সদ্যসমাপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে কারচুপির নির্বাচন আখ্যা দিয়ে পুনরায় সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে নির্বাচনের পরদিন মঙ্গলবার থেকে রাজু ভাস্কর্যে অনশন শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। গতকাল শুক্রবার অনশনের চতুর্থ দিনে ক্যাম্পাসে ভুখামিছিল বের করেন তারা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরাও মিছিলে যোগ দেন। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একইস্থানে গিয়ে শেষ হয়। ভুখামিছিল থেকে পুনঃতফসিল ঘোষণার পাশাপাশি নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ স্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং নির্বাচনী কাজে জড়িতদের পদত্যাগ দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে আজ বিকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চায়ের আমন্ত্রণে গিয়ে তাঁর কাছে শিক্ষার্থীদের সমস্যার কথা তুলে ধরতে চান বলে জানিয়েছেন ডাকসুর নবনির্বাচিত সহ-সভাপতি (ভিপি) নূরুল হক নূর।
অনশনরত শিক্ষার্থীদের ভুখা মিছিল পরবর্তী সমাবেশে অনশনরত শিক্ষার্থী শোয়েব মাহমুদ বলেন, তথাকথিত এই নির্বাচন আমরা মানি না। এর মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। তাই ডাকসুর পুনঃনির্বাচন দিতে হবে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত কর্তৃপক্ষকে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতে হবে। আরেক শিক্ষার্থী তাহা আল মাহমুদ বলেন, এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেউ আমাদের দেখতে আসেননি। হয়ত তাদের আমাদেরকে মানুষ বলে মনে হচ্ছে না।
এসময় মিছিল শেষে অজ্ঞান হয়ে পড়েন তিন অনশনকারী শিক্ষার্থী। এর আগে অনশনরত আরো দুই শিক্ষার্থীও অসুস্থ হন। অসুস্থ শিক্ষার্থীদেরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সা দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই অনশনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাম জোট, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ ও স্বতন্ত্র জোট একাত্মতা প্রকাশ করে। এছাড়া ডাকসুর সাবেক ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমও অনশনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন।
এদিকে রাজু ভাস্কর্যে ডাকসুর পুনঃনির্বাচন দাবিতে অনশনরত শিক্ষার্থীদের দেখতে এসে ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নূরুল হক নূর বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে যেতে আগ্রহী। ডাকসু নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলেও শিক্ষার্থীরা আমাকে নির্বাচিত করেছেন। শিক্ষার্থীদের যেসকল সমস্যা আছে তা আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরতে চাই। শিক্ষার্থীরা যদি সম্মতি না দেয় তাহলে তো আমি যেতে পারব না। আশা করি, তারা হয়ত সম্মতি দেবে। এসময় অনশনরত শিক্ষার্থীরা তাকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে নিষেধ করেন। তখন নূর বলেন, আমি প্রথম থেকে পুনঃনির্বাচনের দাবি করে আসছি। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকে সমস্যাগুলো জানাতে হবে। তবে যাওয়ার আগে অন্যান্য প্যানেলের সঙ্গে আলোচনা করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও জানান তিনি। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমালোচনা করে নূরুল হক বলেন, আমি অবাক হলাম, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্তান ও শিক্ষার্থীরা অনশনরত। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেউ এখন পর্যন্ত তাদেরকে দেখতে আসেননি।
উল্লেখ্য, ডাকসু নির্বাচনের পরদিন থেকে এ নির্বাচনকে কারচুপির নির্বাচন আখ্যা দিয়ে পুনরায় সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজনের দাবিতে রাজু ভাস্কর্যে অনশন শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থী। এরা হলেন- পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শোয়েব মাহমুদ, পপুলেশন সায়েন্সের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাইন উদ্দিন, দর্শন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অনিন্দ্য মণ্ডল এবং সিইসির চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তাওহীদ তানজিম। পরদিন ১৩ই মার্চ তাদের সঙ্গে যোগ দেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রাফিয়া তামান্না, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মিম আরাফাত মানব, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম ও ভূ-তত্ত্ব বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আল মাহমুদ তাহা।
শিক্ষার্থীদের অনশন এবং তাদের দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানী বলেন, আমরা তাদেরকে আলোচনার বিষয়ে আহ্বান জানাব। তারা আলোচনায় ডাকলে যাব। কিন্তু আলোচনা করতে গেলে আমাদের হেনস্তা করা হবে, এমন আলোচনা হলে আমরা যাব না। বিশ্ববিদ্যালয়ে সবার অনশন করার অধিকার রয়েছে। তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সহ সব ধরনের সুবিধা প্রশাসন দিচ্ছে বলে জানান তিনি।
প্রশাসনের আশ্বাসে অনশন ভাঙ্গলো শিক্ষার্থীরা
প্রশাসনের আশ্বাসে অনশন ভাঙ্গলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনশনরত শিক্ষার্থীরা। পুনরায় ঢাকসুর সুষ্ঠ নির্বাচন আয়োজনসহ বিভিন্ন দাবিতে নির্বাচনের পরদিন থেকে রাজু ভাস্কর্যে অনশন করছিল কয়েকজন শিক্ষার্থী। গতকাল শুক্রবার রাতে পৌনে ১২টার দিকে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ সামাদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রাব্বানী তাদের সাথে দেখা করে কথা বলেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ হতে তাদের দাবী মেনে নেওয়ার আশ্বাস প্রদান করলে শিক্ষার্থীরা অনশন তুলে নেন। ঢাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর এবং জিএস গোলাম রাব্বানী উপস্থিত ছিলেন।