মহানুভব ধোনি!

ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে ধোনি এমন একটি নাম যার কোন প্রতিদ্বন্দ্বী খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। সেটা হোক তার ব্যাটিং, তার কিপিং বা তার ক্যাপ্টেন্সি। যেখানে যেভাবে দরকার ঠিক সেভাবেই মানিয়ে নিয়েছেন নিজেকে। ভারতকে এনে দিয়েছেন দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। জিতিয়েছেন টি-২০ ক্রিকেটের শিরোপাও। ভারতকে দিয়েছেন আইসিসির টেস্ট ক্রিকেটের সম্মাননা টেস্ট মেস।

সেই ধোনিকে কি কথা শুনতে হয় না? সমালোচনার শিকার হন প্রায়ই ভারতের এই তারকা ব্যাটসম্যান। যেমন এবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হাত খুলে না খেলায় সমালোচিত হয়েছিলেন ভারতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি।

ইংল্যান্ডের কাছে হেরে সেদিন সেমিফাইনাল নিশ্চিত হওয়ার বিষয়টি পিছিয়ে গিয়েছিল ভারতের। ধোনি যখন ব্যাট করছিলেন ম্যাচ তখনও ভারতের হাতেই ছিল। এমন পরিস্থিতিতে বহুবার ম্যাচ বের করে জয় এনে দিয়েছেন মি. ফিনিশার। কিন্তু ওই ম্যাচে তার মন্থর গতির ব্যাটিংয়ের কারণে ইংলিশদের বিপক্ষে ৩১ রানে হেরে যায় ভারত।

এদিকে অন্যরকম এক কাণ্ড করে সমালোচনার পাশাপাশি বেশ আলোচিতও হচ্ছেন ধোনি। প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই বিভিন্ন সংস্থার লোগো লাগানো ব্যাট নিয়ে খেলছেন তিনি।

সাধারণত কোনো ক্রিকেটার এভাবে আর্ন্তজাতিক কোনো টুর্নামেন্টে একটি ব্র্যান্ডের ব্যাট দিয়ে খেলেন না। যে ব্যাট প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলোর সঙ্গে ক্রিকেটারদের আর্থিক চুক্তি থাকে কেবল তাদের ব্যাট নিয়েই প্রতি ম্যাচে নামতে হয় ব্যাটসম্যানকে।

কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে ধোনিকে দেখা গেল সে নিয়ম মানছেন না। এর আগে ‘রিবক’ এর লোগো লাগানো ব্যাট নিয়ে খেলতেন ধোনি। কিন্তু এবার রিবকের বদলে এসজির ব্যাট দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করলেন তিনি। এখন আবার ‘ভ্যাম্পায়ার’ দিয়ে খেলছেন।

তবে কি ধোনি বিশ্বকাপে একাধিক ব্যাট প্রস্তুতকারক সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন?

এ প্রশ্ন জেগেছে ভক্ত-সমর্থকসহ দেশ বিদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মাঝে। বিষয়টি পরিস্কার করেছেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ম্যানেজার অরুণ পাণ্ডে।একাধিক তো দূরের কথা কোনো স্পন্সরের সঙ্গেই নাকি চুক্তিবদ্ধ হননি ধোনি।

অরুণ পাণ্ডে বলেন, ধোনি ব্যাটে বিভিন্ন সংস্থার লোগো ব্যবহার করলেও বিনিময়ে তাদের থেকে কোনো অর্থ নিচ্ছেন না। তবে! এমনটা কেন করছেন ধোনি?

সে প্রশ্ন করার আগেই অরুণ পাণ্ডে জানান, এত বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে যারা ধোনিকে বিভিন্ন সময় সাহায্য করেছে, তাদের ধন্যবাদ জানাতে তিনি এমন উপায় বেছে নিয়েছেন। ক্যারিয়ারের শুরুর সময়টাতে পাশে থাকা সংস্থাগুলোর কাছে এভাবেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন ধোনি।

এবার প্রশ্ন জাগতেই পারে ক্যারিয়ারের এই পড়ন্ত বিকেলে এমন কৃতজ্ঞতাপরায়ণ হলেন কেন ধোনি? বিশ্লেষকদের ধারণা একটাই, টেস্ট ক্রিকেট থেকে আগেই বিদায় নেয়া ৩৭ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার হয়তো বিশ্বকাপ শেষেই অবসরের ঘোষণা দেবেন।

যেসব কম্পানির ব্যাট দিয়ে এতো এতো সাফল্যগাঁথা এঁকেছেন তাদের ঋণ এভাবে শোধ করছেন তিনি। প্রসঙ্গত ভারতের ক্রিকেট অঙ্গনে মহেন্দ্র সিং ধোনির নাম অবিস্মরণীয়। ১৫ বছর ধরে দলে নিয়মিতই ছিলেন তিনি। তার অধিনায়কত্বেই ভারত টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর স্থান দখল করেছিল। অধিনায়ক হিসেবে আইসিসির সব টুর্নামেন্টের ট্রফি জিতেছেন ধোনি। ‘ক্যাপ্টেন কুল’ বলতে ক্রিকেটে ধোনিকেই চিনে সবাই।

আপনি আরও পড়তে পারেন