ঘুমের আগে চার ‘কুল’ পড়ার ফজিলত

ঘুমের আগে চার ‘কুল’ পড়ার ফজিলত

অনেকে ঘুমানোর পূর্বে চার কুল তথা সুরা কাফিরুন, সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়ে শরীরে ফুঁ দিয়ে থাকে। এই আমলের কি কোন প্রমাণ আছে? কোন হাদিস আছে কি? দয়া করে জানালে ভাল হতো।

চার কুল পড়ার কথা হাদিসে রয়েছে। এই আমল করলে— আল্লাহ তাআলা সামগ্রিক বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করবেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) এই সুসংবাদ দিয়েছেন।

হ্যাঁ, এর স্বপক্ষে হাদিস রয়েছে। উরওয়া ইবনে নওফাল তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুল (সা.) তাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘কেন এসেছো?’ তিনি বললেন, এজন্য এসেছি— যাতে আপনি আমাকে কিছু শিক্ষা দেন; যা আমি শোয়ার সময় পড়তে পারি। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন তুমি বিছানায় যাবে, তখন “কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” পড়বে। তারপর এটি শেষ করে শুইবে। কেননা, এটি শিরক থেকে মুক্ত করে।’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ২৬৫২৮; নাসায়ি, হাদিস : ১০৫৬৯)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুল (সা.) প্রতি রাতে যখন বিছানায় আসতেন, তখন দুই তালুকে একত্র করতেন। তারপর তাতে ফুঁ দিয়ে— ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ এবং ‘কুল আউজু বিরাব্বিল ফালাক’ ও ‘কুল আউজু বিরাব্বিন নাস’ পড়তেন। তারপর শরীরের যতটুকু অংশ সম্ভব মুছে দিতেন। শুরু করতেন মাথা ও চেহারা ও শরীরের সামনের অংশ থেকে। এভাবে তিনবার করতেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৪৮৫৩; সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০১৭)

একসঙ্গে চার কুল।

সুরা কাফিরুন

সুরা আল-কাফিরুন পবিত্র কুরআনের ১০৯ তম সুরা। সুরাটির আয়াত সংখ্যা ৬। সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয় তাই সুরাটি মক্কি সুরার শ্রেণীভুক্ত। মুসলিম জীবনে এই সুরার তাৎপর্য অনেক কারণ এই সুরার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার একত্ববাদ ও ইবাদাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও এই সুরাটি গোটা মুসলিম জাতির জন্যে একটা উদাহরণ স্বরূপ যে, কোনো পরিস্থিতিতেই তারা শত্রুর সাথে আপসে যাবে না— যা ইসলাম সমর্থন করে না। অর্থসহ সুরাটির উচ্চারণ তুলে ধরা হলো-

قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ – لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ – وَلَا أَنتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ – وَلَا أَنَا عَابِدٌ مَّا عَبَدتُّمْ – وَلَا أَنتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ – لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِينِ -.

উচ্চারণ : কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন। লাআ বুদু মা তা’আবুদুন। ওয়ালা আনতুম আবিদুনা মা-আ’বুদ। ওয়ালা আনা আবিদুম মা-আবাত্তুম। ওয়ালা আনতুম আবিদুনা মা আ’বুদ। লাকুম দি-নুকুম ওয়ালিয়া দ্বিন।

অর্থ : বলুন, ‘হে কাফিররা! আমি তার ‘ইবাদাত করি না যার ‘ইবাদাত তোমরা করো। এবং তোমরাও তাঁর ‘ইবাদাতকারী নও যাঁর ‘ইবাদাত আমি করি। এবং আমি ‘ইবাদাতকারী নই তার যার ‘ইবাদাত তোমরা করে আসছ। তোমরা এবাদতকারী নও, যার এবাদত আমি করি। তোমাদের কর্ম ও কর্মফল তোমাদের জন্যে এবং আমার কর্ম ও কর্মফল আমার জন্যে।

সুরা ইখলাস

আল্লাহর একত্ববাদের অনন্য বৈশিষ্ট্য ও পরিচয়সমৃদ্ধ সুরা। কোরআনের ১১২তম ও ছোট্ট সুরা এটি। এ সুরার তেলাওয়াত ও আমলের প্রবণতা মানুষের মধ্যে বেশি। সুরার নামের অর্থ থেকেই এর ফজিলত, মর্যাদা ও নেয়ামত প্রকাশ পায়। অর্থসহ সুরাটির উচ্চারণ তুলে ধরা হলো-

قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ – اللَّهُ الصَّمَدُ – لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ – وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ

উচ্চারণ : কুল হুআল্লাহু আহাদ। আল্লাহুচ্চামাদ। লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ। ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহু কুফুয়ান আহাদ।’ (মাখরাজসহ বিশুদ্ধ উচ্চারণ শিখে নেওয়া জরুরি )

অর্থ : (হে রাসুল! আপনি) বলুন, তিনিই আল্লাহ, একক। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। আর তার সমতুল্য কেউ নেই।’

সুরা ফালাক্ব

সুরা ফালাক্ব পবিত্র কোরআনের ১১৩ তম সুরা। শয়তানের আক্রমণ ও জাদুটোনাসহ সব ধরনের অনষ্টিতা থেকে মুক্ত থাকতে— এ সুরার নিয়মিত আমলই মানুষের জন্য যথেষ্ট। সুরাটিতে মহান আল্লাহ তাআলা তার কাছে আশ্রয় চাওয়ার কৌশল তুলে ধরেছেন। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় সুরাটির অনেক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থসহ সুরাটির উচ্চারণ তুলে ধরা হলো-

قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ  – مِن شَرِّ مَا خَلَقَ – وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ – وَمِن شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ – وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ

উচ্চারণ : কুল আউজু বিরাব্বিল ফালাক্ব; মিন শাররি মা খালাক্ব; ওয়া মিন শাররি গাসিক্বিন ইজা ওয়াক্বাব; ওয়া মিন শাররিন নাফ্ফাছাতি ফিল উক্বাদ; ওয়া মিন শাররি হাসিদিন ইজা হাসাদ। (মাখরাজসহ বিশুদ্ধ উচ্চারণ শিখে নেয়া জরুরি )

অর্থ : বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার, তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্ট থেকে। অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে, যখন তা সমাগত হয়, গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে জাদুকারিনীদের অনিষ্ট থেকে এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে।

সুরা নাস

পবিত্র কোরআনেরর সর্বশেষ (১১৪তম) সুরা। এর প্রতিটি আয়াতের মাধ্যমে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব ধরনের অনষ্টিতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া হয়েছে। সুরার প্রথম তিন আয়াতে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করা হয়েছে। আর পরের তিন আয়াতে জ্বিন ও মানুষরূপী শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আশ্রয় গ্রহণের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অর্থসহ সুরাটির উচ্চারণ তুলে ধরা হলো-

قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ – مَلِكِ النَّاسِ – إِلَهِ النَّاسِ – مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ – الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ – مِنَ الْجِنَّةِ وَ النَّاسِ

উচ্চারণ : কুল আউজু বিরাব্বিন নাস; মালিকিন্ নাস; ইলাহিন্ নাস। মিন্ শররিল ওয়াস্ওয়াসিল খান্নাস; আল্লাজি ইউওয়াসয়িসু ফি ছুদুরিন নাস। মিনাল ঝিন্নাতি ওয়ান নাস। (মাখরাজসহ বিশুদ্ধ উচ্চারণ শিখে নেয়া জরুরি )

অর্থ : বলুন, আমি আশ্রয় চাই মানুষের পালনকর্তার কাছে, মানুষের অধিপতির কাছে, মানুষের মাবুদের কাছে। তার অনিষ্ট থেকে, যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্মগোপন করে, যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে। জ্বিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে।

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন