বার্ষিক রাজস্ব ৫ কোটি টাকা, অফিস ভবন পলিথিনে মোড়া

বার্ষিক রাজস্ব ৫ কোটি টাকা, অফিস ভবন পলিথিনে মোড়া

যে অফিস থেকে প্রতিবছর প্রায় চার থেকে পাঁচ কোটি টাকার রাজস্ব জমা হয় সরকারি কোষাগারে। যেখান থেকে স্থানীয় সরকার উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ হয় ৩ শতাংশ কর। অথচ দূর থেকে সেই অফিসটি দেখলে মনে হওয়ার কোনো সুযোগ নেই যে এটা একটা সরকারি গুরুত্বপূর্ণ অফিস।

একটু বৃষ্টি হলেই অফিস ভবনের ছাদ দিয়ে পানি ঢুকে মেঝেতে জমে যায়। রেকর্ড রুমে রাখা বালাম বইসহ গুরুত্বপূর্ণ দলিল-দস্তাবেজ ও কাগজপত্র ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে ভবনের ওপর পলিথিন ও ত্রিপল দিয়ে ঢেকে তার ওপরে এখন ইটচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে।

পাঠকরা এতক্ষণে রেকর্ড রুম, দলিল-দস্তাবেজ শব্দবন্ধ শুনে আঁচ করে ফেলেছেন এটি স্থানীয়দের কত পরিচিত অফিস এবং কত প্রয়োজন এখানে জড়িত। এমন চিত্র মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের।

সরেজমিনে বুধবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে অফিসের এমন দৈন্যদশা চোখে পড়ে। এই প্রতিবেদককে পেয়ে অফিসের দলিল লেখকরা অনুরোধ করে বলেন, একটু ভালো করে তুলে ধরুন দীর্ঘদিনের ভোগান্তির, যাতে আমরা ও স্থানীয় ভূমি মালিকরা এই মহাসমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি।

আরও দেখা যায়, এর দরজা-জানালার দিকে তাকালে বার্ধক্য চোখে পড়ে। ভেতরের আসবাবপত্র ব্যবহারের অনুপযোগী। দেয়ালের পলেস্তারা, চুন, ইট, বালু খসে খসে পড়ছে। প্রাচীন এ ভবনটি এখন ব্যবহারের এতটাই অনুপযুক্ত হয়েছে যে যেকোনো সময় তা ধসে পড়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

তা ছাড়া একটু খানি বৃষ্টি হলেই অফিসের মেঝেতে পানি জমে যায়। ফলে অফিস কক্ষে রাখা জমির দলিল এবং বালাম বই ভিজে নষ্ট হয় যাচ্ছে। তাই উপায়ান্তর না পেয়ে ছাদের ওপরে পলিথিন ও ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯২৫ সালে উপজেলা সদরে মালিকানাধীন জমিতে ইটের গাঁথুনি ও টিনশেডের ছোট্ট একটি ঘরে সাব-রেজিস্ট্রি কার্যক্রম শুরু করা হয়। প্রতিষ্ঠার ৯৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এর ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেনি বিন্দুমাত্র।

শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও শ্রীপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মসিয়ার রহমান বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে মাগুরায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। শুধু এই সাব-রেজিস্ট্রার অফিসেরই ভগ্নদশা চোখে পড়ে। আশা করি মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য একটা সমাধান করবেন।

তপন বিশ্বাস নামের একজন দলিল লেখক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমি এই সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে কাজ করে আসছি। বর্তমানে মাগুরা জেলায় আমাদের মতো এত জরাজীর্ণ অফিস আর কোথাও একটিও নেই।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় শ্রীপুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার মো. শাহাদাৎ হোসেনের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি আসার আগে থেকেই এখানে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য পরিদপ্তরে একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, জমির মালিকানার দাবিতে করা একটি মামলার কারণেও এখানে উন্নয়নমূলক কাজের পদক্ষেপ গ্রহণে সমস্যা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারাসহ মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্যকে অবহিত করা হয়েছে বিষয়টি নিয়ে।

তিনি বলেন, ৪০ ফুট লম্বা এবং ১৩ ফুট চওড়া এই ভবনটিতে মাত্র একটি কক্ষ রয়েছে, যেখানে এজলাসসহ ১ জন সহকারী, ২ জন মোহরার, ১ জন টিসি ও ১ জন অফিস সহায়কসহ মোট ৬ জন বসে রেজিস্ট্রি কার্যক্রম সম্পাদন করেন। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় বর্ষাকালে। মূল্যবান কাগজপত্রসহ দলিল ও বালাম বই ভিজে যাওয়ার কারণে কোনো উপায় না দেখে ভবনের ছাদে পলিথিন পেপার ও ত্রিপল বিছিয়ে তাতে এখন ইটচাপা দিয়ে রেখেছি।

আক্ষেপ করে এই রেজিস্ট্রার বলেন, যে অফিস থেকে প্রতিবছর চার-পাঁচ কোটি টাকা রাজস্ব জমা দেওয়া হয় সরকারের ঘরে, অথচ আজ সেই অফিসেরই দৈন্যদশা চলছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন