ইউরোপে পাঠানোর নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ

ইউরোপে পাঠানোর নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ

প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কথা বলে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিল একটি চক্র। তারা প্রতারণার মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সম্প্রতি এ চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ। এছাড়া তিন বছর ধরে নিখোঁজ এক শিশুকে পৃথক আরেক অভিযানে উদ্ধার করেছে পিবিআই ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ।

গ্রেফতার প্রতারক চক্রের দুই সদস্য হলেন- হিরুল ইসলাম ওরফে রিপন ও মো. আবু ইয়ামিন ওরফে আশিকুর রহমান। আর পৃথক অভিযানে উদ্ধার হওয়া ওই শিশুর নাম ইমুনা (১১)

বুধবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে বনশ্রীতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান এসব তথ্য জানান।

পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, ভুয়া ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে মানুষকে ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানোর নামে তিন থেকে চার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় এ চক্র। অনেকের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার পর কথিত অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাজধানীর গুলশানের ইউনিকর্ন প্লাজায় এ চক্রের অফিসের ঠিকানা থাকলেও বর্তমানে সেখানে তাদের কোনো শাখা বা অফিসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ১৫ থেকে ২০ জনের সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের মধ্যে কেউ কেউ নিজেকে উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিত। তারা চলাফেরা করত দামি গাড়িতে। ভিজিটিং কার্ড বানিয়ে সহজেই মানুষকে বোকা বানিয়ে আসছিল। তারা সরকারি চাকরি দেওয়ার কথা বলেও বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানা গেছে।

তিনি বলেন, প্রতারক চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য আসামি ও অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন মিলে আল-আরাফাত ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর নামে ভুয়া ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানোর নামে তিন থেকে চার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। এ ঘটনায় ২০২১ সালের ৩১ জুলাই রামপুরা থানায় একটি মামলা হয়।

তিন বছর পর উদ্ধার হলো নিখোঁজ শিশু

শিশু উদ্ধারের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ভিকটিম ইমুনা গত ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বনশ্রীর ২ নম্বর রোডের কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। ভিকটিম ইমুনাকে খুঁজে না পেয়ে তার বাবা বাদী হয়ে খিলগাঁও থানায় একটি মামলা করেন। সেই মামলায় এক ব্যাংকারকে আসামি করা হয়। মামলা হওয়ার এক বছর পার হয়ে গেলেও ভিকটিমকে খুঁজে না পাওয়ায় ২০২০ সালের ৩০ জুলাই তদন্ত কর্মকর্তা চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। বাদীর নারাজির পরিপ্রেক্ষিতে আদালত গত ২৯ নভেম্বর মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। পরে গত ১৬ আগস্ট এলআইসির আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় পিবিআই ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ বিশেষ অভিযানে শেরপুর জেলা পুলিশের সহায়তায় ভিকটিম ইমুনাকে উদ্ধার করা হয়।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক হারুন বলেন, আমরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারি, মামলায় যাকে আসামি করা হয়েছে তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায়ের জন্য ভিকটিমের আত্মীয়রা ইমুনাকে লুকিয়ে রাখে। মামলাটির দায়িত্ব পাওয়ার পর স্থানীয়ভাবে ভিকটিমের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। বিভিন্ন সোর্স নিয়োগ করি। গত দুই দিন আগে আমরা জানতে পারি, ভিকটিম ঢাকার এক জায়গায় আছে। আমরা সেখানে নজর রাখি। পরে সেখান থেকে সে পালিয়ে এক ছেলের সঙ্গে শেরপুর চলে যায়। আমাদের মুভমেন্ট দেখে মেয়েটিকে রেখে ছেলেটি পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় থানা পুলিশের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করি। ভিকটিমকে উদ্ধার ও মামলার রহস্য উদঘাটনের মাধ্যমে অভিযুক্ত আসামি মানব পাচারের মতো বিশাল অপরাধ থেকে মুক্তি পেল।

আপনি আরও পড়তে পারেন