এ বসন্তে চলুন ঘুরে আসি সুনামগঞ্জের ‘শিমুল বাগান’ থেকে

এ বসন্তে চলুন ঘুরে আসি সুনামগঞ্জের ‘শিমুল বাগান’ থেকে

গাইবে গান ‘ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে’। ‘আহা আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে, এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়…।’ গানটির মতো প্রকৃতিতে বসন্তের রঙ লাগুক আর না লাগুক আগামীকাল (১৩ ফেব্রুয়ারি তথা পহেলা ফাল্গুন) থেকে সবাই মেতে উঠবে বসন্ত উৎসবে।

পর্যটকদের কাছে শীতের পর বসন্তই সবচেয়ে পছন্দের মৌসুম। কারণ, এই মৌসুমে চারপাশ থাকে রঙিন। রঙের টানে কিংবা নিজেকে রাঙিয়ে নিতে পর্যটকরা বসন্তে ছুটে যান সুনামগঞ্জের শিমুল বাগানে।

১০০ বিঘার বেশি জায়গা জুড়ে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে জাদুকাটা নদীর তীরে এই শিমুল ফুলের বাগান। পাশাপাশি আছে লেবু গাছ। যেখানে কিনা ৩ হাজারেরও বেশি গাছে ফুটে আছে অজস্র শিমুল। চোখ ধাঁধানো এমন সৌন্দর্যের দেখা পেতে যেতে হবে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে।

ছবিতে দেখলে বাংলাদেশে এমন জায়গা আছে অনেকেই বিশ্বাস করতে চাইবেন না। হ্যাঁ, এমনই একটি জায়গা হলো সুনামগঞ্জের শিমুল বাগান।

স্থানীয় চেয়ারম্যান বৃক্ষপ্রেমী জয়নাল আবেদীন প্রায় ১৪ বছর আগে এই শিমুলের চারা রোপণ করেছিলেন। পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে অনেক আগেই চলে গেছেন তিনি। কিন্তু তার এই অনন্য কীর্তি রয়ে গেছে আজও।

ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই পুরো এলাকাজুড়ে টকটকে লাল শিমুল ফুল দেখা যায়। শিমুল বাগানে ফুল আসার সময়ে পাশেই বহমান জাদুকাটা নদীতে পানির পরিমাণ সামান্য থাকে! তখন মরুভূমি সাদৃশ্য জাদুকাটা নদীর পাশে অবস্থিত রঙিন ক্যানভাসে প্রস্ফুটিত শিমুল বাগানটিকে মনে হয় এক চিলতে রক্তিম স্বপ্নভূমি। বাগানে আসার পর আপনি পৃথিবীর শত কাঠিন্যের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে শিমুল ফুলের মোহনীয় স্নিগ্ধতায় আপ্লুত হবেন।

৩০ একরেরও বেশি আয়তনের বাগানটির বৈশিষ্ট্য হলো-এটি যেমন বর্গাকার তেমনি গাছগুলোকেও লাগানো হয়েছে বর্গাকার ভাবে। এই স্কয়ার আকৃতির বাগানটির বিশেষত্ব হলো আপনি ডানে-বাঁয়ে, সামনে-পেছনে এমন কি কোণাকুণি, যেভাবেই তাকাবেন সমান্তরাল গাছের সারি দেখতে পাবেন।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সড়ক পথে বাসে যাওয়া যেতে পারে। ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়দাবাদ থেকে শ্যামলী পরিবহন এবং মহাখালী বাস স্টেশন থেকে এনা পরিবহনের নন এসি বাস যায় সুনামগঞ্জ। ভাড়া ৫শ’ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকা।

এছাড়াও ট্রেনে যেতে পারেন। তার জন্য কমলাপুর থেকে চলে যাবেন সিলেট। সেখান থেকে বাসে করে যাবেন সুনামগঞ্জে। নেমে নতুন ব্রীজ আব্দুস জহুর সেতু ওই পাড়ে মোটরবাইক দাঁড়িয়ে থাকে অনেক। কথা বলে বারেক টিলা নদীর এই পাড় পর্যন্ত ভাড়া নিবে ২০০ টাকা (দামাদামি করে ১৫০ তেও নাকি যাওয়া সম্ভব) একটাতে ২ জন চড়া যায়। জনপ্রতি তাহলে পরল ১০০ করে। জাদুকাটা নদীর সামনে নামিয়ে দিবে। ৫ টাকা দিয়ে খেয়া (ট্রলার) অতিক্রম করে ওইপাড়ে গেলেই বারেক টিলা, যা থেকে সুন্দর পুরো জাদুকাটা নদী দেখা যায়। পাশেই সীমান্ত ,তাই উত্তর দিকে বেশীদূর না যাওয়াই ভালো। বারেক টিলা থেকে নেমে চায়ের দোকান আছে কিছু, তাদের জিজ্ঞেস করলেই শিমুল বাগান যাওয়ার পথ দেখিয়ে দিবে। এছাড়াও নদী পার হওয়ার আগে যে মোটরবাইক নিয়েছিলেন তাদের বললেও আপনাকে শিমুল বাগান পৌঁছে দিবে। বিকেল পর্যন্ত হেঁটে হেঁটে ঘুরে, ছবি তুলে আবার বারেক টিলার সামনে থেকে মোটরবাইক নিয়ে সুনামগঞ্জ ফিরে আসতে পারবেন।

থাকা-খাওয়া

শিমুল বাগানের আশেপাশে থাকার ভালো জায়গা নেই। সুনামগঞ্জ বা সিলেটে এসে রাতে থাকতে পারেন। শুকনো খাবার সাথে বহন করলে ভালো হবে।

এই বাগানের এই রক্তিম সৌন্দর্য থাকে অল্প কিছুদিন। তাই, এখনই ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ুন অপরূপ এই সৌন্দর্য কাছ থেকে দেখতে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment