খুলনাকে হারিয়ে জয়ের ধারায় ফিরল সাকিবের বরিশাল

খুলনাকে হারিয়ে জয়ের ধারায় ফিরল সাকিবের বরিশাল

খুলনা টাইগার্সকের বিপক্ষে ১৭ রানের জয় তুলে নিয়েছে ফরচুন বরিশাল। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে নিজেদের প্রথম ম্যাচ জয় দিয়ে শুরু করার পর টানা দুই ম্যাচ হেরে পয়েন্ট টেবিলের একদম তলানিতে নেমে যায় সাকিব আল হাসানে দল। ঢাকা পর্ব শেষে চট্টগ্রামে গিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তারা। বরিশালের হয়ে একাই ৪ উইকেট নেন পেসার মেহেদী হাসান রানা।

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আজ (শনিবার) নিজেরা আগে ব্যাট করে স্কোর বোর্ডে ১৪১ রান তুলে খুলনাকে স্পিনের ফাঁদে ফেলে আটকে দেয় ১২৪ রানে। এতে ১৭ রানের জয় তুলে নিয়েছে বরিশাল। চার ম্যাচে এটি তাদের দ্বিতীয় জয়। অন্যদিকে এই ম্যাচ হারের ফলে লিগ পর্বে আরো একবার হারের স্বাদ পেল খুলনা। চার ম্যাচে তাদেরও জয়-পরাজয়ের সংখ্যা সমান ২টি করে।

এদিন ১৪২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা খুলনাকে শুরুতেই চেপে ধরেন প্রথমবারের মতো বরিশালের হয়ে মাঠে নামা দলটির আফগান রিক্রুট মুজিব-উর-রহমান। ইনিংসের প্রথম ওভারেই মুজিবের হাতে বল তুলে দেন সাকিব। অধিনায়কের আস্থার মান রাখেন মুজিব। জোড়া আঘাতে ফেরান আন্দ্রে ফ্লেচার ও সৌম্য সরকারকে। ফ্লেচার আউট হন ৪ রান করে। পরের বলেই লেগবিফোরের ফাঁদে পড়ে শূন্য হাতে সাজঘরের পথ ধরেন সৌম্য।

পাওয়া প্লেতে অবশ্য আর কোনো উইকেট হারায়নি খুলনা। ৬ ওভারে তুলতে পারে ৩০ রান। সপ্তম ওভারে দৃশ্যপটে এসেই সফল সাকিব, ফেরালেন উইকেটে সেট হওয়া শেখ মেহেদী হাসানকে। সাকিবকে স্লগ করতে গিয়ে নিজের সীমানা ছেড়ে বের হয়ে আসেন মেহেদী, সুযোগ বুঝে স্টাম্প ভেঙে দেন সোহান। ২৩ বলে ১৭ রান করে আইট হন মেহেদী। বরিশালে চ্যায়ানম্যান জ্যাক লিনটট তুলে নেন রনি তালুকদের উইকেট। রনি ১৪ রান করে আউট হলে ৪০ রান তুলতেই প্রথম সারির ৪ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে বিপদে খুলনা।

সেখান থেকে দলের হাল ধরেন মুশফিকুর রহিম আর ইয়াসির আলি রাব্বি। দুজনের পার্টনারশিপ থেকে আসে ৪৬ রান। তবে চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে পারেননি তারা, এতে বাড়ছিল দলের চাপ। সে চাপ সরাতে গিয়ে ব্যাট চালাতে যান রাব্বি। মেহেদী হাসান রানাকে দাউন্ড দ্য উইকেটে গিয়ে সীমানা ছাড়া করতে চেয়ে বলে লাইন হারিয়ে বোল্ড হন, ফেরেন ২০ বলে ২৩ রান করে।

দলটির শ্রীলঙ্কান রিক্রুট থিসারা পেরেরা ব্যাট হাতে নেমেই খাত খুলে খেলতে থাকেন। পেরার সেই বিধ্বংসী ব্যাট থামান শফিকুল। ১টা চার ও ২ ছয়ে ৯ বলে ১৯ রান করে আউট হন পেরেরা। সেকুগে প্রসান্না আজ একেবারেই সুবিধা করতে পারেননি। লিনটটের দ্বিতীয় শিকার হন ২ রান করে। ফরহাদ রেজা আউট হন শূন্য রানে। তবে অপর প্রান্তে দলের রানের চাকা সচল রাখেন মুশফিক। যদিও ব্যক্তিগত ৩৮ রানে শফিকুলের হাতে জীবন পান তিনি।

মুশফিকের দ্বিতীয়বার পাওয়া সেই জীবন অবশ্য কাজে আসেনি শেষপর্যন্ত। ইনিংসের ১৯তম ওভারে ফরহাদ রেজাকে আউট করার পর ওভারের শেষ দুই বলে শরিফউল্লাহ (১) ও মুশদফিকের উইকেট তুলে নিয়ে খুলনার ইনিংস ১২৪ রানে থামিয়ে দেন রানা। এতে ১৭ রানে জয় পায় বরিশাল। সমান ১টি করে চার-ছক্কায় মুশফিক আউট হন ৩৬ বলে ৪০ রান করে। বরিশালের হয়ে রানা ৩ ওভারে ১৭ রান দিয়ে একেই নেন ৪ উইকেট।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামে ফরচুন বরিশাল। এদিন ব্যাটিং অর্ডারের বেশ পরিবর্তন এনেছে তারা। এ ম্যাচে ওপেনিংয়ে ফেরেন ক্রিস গেইল, তার সঙ্গে ইনিংস শুরু করতে নামেন জ্যাক লিনটট। তবে বেশিক্ষণ স্থায়ী হননি লিনটট, ৬ বলে ১১ রান করে মোহাম্মদ শরিফউল্লাহর বলে বোল্ড হন। তিনে নেমে কামরুল ইসলাম রাব্বিকে ব্যাক টু ব্যাক ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে শেখ মেহেদীর হাতে ধরা পড়েন জিয়াউর রহমান। ফেরেন ১৩ বলে ১০ রান করে।

অন্য প্রান্তে দেখেশুনে ব্যাট চালাতে থাকেন গেইল। তবে দুই সতীর্থকে হারিয়ে খুলনার বোলারদের উপর চড়াও হন। সেই রুদ্রমূর্তি বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেননি। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ফিফটির দিকে ছুঁটতে থাকা গেইলকে থামান সেকুগে প্রসান্না। ৬টি চার ও ২টি ছক্কার সাহায্যে ৩৪ বলে ৪৫ রান করেন ইউনিভার্সাল বস। পাঁচে নামেন বরাবরই টপ অর্ডারে খেলা নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে চারে নেমে সুবিধা করতে পারেননি নুরুল হাসান সোহান। ১১ বলে ৮ রান করে শেখ মেহেদীর শিকারে পরিণত হন তিনি।

৮৭ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন শান্ত ও তৌহিদ হৃদয়। পঞ্চম উইকেটে তাদের পার্টনারশিপ থেকে আসে ৩৫ রান। ইনিংসের ১৭তম ওভারে হৃদয় ২১ বলে ২৩ রান করে ফরহাদ রেজার বলে আউট হলে সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে আসেন সাকিব আল হাসান। ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন করে নিচে নামলেও কথা বলেনি সাকিবের ব্যাট। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের বার্তা দেওয়া সাকিব ২টি চার মেরে ফেরেন ৯ রান করে।

থিসারা পেসেরার করা সে ওভারের ২ বল পরেই প্যাভিলিয়নে শান্ত। বোল্ড হয়ে ফেরেন ১৫ বলে ১৯ রান করে। সৈকত আলির বদলে সুযোগ পাওয়া ইরফান শুক্কুর ৪ বলে ২ রান করে রেজার দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন। এতে নির্ধারিত ২০ ওভারে বরিশাল ৯ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে ১৪১ রান। খুলনার পক্ষে পেরেরা ১৮ রান দিয়ে নেন ২টি উইকেট। ফরহাদ রেজাও পান সমান ২টি উইকেট।

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন