ঢাকায় দুধ-দই সরবরাহকারীদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট

লাইসেন্সবিহীন ও লাইসেন্সধারী কতগুলো কোম্পানি ঢাকায় দুধ ও দই বাজারজাত করেছে তার তালিকা দুই সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনকে (বিএসটিআই) দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আজ রোববার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আগামী ১৫ জুলাই এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।

রোববার শুনানিতে আদালত প্রথমে বিএসটিআইয়ের আইনজীবী সরকার এম আর হাসান ও কর্মকর্তা নুরুল ইসলামের বক্তব্য শোনেন।

তারা বলেন, পাস্তুরিত দুধ ও দই বাজারজাতকরণের জন্য ১৮টি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এই ১৮টি দেখভাল করার দায়িত্ব বিএসটিআইয়ের। এর বাইরে কারা দুধ ও দই বাজারজাত করছে সেটা দেখার দায়িত্ব বিএসটিআইয়ের নয়।

আদালত বলেন, লাইসেন্সগুলো দেখার দায়িত্ব আপনাদের হলে লাইসেন্সবিহীনগুলোও দেখার দায়িত্ব আপনাদের মধ্যে পড়ে। কিন্তু আপনার বলছেন, দেখার দায়িত্ব আপনাদের না। আপনাদের এই বক্তব্য এফিডেভিট আকারে আদালতে দাখিল করুন।

বিএসটিআইয়ের আইনজীবী আরও বলেন, ঢাকায় অভিজাত দোকানগুলোতে এই ১৮টি কোম্পানির দুধ ও দই ছাড়া লাইসেন্সবিহীন কোম্পানির দুধ ও দই বিক্রি হয় না।

তখন আদালত ড. শাহলীনার দাখিল করা প্রতিবেদন দেখিয়ে বলেন, গুলশানের অভিজাত দোকানগুলোতে লাইসেন্সবিহীন কোম্পানির দুধ বিক্রির কথা উল্লেখ রয়েছে। আপনার বক্তব্য সঠিক নয়। আদালত বিএসটিআইয়ের আইনজীবী ও কর্মকর্তার বক্তব্যে অসন্তোষ ও বিস্ময় প্রকাশ করেন।

আদালত বলেন, মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার আপনাদের কে দিয়েছে? লাইসেন্স নেই অথচ দুধ বাজারজাত করছে। এটা দেখার দায়িত্ব কার? জবাবে আইনজীবী বলেন, এটা দেখার দায়িত্ব কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের।

এ সময় দুদকের আইনজীবী মামুন মাহবুব ও রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন বলেন, আইনে বিএসটিআইকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা দায়িত্ব এড়িয়ে অন্যের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন। এজন্য আদালতকে কঠোর হতে হবে।

এ সময় বিএসটিআইয়ের আইনজীবী আদালতকে বলেন, বেআইনিভাবে যারা দুধ ও দই বাজারজাত করছে তাদের পণ্য ধ্বংস করার আদেশ দিন। তখন আদালত বলেন, আপনারা স্ব বিরোধী কথা বলছেন। একটু আগে বললেন, দেখার দায়িত্ব আপনাদের না। এখন আবার ধ্বংস করার আদেশ চাচ্ছেন। এসব বাদ দিন। আগে আপনারা তালিকা দাখিল করুন। বাকিটা আদালত দেখবে।

এরপর আদালত আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে লাইসেন্সবিহীন কতগুলো কোম্পানি দুধ ও দই বাজারজাত করছে তার তালিকা দাখিলের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শাহলীনা ফেরদৌসিকে কোনো রকম বিরক্ত না করতে বিএসটিআই, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংক্ষরণ কর্তৃপক্ষসহ সকল সরকারি সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য নিয়ে তার দেওয়া প্রতিবেদন সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন থাকলে তা আদালতকে অবহিত করতে বলা হয়েছে।

এর আগে সারা দেশ থেকে দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্যের ৩০৫টি নমুনা সংগ্রহের প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দুইটি নমুনা (একটি ঢাকা,একটি সিলেট) নিম্নমাণের পাওয়া গেছে। বাকিগুলোতে কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। তবে এই প্রতিবেদন এলোমেলো হওয়ায় বিএসটিআইকে পুনরায় গুছিয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

প্রসঙ্গত, গত ১১ ফেব্রুয়ারি কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পত্রিকার ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘দেশে পুষ্টির অন্যতম প্রধান জোগান হিসেবে বিবেচিত গরুর দুধ বা দুগ্ধজাতখাদ্যে এবার মিলেছে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নানা উপাদান। ১০ ফেব্রুয়ারি এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে সরকারের জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের প্রতিবেদনে।

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, গরুর খোলা দুধে অণুজীবের সহনীয় মাত্রা সর্বোচ্চ ৪ থাকার কথা থাকলেও পাওয়া গেছে ৭.৬৬ পর্যন্ত।’ এরপর সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী মামুন মাহবুব।

পরে আদালত দুধে সিসা মিশ্রণকারীদের শাস্তির আওতায় আনার ব্যর্থতা কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন। এ ছাড়াও রুলে দুগ্ধজাত খাবারে ভেজাল প্রতিরোধে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি খাদ্যে ভেজালের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির (মৃত্যুদণ্ড) কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

এ ছাড়া আদালত ঢাকাসহ সারা দেশের বাজারে কোন কোন কোম্পানির দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য পণ্যে কী পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক এবং সিসা মেশানো রয়েছে, তা নিরূপণ করে একটি জরিপ প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ দেন। জাতীয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।

যার ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টের নির্দেশের পর বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. মাহবুব কবিরকে আহ্বায়ক করে ১৬ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়।

আপনি আরও পড়তে পারেন