এবার রাষ্ট্রপতির কাছে খালেদার বিদেশে চিকিৎসার আবেদন বিএনপির

এবার রাষ্ট্রপতির কাছে খালেদার বিদেশে চিকিৎসার আবেদন বিএনপির

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি পাওয়া না পাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে বলে মনে করছেন দলটির সংসদ সদস্যরা। তারা বলেন, আইন নয়, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার ওপর অনুমতি পাওয়া না পাওয়া নির্ভর করছে। তবে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য যেতে অনুমতি দেবেন প্রধানমন্ত্রী, এটি তারা বিশ্বাস করেন না। তাই তারা প্রধানমন্ত্রী নয়, রাষ্ট্রপতির কাছে খালেদা জিয়া বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে আহ্বান জানান।

রোববার (২১ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সংসদ ভবনের সামনে এক মানববন্ধনে এসব কথা বলেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে দলীয় সংসদ সদস্যরা এ মানববন্ধন করেন।

মানববন্ধনে বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য জিএম সিরাজ বলেন, আইনমন্ত্রী বলেছেন ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর কোনো সুযোগ নেই। তাকে বিদেশে যেতে হলে কারাগারে গিয়ে আবেদন করে জামিন নিয়ে যেতে হবে। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই কেন তাকে জেলে যেতে হবে। তিনি এখন যেখানে আছে গুলশানের বাসভবন, সেটাকে সাব-জেল ঘোষণা করা হোক। সেখানে থেকে আবেদন করে তাকে বিদেশে পাঠানো যেতে পারে। সরকার আমাদের কি দেখায়?

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় প্রয়োজনে বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনতে পারবে- আইনমন্ত্রীর এ বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে জিএম সিরাজ বলেন, এখন পৃথিবীতে মেডিকেলের যে পড়াশোনা সবই এক। আমাদের দেশে ডাক্তার যা পড়ছে ইংল্যান্ডের চিকিৎসকরাও তাই পড়ছে। তাহলে সমস্যা কোথায়? সমস্যা হচ্ছে লজিস্টিক। আজ খালেদা জিয়ার লিভারের প্রচন্ড রকম খারাপ অবস্থা। সেটা আমাদের দেশের চিকিৎসায় হবে না। সেটা ওষুধে হবে না। তার জন্য সার্জারি দরকার।

তিনি আরও বলেন, এখন সময় খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে পাঠান। অন্যথায় উনার কিছু হলে দায় শুধু বর্তমান সরকারকে নিতে হবে তা নয়, আওয়াম লীগের ইতিহাসই পাল্টে যাবে।

জিএম সিরাজ বলেন, খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে যে ভাষায় বক্তব্য রেখেছেন, সত্যি কথা বলতে কি তাতে আমরা আশা করি না তিনি ম্যাডামকে বিদেশে যেতে অনুমতি দেবেন। তাহলে কার কাছে আশা করি, তার ওপরে তো একজন আছে। আমরা রাষ্ট্রপতিকে বলতে চাই, আপনার ক্ষমতাবলে ম্যাডামের চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। সংবিধানে আপনাকে সেই ক্ষমতা দেওয়া আছে।

দৈনিক আগামীর সময়

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের হারুনুর রশীদ বলেন, আজ প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা অনুমতি পাওয়া না পাওয়া। খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে সব বিরোধী দল ও মানুষের মধ্যে যে উদ্যম সৃষ্টি হবে তা দমন করার জন্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দিচ্ছেন না।

তিনি বলেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত ৩০ জনের বেশি ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সাজা মওকুফ করেছে। লক্ষ্মীপুরের খুনের আসামিদের সাজা মওকুফ করেছে সরকার। নাটোরের কামাল হত্যার আসামিদের সাজা মওকুফ করেছে এ সরকার। আজ দেশে আইনের শাসন থাকলে খালেদা জিয়ার জামিন হতো।

খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেওয়া আহ্বান জানিয়ে হারুন বলেন, এর ব্যতিক্রম কোনো কিছুই আমরা মানব না, মানব না। খালেদা জিয়ার মুক্তি না দিলে আমরা (বিএনপি) সংসদ সদস্যরা থাকব কি থাকব না তা চিন্তাভাবনা করব।

মানববন্ধনে বিএনপির সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, খালেদা জিয়া হেঁটে কারাগারে গিয়েছেন। গত তিন বছর তিনি সরকারের হেফাজতে ছিলেন। আওয়ামী লীগের হেফাজতের ছিলেন। তিনি নিজের হেফাজতে ছিলেন না। গত তিন বছরে সরকার তাকে সঠিক চিকিৎসা দেয়নি। আজ দেশনেত্রীর এ অবস্থার জন্য সরকারকে দায় নিতে হবে।

তিনি বলেন, সামান্য হাঁচি-কাশি হলে রাষ্ট্রপতি চিকিৎসার জন্য আমেরিকা, জার্মানিতে চলে যান। আর আমাদেরকে সরকার বলে উনার (খালেদা জিয়ার) বেস্ট চিকিৎসা নাকি বাংলাদেশে হচ্ছে। যদি বাংলাদেশে বেস্ট চিকিৎসা হতো, তাহলে আওয়ামী লীগের নেতাদের কেন ভারতে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে উল্লেখ করে রুমিন বলেন, উনার কিছু হলে পুরো দায়-দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।

বিএনপির আরেক সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান করোনা আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় মানববন্ধনে উপস্থিত হতে পারেননি বলেও জানান হারুন।

এছাড়া মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির সংসদ সদস্য উকিল আব্দুস সাত্তার, আমিনুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন।

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন