ইমরান-মাশরাফিদের পথে হাঁটছেন ধোনিও?

একদিক থেকে ৩ জনের বেশ মিল। নিজ নিজ দেশের ক্রিকেটের অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনজন। ইমরান খানের অবসর ঘোষণার পর তো পাকিস্তানের সমর্থকরা তার বাড়ি ঘেরাও করে তাকে আবারো নিয়ে আসে ক্রিকেটে! সেখান থেকে পাকিস্তানকে ১ম এবং একমাত্র বিশ্বকাপটা জিতিয়েছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার। 

বিশ্বকাপ কিংবা বড় কোন ট্রফি জেতাতে পারেননি তবু বাংলাদেশের ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক হিসেবে সর্বজনবিদিত মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা। বিশেষ করে ওয়ানডে ফরম্যাটে টাইগারদেরকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি। এশিয়া কাপের ফাইনাল কিংবা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল, ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলার ক্ষেত্রে তার নেতৃত্বগুণের ভূমিকাও অনেকাংশে বলে মনে করেন ক্রিকেটবোদ্ধারা।

আর মাহেন্দ্র সিং ধোনি তো ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা অধিনায়ক। একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে জিতেছেন আইসিসির ৩টি মেগা শিরোপা। এরমধ্যে আছে দুটো বিশ্বকাপ। কেবল ট্রফির হিসেবে ধোনিকে বিবেচনা করাও মুশকিল। নেতৃত্বগুণ, মাঠে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার দক্ষতা, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা, উইকেটকিপিংয়ে চতুরতা এবং সর্বোপরি ম্যাচ জেতানো একেকটা ইনিংস, মাহেন্দ্র সিং ধোনির কদরটা আসলে অন্যরকম।

এই তিনজনকে আবারো এক কাতারে এনে পর্যালোচনার কারণটা এবার পরিষ্কার করা যাক। দেশকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে তুমুল জনপ্রিয় হওয়া ইমরান খান এখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা মাশরাফিও জড়িয়েছেন রাজনীতিতে। গেল নির্বাচনেই নিজ এলাকা নড়াইল-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ভারতেও ব্যাপক জনপ্রিয় ‘ক্যাপ্টেন কুল ধোনি’ কি সে পথেই আছেন? ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, রাজনীতিতে জড়াতে যাচ্ছেন সদ্য অবসর নেয়া ভারতীয় এই ক্রিকেটারও।

দুইয়ে দুইয়ে চার মেলানোর মতো সুযোগও করে দিয়েছেন ধোনি। অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের স্বাধীনতা দিবসে। অনেকে বলছেন, স্বাধীনতা দিবসে চাপমুক্ত হতে চেয়েছেন ধোনি। আবার অনেকেই মনে করেন, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করেই দেশের স্বাধীনতা দিবসকে মহাগুরুত্বপূর্ণ এই সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য উপযুক্ত দিন ভেবেছেন তিনি।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলার পর ভারতে গুঞ্জন শুরু হয়েছে, অবসরকালীন সময়ে কি করবেন ধোনি? প্রশ্নের উত্তরে তার দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং ব্যবসায়িক পার্টনার অরুন পান্ডে বলেছেন, আর্মি ক্যাম্প এবং ব্যবসাতেই এবার মনোযোগী হবেন ধোনি। তবে তার এই কথাতেই সব গুঞ্জন থেমে যাচ্ছেনা।

অবসরের ঘোষণা দেয়ার পর ক্রিকেট বিশ্বের প্রায় সবাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধোনিকে নিয়ে বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করেছেন। তার পরবর্তী জীবন নিয়ে শুভকামনাও জানিয়েছেন। সেপথে হেঁটেছেন ভারতীয় রাজনীতিবিদরাও। ভারতের সরকার দলীয় (বিজেপি) সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী টুইটারে লিখেছেন, ধোনি ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন, তবে সবকিছু থেকে নয়। প্রতিকূলতার মধ্যেও তার লড়াই করার ক্ষমতা, দলকে নেতৃত্ব দেয়ার দক্ষতা আমরা ক্রিকেট মাঠে দেখেছি। বাস্তব জীবনে সেটি বেশ প্রয়োজন।

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ধোনির লড়াই করা উচিত বলেও লিখেছেন বিজেপির এই সাংসদ।

তার এই টুইটের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জোর গুঞ্জন, বিজেপিতে যোগ দিতে যাচ্ছেন মাহেন্দ্র সিং ধোনি। ধোনিকে নিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের করা টুইটটিও এই গুঞ্জনের পালে হাওয়া দিচ্ছে।

টুইটে অমিত শাহ লেখেন, নিজের খেলা দিয়ে ধোনি লাখ লাখ মানুষকে আনন্দ দিয়েছে। আশা করছি, আগামী দিনে ভারতীয় ক্রিকেটকে আরও অনেক শক্তিশালী করে তুলতে এগিয়ে আসবেন তিনি। তার ভবিষত্যের জন্য অনেক শুভেচ্ছা রইল।

রাজনীতিবিদদের এমন টুইটের পর অনেকেরই ধারণা, ক্ষমতাসীন দলে যোগ দিতে যাচ্ছেন ভারতীয় অধিনায়ক। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয়রাও ধোনিকে রাজনীতিতে দেখতে চান বলে জানিয়েছেন। অনেকে আবার বলছেন, ধোনিকে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান তারা।

এখন দেখার বিষয়, উপমহাদেশের তুমুল জনপ্রিয় দুই অধিনায়কের মতোই শেষপর্যন্ত রাজনীতির পথেই হাঁটেন কিনা ভারতের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক মাহেন্দ্র সিং ধোনি।

 

 

 

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন