খাস জমি থেকে উচ্ছেদের প্রতিবাদে শরণখোলায় দলিত ভূমিহীনদের বিক্ষোভ- মানববন্ধন

আবু হানিফ, বাগেরহাট থেকে ঃ

বাগেরহাটের শরণখোলায় সরকারি খাস জমি থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও দলিত সম্প্রদায়ের শতাধিক ভূমিহীন পরিবারের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ মামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার দুপুর ১২টায় উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজারের পূর্ব মাথায় বলেশ্বর নদী পাড়ে এ কর্মসূচী পালিত হয়। কর্মসূচীতে মুচি, ধোপা, নাপিত, কর্মকার, দিনমজুর পরিবারের শত শত নারী-পুরুষ, শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশগ্রহন করেন। ভূক্তভোগী পরিবারগুলো জানায়, বলেশ্বর নদীসংলগ্ন রায়েন্দা বাজারের ৬৬০ দাগের একটি ছোট খাল (নালা) ভরাট হওয়ার পর প্রায় ৩০বছর আগে ভুমিহীন মুক্তিযোদ্ধা ও দলিত শ্রেণির শতাধিক পরিবার সেখানে আশ্রয় নেয়। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক ওই জমি বাজারের পেরিফেরিভূক্ত করে ভূমিহীনদের নামে বন্দোবস্ত (ডিসিআর) দেয়। সেই থেকে তারা সেখানে ঘরবাড়ি নির্মান করে বসবাস করে আসছেন। ওই জমির ওপর সরকারিভাবে একাধিক পাকা রাস্তা নির্মানসহ স্থানীয়ভাবে মসজিদ, পাঠশালা গড়ে উঠেছে। কিন্তু উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের করিম ডিলারের ছেলে রেজাউল করিম রেজা ওই জমি নিজের নামে নেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করেন। একপর্যায় তিনি দ্বীপ্তবাংলা হিউম্যান রাইটস নামের নামসর্বস্ব একটি মানবাধিকার সংস্থার চেয়ারম্যান পরিচয়ে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে আদাল সম্প্রতি ভূমিহীন পরিবারগুলোকে উচ্ছেদের নির্দেশ প্রদান করেন। ওই জমিতে বসবাসকারী ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধা আ. আজিজ বলেন, আমার নিজস্ব কোনো জমি নেই। একারণে সরকারি খাস জমি ডিসিআর নিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। এখন উচ্ছেদ করলে পরিবার পরিজন নিয়ে ফুটপাতে বসা ছাড়া কোনো উপায় থাকবেনা। কাঠ মিস্ত্রি মো. লিখন, হরিচাঁন ঋষি, নির্মল ধোপা, বিশ্বজিৎ শীল ও তনু বেগম বলেন, আমরা ৩০বছর ধরে এই জমিতে কুঁড়েঘর তুলে বসবাস করছি। এই জমির ওপর নির্ভর করে জীবন চলে। এখন প্রভাবশালী রেজাউল করিম রেজার এই জমির ওপর লোভ পড়েছে। তাই মামলা দিয়ে আমাদের উচ্ছেদ করে জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ অবস্থায় ভূমিহীন পরিবারগুলো তাদের আশ্রয় হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন। তাদের যাতে আশ্রয়হীন না হয়ে পড়ে সে জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এব্যাপারে শরণখোলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিন আকন বলেন, বাজারের সবচে নি¤œ আয়ের ভূমিহীন মানুষগুলো এখানে বসবাস করছে। এখান থেকে উচ্ছেদ করা হলে তাদের যাওয়ার জায়গা থাকবেনা। শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিংকন বিশ্বাস বলেন, যদিও ওখানে কিছু দরিদ্র পরিবার বসবাস করছে, কিন্তু হাইকোর্টের একটি রিটের কারণে তাদেরকে উচ্ছেদ করতে হচ্ছে। এব্যাপারে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানতে চাইলে রিট আবেদনকারী দ্বীপ্তবাংলা হিউম্যান রাইটস’র চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম রেজা বলেন, সরকারি জমি উদ্ধারে আমি হাইকোর্টে রিট করেছি। আদালত উচ্ছেদ অর্ডার দিয়েছেন। এখানে আমার কিছু করার নেই।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment