্ডের আশায় আমি ঐ টাকাটা তাকে দেই ।
তবে ফাতেমা খাতুন এরও ৬-৭ মাস আগে একটা বয়স্ক কার্ড পাওয়ার আশায় হাঁস-মুরগী বিক্রি করে চেয়ারম্যানের পরামর্শে সচিবের কাছে ৫০০ টাকা দিয়েও কোন কার্ড দেননি বলে জানান।
পোলতাডাঙ্গা গ্রামের মৃত আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী হালিম খাতুন জানান, আমার স্বামী মারা গেছে ১৩ বছর। একটি বিধবা ভাতা কার্ডের জন্য আমি পদক্ষেপ এনজিও থেকে টাকা তুলে সচিবকে ৫০০ শত টাকা দিয়েছিলাম, সর্বশেষ সচিব কার্ড লেখার জন্য ১৫০ টাকা এবং অনলাইনের নাম করে আরো ৫০ টাকা নিয়েছে । আপনারা তো সাংবাদিক, আপনারা একটু বলে কয়ে আমার কার্ডটা করার ব্যবস্হা করে দিয়েন। আমি খুব অসহায়।
এ কথা বলেই কান্নায় ভেংগে পড়েন অসহায় হালিমা।
একই গ্রামের করিম মণ্ডলের ছেলে পাখী ভ্যান চালক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন,বয়স্ক ভাতা কার্ডের জন্য আমি পরিষদে গেলে সচিব আমার কাছ থেকে ৫০০ টাকা চান। আমি রাগে, ক্ষোভে পরিষদ থেকে চলে আসি।
পোলতাডাঙ্গা গ্রামের আরেক বাসিন্দা মুক্তার আলী বলেন,আমার নিকট থেকে ঘুষ নিয়েও আমার নামে কার্ড করে দেয়নি। অনেকের অর্থ সম্পত্তি থাকা সত্তেও তাদের ভাতা কার্ড করে দিয়েছে চেয়ারম্যান আর সচিব।
বয়স্ক আর বিধবা ভাতা কার্ড নিয়ে বানিজ্য শুধু এই ৫ জন ভুক্তভোগীর সাথেই হয়নি বর ৩ নং তাহেরহুদা ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে রয়েছে এমন দূর্নীতির ছোয়া বলে ইউনিয়নের সাধারন মানুষের দাবী। ক্ষোভের সুরে তারা বলেন,অনিয়মের দিক থেকে তাহেরহুদা ইউনিয়ন রয়েছে শীর্ষে।
বিধবা-বয়স্ক ভাতার কার্ডে অনিয়ম ও বানিজ্যের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান হাজী মনজুর আলম( মনজের) এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব অভিযোগের সত্যতা অস্বীকার করে বলেন, ফাতেমা খাতুনের অভিযোগের কোন সত্যতা নেই। সামনে আমার ভোট,
কিছু লোক আছে যারা আমার কাছ থেকে টাকা- পয়সা,সুযোগ- সুবিধা না পেয়ে এমন অভিযোগ করে বেড়াচ্ছে,যা ভিত্তিহীন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শিউলী রানী বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বৃদ্ধ,বয়স্ক-বিধবা ভাতার ক্ষেত্রে দূর্নীতি মেনে নেওয়া যাবে না।