ওমিক্রন শনাক্ত করায় আমাদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে: দ. আফ্রিকা

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্ত করায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আরোপিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাকে ‘শাস্তি’ হিসেবে অভিহিত করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। শনিবার দেশটির সরকার বলছে, করোনার এই ধরন শনাক্তের কারণে তাদের শাস্তি পেতে হচ্ছে।

এদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া করোনার ওমিক্রন ধরনকে ‘উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্ট’ হিসেবে তালিকাভূক্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। করোনার অতি-সংক্রামক ধরন ডেল্টার চেয়েও নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট বেশি সংক্রামক হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা।

দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নতুন বি.১.১.৫২৯ ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের পর বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের আফ্রিকা অঞ্চল থেকে ফ্লাইট নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তটি দক্ষিণ আফ্রিকাকে তার উন্নত জিনোম সিকোয়েন্সিং এবং দ্রুত নতুন রূপ সনাক্ত করার সক্ষমতার জন্য এক ধরনের শাস্তি।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘শাস্তি নয়, বিজ্ঞানের চমৎকার এই সফলতার প্রশংসা করা উচিত।’

শুধুমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকায় নয়, নতুন এই ধরন বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও শনাক্ত হয়েছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রত্যেকটি সংক্রমণের ঘটনার সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকান অঞ্চলের সম্পৃক্ততা নেই। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রে এসব দেশের প্রতিক্রিয়া একেবারে ভিন্ন।

দক্ষিণ আফ্রিকার পর ইসরায়েল, বেলজিয়াম, বসতোয়ানা, হংকংয়েও ওমিক্রনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। করোনার এই ধরন শনাক্ত হওয়ার পর শুক্রবার এবং শনিবার তড়িঘড়ি করে বিশ্বের অনেক দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

গত বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকার একদল বিজ্ঞানী নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে বলে ঘোষণা দেন। দেশটির বিজ্ঞানীরা বলেছেন, তারা করোনার নতুন একটি ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করেছেন; যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ফাঁকি দিতে পারে। পাশাপাশি এটি করোনার অন্যান্য ধরনের তুলনায় আরও বেশি সংক্রামকও হতে পারে।

শুক্রবার ডব্লিউএইচও গ্রিক বর্ণমালা অনুযায়ী নতুন এই বি.১.১.৫২৯ ভ্যারিয়েন্টের নাম দিয়েছে ওমিক্রন। স্পাইক প্রোটিনে ৩০ বারের বেশি নিজের রূপ বদলে ফেলায় এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, করোনার নতুন এই ধরনটি টিকার কার্যকারিতাকেও ফাঁকি দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করে থাকতে পারে। তবে এখনই এই ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপারে পূর্বানুমানে পৌঁছানো কঠিন বলে সতর্ক করেছেন অনেকে।

ডব্লিউএইচওর তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের যে কয়েকটি ধরন শনাক্ত হয়েছে; তার মধ্যে ওমিক্রনের ‘রি-ইনফেকশন’ বা পুনরায় সংক্রমণের ক্ষমতা বেশি। অর্থাৎ—কেউ একবার এই ধরনে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠলেও ফের একই ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত হতে পারেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নালেদি পানদোর বলেছেন, এসব বিধিনিষেধ দেশের মানুষ, ভ্রমণ, পর্যটন শিল্প এবং ব্যবসার ক্ষতির কারণ হতে পারে। এই মুহূর্তে এটাই আমাদের উদ্বেগের কারণ। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনা করতে দেশগুলোর সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা যোগাযোগ করছে বলে জানিয়েছে তিনি।

করোনাভাইরাস মহামারিতে আফ্রিকা মহাদেশে সবচেয়ে ক্ষতির শিকার হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২৯ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৮৯ হাজার ৭৮৩ জন।

 

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন