brandbazaar globaire air conditioner

ভারতে গরুর দুধের দাম সর্বকালের সর্বোচ্চে পৌঁছানোর শঙ্কা

ভারতে গরুর দুধের দাম সর্বকালের সর্বোচ্চে পৌঁছানোর শঙ্কা

বিশ্বের বৃহত্তম উৎপাদনকারী ভারত দুধের সরবরাহ এবং জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে আমদানি বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সংকটের মাঝে ভারতে দুধ কেনা ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে এবং শিগগিরই দেশটিতে দুধের দাম সর্বকালের সর্বোচ্চে পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দেশটির কৃষকরা দুধের উৎপাদন বাড়াতে রীতিমতো লড়াই করছেন। প্রাণঘাতী লাম্পি স্কিন রোগ ও করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গরুর প্রজনন ধীর হওয়ায় দেশটির বাজারে গবাদিপশুর সংকট দেখা দিয়েছে।

এর ফলে দেশটির বাজারে ইতোমধ্যে গত বছরের তুলনায় দুধের দাম প্রতি লিটারে ১৫ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত এক দশকের মধ্যে দেশটিতে এই বছরই সবচেয়ে বেশি বেড়েছে দুধের দাম। ভারতের বাজারে র্ব্তমানে প্রতি লিটার দুধ ৫৬ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে।

দুধ এবং অন্যান্য মৌলিক পণ্যের ক্রমবর্ধমান দাম চলতি বছরের শেষের দিকে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনে রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে উঠতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারতের কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ উপাসনা ভারদ্বাজ বলেন, ‘দুধের উচ্চমূল্যের কারণে সৃষ্ট যেকোনও ঝুঁকি বাড়তি চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে চলেছে।’

তিনি বলেন, ভোক্তা মূল্য সূচকে দুধের দাম বৃদ্ধির যেকোনও শিরোনাম মুদ্রাস্ফীতির ওপর যৌক্তিক প্রভাব ফেলতে পারে।

২০২২ সালে ভারতের দুগ্ধজাত পণ্যের রপ্তানি ৩৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। এরপর দুধের সরবরাহ হ্রাস ইতোমধ্যে ভারতে মাখন এবং স্কিমড মিল্ক পাউডারের (এসএমপি) ইনভেন্টরি কমিয়ে দিয়েছে। এমনকি ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রোটিন-সমৃদ্ধ দুগ্ধজাত বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা বেড়েছে।

চলতি বছর দুগ্ধজাত পণ্যের চাহিদা ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে ধারণা করছেন দেশটির দুগ্ধ শিল্প খাতের কর্মকর্তারা।

তবে দেশটির সরকার-সমর্থিত ন্যাশনাল ডেইরি ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (এনডিডিবি) একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত অর্থবছরে দুধের উৎপাদন মাত্র ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে; যা গত এক দশকে গড়ে বার্ষিক ৫ দশমিক ৬ শতাংশের তুলনায় কম। গণমাধ্যমের সাথে কথা বলার অনুমতি না থাকায় এই কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

ভারতের অন্যতম প্রধান দুধ উৎপাদনকারী রাজ্য রাজস্থানের খেজরি বুজুর্গ গ্রামের ৫৭ বছর বয়সী কৃষক রামাবতার শর্মা দুধের দাম বাড়ায় নগদ লাভের ব্যাপারে আশাবাদী হলেও সাশ্রয়ী মূল্যে গবাদি পশু খুঁজে পেতে ব্যাপক লড়াই করছেন বলে জানিয়েছেন।

শৈশব থেকে গবাদি পশু লালন-পালন করে আসা শর্মা বলেন, হাটে গরু কম থাকায় দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। তবে বাজারের এই দৃশ্য করোনাভাইরাস মহামারির সময়ের একেবারে বিপরীত বলে জানান তিনি। মহামারির সময় দেশটিতে গবাদিপশুর দাম ব্যাপক পরিমাণে কমে যায়।

দেশটির কৃষক এবং দুগ্ধ খামারিরা বলছেন, তাদের এখন বাজারের জন্য প্রস্তুত গবাদি পশুর মজুত ও দুগ্ধজাত পণ্যের তালিকা বাড়াতে পরবর্তী মৌসুমের অক্টোবর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

রাজস্থানের শীর্ষস্থানীয় সরবরাহকারী সারস ডেইরির মহা-ব্যবস্থাপক সন্তোষ শর্মা বলেন, ২০২৩ সালে আমরা দুধের উৎপাদন বাড়ানোর কোনো উপায় দেখতে পাচ্ছি না।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারতে দুধ ও দুগ্ধজাত ক্রিমের আমদানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ হাজার ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্রান্স, জার্মানি এবং পোল্যান্ড থেকে দুগ্ধজাত পণ্যের ক্রয় বৃদ্ধি করায় শুল্কও বেশি গুণতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশটির ব্যবসায়ীরা।

লাম্পি স্কিন রোগ সাধারণত গরুর শরীরে ফোসকা সৃষ্টি করে এবং এর দুধ উৎপাদন কমিয়ে দেয়। দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ভারতে ইতোমধ্যে এই রোগে লাখ লাখ পশু সংক্রমিত হয়েছে। এর মধ্যে কেবল রাজস্থানেই ৭৬ হাজার গরুর লাম্পি স্কিন রোগ হয়েছে। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে আরও ১ লাখ ৮৪ হাজারের বেশি গরু।

এদিকে, দুধের সরবরাহ সমস্যা ইতোমধ্যে দেশটির ভোক্তাদের ওপর চাপ তৈরি করেছে। মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ের নির্মাণ শ্রমিক সত্যেন্দ্র যাদব বলেন, ‘শুধু বাচ্চারা যাতে দুধ পায় তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা চায়ের সাথে দুধ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। কিন্তু আরও দাম বৃদ্ধি পেলে দুধ আমাদের নাগালের বাইরে চলে যাবে।’

 

Related posts