বিশ্বকাপে সাকিবের মতো পারফরম্যান্স করে যুবরাজ সিং, গ্লেন ম্যাকগ্রা, ম্যাথু হেইডেনরা দলকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন। মালিঙ্গা দলকে ফাইনালে তুলেছেন। কিন্তু সাকিব বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেরা অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করেও গ্রুপ পর্বে বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ। হয়ে গেছেন বিশ্বকাপের ট্র্যাজিক হিরো। তার মতো আরও কিছু হিরো বিশ্ব ক্রিকেট দেখেছে। যারা দারুণ পারফর্ম করেও দলকে মুকুট এনে দিতে পারেননি।
মার্ক ওয়াহ: অস্ট্রেলিয়া সর্বোচ্চ পাঁচবার শিরোপা উচিয়ে ধরেছে। ফাইনালে ওঠা এবং শিরোপা জয় ডাল-ভাত বানিয়ে ফেলেন অজিরা। তারপরও মার্ক ওয়াহ ১৯৯৬ বিশ্বকাপের ট্র্যাজিক হিরো। সেবার ৪৮৪ রান করেন ওয়াহ। কিন্তু ফাইনাল জিতে নায়কের আসন পান শ্রীলংকার অরবিন্দ ডি’ সিলভা। বল হাতে তিন উইকেট নেন। ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি করেন তিনি। তার অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ইতিহাস রচনা করে শ্রীলংকা।
ল্যান্স ক্লুজনার: চোর্কাস শব্দটি দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে স্থায়ী শব্দ হিসেবে যোগ হয় ১৯৯৯ বিশ্বকাপে। আগের বিশ্বকাপ ছিল প্রোটিয়াদের আসর চেনার। ভালো ক্রিকেটও খেলেন তারা। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ফেবারিট দক্ষিণ আফ্রিকা ল্যান্স ক্লুজনারে ভর করে এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু সেমিতে অবধারিত জয় মাঠে ফেলে আসে তারা। বিশ্বকাপে ১৭টি উইকেট ও ১২২.২ স্ট্রাইক রেটে শেষ দিকে ২৩০ রান করে প্রোটিয়াদের শেষ চারে পৌঁছে দেন ক্লুজনার। কিন্তু সেমিতে হারের পর হাঁটু গেড়ে মাটিয়ে বসে পড়েন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটের স্থায়ী এক ছবি।
শচীন টেন্ডুলকার: শচীনকে সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন মানতে আপত্তি নেই কারো। এমনকি তিনি বিশ্বকাপ না জিতলেও সম্ভবত আপত্তি থাকতো না। তারপরও ক্যারিয়ারে খাতমি তো থাকতো। ২০১১ বিশ্বকাপে শচীন মুকুট জয় করেছেন। কিন্তু ২০০৩ বিশ্বকাপের তিনি ছিলেন ট্র্যাজিক হিরো। বিশ্বকাপ জুড়েই রাজ করেছিলেন ‘লিটল মাস্টার’। সেবার বিশ্বকাপের রেকর্ড ৬৭৩ রান করেন তিনি। শচীনের চওড়া ব্যাটে চেপে ফাইনালে যায় ভারত। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারে।
লাসিথ মালিঙ্গা: ২০০৭ বিশ্বকাপে মুত্তায়া মুরলিধরন অফস্পিনের মায়াজালে ব্যাটসম্যানদের বোকা বানান। কিন্তু লাসিথ মালিঙ্গা নির্ভুল ইয়ার্কারে ব্যাটসম্যানদের ভীতি হয়ে ওঠেন। শ্রীলংকাকে ফাইনালে তোলেন তিনি। মাত্র ৪.৮৬ ইকোনমি রেটে ৮ ম্যাচে ১৮ উইকেট নেন মালিঙ্গা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নেন চার বলে চার উইকেট। কিন্তু মুরালি ধরন কিংবা মালিঙ্গা ফাইনালে অ্যাডাম গিলক্রিস্টের কাছে হেরে পরাজিত নায়ক হন।
মাহেলা জয়বর্ধনে: টিভি পর্দা খুললে ২০১১ বিশ্বকাপে ধোনির ছক্কার দৃশ্যই বেশি দেখা যায়। কিন্তু ওয়াংখেড়েতে সেঞ্চুরি করে শ্রীলংকা অধিনায়ক মাহেলা জয়বর্ধনে ভারতীয় দর্শকদের থামিয় দেন। কিন্তু শ্রীলংকার দেওয়া বড় রান তাড়া করতে নেমে গৌতম গম্ভীরের ব্যাটে চাপ সামাল দেয় ভারত। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ব্যাটে বিজয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে। ধোনির মারা হেলিকপ্টার শট বিশ্বকাপের স্থায়ী দৃশ্য হয়। আর মাহেলা হন ট্র্যাজিক হিরো।
ট্রেন্ট বোল্ট ও মার্টিন গাপটিল: ২০১৫ বিশ্ব আসরে সর্বোচ্চ ৫৪৭ রান করেন মার্টিন গাপটিল। ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকান একটি। এছাড়া ট্রেন্ট বোল্ট ৯ ম্যাচে সর্বোচ্চ ২২ উইকেট নেন। ইকোনমি রেট মাত্র ৪.৩৬। প্রথমবারের মতো দলকে ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে তোলেন। সেই হিসেবে তারা নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের নায়ক। কিন্তু ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারে তারা। স্টিভ স্মিথ-মিশেল স্টার্ক হয়ে যান নায়ক। পরাজিত নায়ক গাপটিল-বোল্টরা।
সাকিব আল হাসান: বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেরা অলরাউন্ডার পারফরম্যান্স সাকিবের। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৬০৬ রান মাত্র আট ম্যাচ খেলে। উইকেট নিয়েছেন ১১টি। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে শচীন-সাঙ্গাকারাতে পেছনে ফেলে সর্বোচ্চ রান করেছেন। বিশ্বকাপের প্রথম অলরাউন্ডার হিসেবে ছয়শ’ রান এবং ১১ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েছেন। তারপরও সাকিব আল হাসান বাংলাদেশকে শেষ চারে তুলতে পারেননি। ২০১৯ ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের ট্রাজিক নায়ক তাই তিনিই। সাকিব মানতে নারাজ তবে তিনিই এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’।