নজরদারি পণ্যের চাহিদা বেড়েছে

বৈশ্বিক বাজার ৩১ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের
এআই নির্ভর ভিডিও সার্ভিল্যান্সের চাহিদা বাড়ছে
দেশে কয়েক হাজার কোটি টাকার বাজার দাঁড়াচ্ছে

দেশে নজরদারি ও নিরাপত্তা প্রযুক্তিপণ্যর বাজার বড় হচ্ছে। ২০১৮ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত সিসিটিভি, ফায়ার অ্যালার্ম সিস্টেম, হাজিরা যন্ত্র বা অ্যাটেনডেন্স সিস্টেমের মতো যন্ত্র প্রতি মাসে প্রায় ১২ কোটি টাকার কেনাবেচা হতে দেখা গেছে। এ ধরনের পণ্যের কয়েকটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সংগৃহীত তথ্য থেকে এ চিত্র পাওয়া যায়। ২০১৯ সালে নজরদারি ও নিরাপত্তা প্রযুক্তিপণ্যর বাজার আরও বাড়বে বলে মনে করছেন এ খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা।

আমদানিকারকদের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে প্রতি মাসে সিসিটিভির আমদানি ৫০ হাজার ইউনিটের বেশি। হাজিরা যন্ত্রের আমদানি আড়াই হাজার ইউনিট। ফায়ার অ্যালার্ম সিস্টেমের সেটআপ ১২০ ইউনিট। তবে এ খাতে অটোমেশন বা অন্যান্য সিস্টেমের ব্যবহার দ্রুত গতিতে বাড়ছে। সব মিলিয়ে প্রতি মাসে দেশে নিরাপত্তা প্রযুক্তিপণ্যের বাজার প্রায় ১৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

সার্ভিল্যান্স খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ার বাজারে সার্ভিল্যান্স পণ্যের চাহিদা বাড়বে। এর মধ্যে বাংলাদেশের বাজারেও এ পণ্যের চাহিদা থাকবে।

ছয় বছর আগে থেকে, বিশেষ করে ২০১২ সাল থেকে ভিডিও সার্ভিল্যান্স পণ্যের চাহিদা দেশের বাজারে বাড়তে থাকে। ২০১৯–২০ সালে এ ধরনের পণ্যের বাজার আরও বড় হবে বলে দেশের সার্ভিল্যান্স খাতের ব্যবসায়ীরা মনে করছেন।

এ খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে নিরাপত্তা পণ্যের বাজার বড় হচ্ছে। বিশেষ করে সিসিটিভির বাজার বড় হচ্ছে। ২০১৩ সাল থেকে এর বাজার বাড়তে শুরু করে বলে মনে করছেন তাঁরা। বর্তমানে বছরে দুই থেকে আড়াই লাখ সিসিটিভির চাহিদা রয়েছে।

দেশে সিসিটিভির বাজার সম্পর্কে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্মার্ট টেকনোলজিস সূত্রে জানা যায়, তাদের কাছে প্রতি মাসে ৫–৬ হাজার সিসিটিভির চাহিদা রয়েছে এখন। এর চাহিদা বাড়ছেই। অ্যানালগ ক্যামেরা আর আইপি দুই ধরনের ক্যামেরার চাহিদা রয়েছে। সিসিটিভি সেবা সাধারণ ব্যবহারকারীদের বাজেটের মধ্যে চলে এসেছে। এখন সব যন্ত্রাংশ মিলিয়ে কম খরচে পাওয়া যাচ্ছে এসব সেবা। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকা অনেকে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বা সিসি ক্যামেরা স্থাপন করার দিকে জোর দিচ্ছেন। এতে রাজধানীসহ সারা দেশে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করার চাহিদা বেড়েছে।

এক্সেল টেকনোলজিসের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক বছরে দেশে সিসিটিভির চাহিদা অনেক বেড়েছে। এখন অনেক কম খরচেই নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি স্থাপন করা যায়। তাই অনেকেই এ সুবিধা নিচ্ছেন। নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন সবাই। সিসিটিভির সঙ্গে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির চাহিদাও বাড়ছে। ডিভিআর, স্টোরেজ, কেব্‌ল ও মনিটরের বিক্রি বেড়ে গেছে।

প্রযুক্তিপণ্যের পরিবেশক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ব্র্যান্ডের তথ্য অনুযায়ী, দেশে নিরাপত্তা প্রযুক্তিপণ্যের বাজার বড় হচ্ছে। ক্যামেরা, মনিটরসহ বিভিন্ন পণ্যের ক্রেতা বাড়ছে।

নজরদারি পণ্য বিক্রেতারা বলছেন, এ খাতে এখন বছরে ৫ লাখ পর্যন্ত পণ্যের চাহিদা আছে, যা প্রতিবছর দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে। এতে এ খাতে দেশের বাজার কয়েক হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ছাড়াতে পারে।

এদিকে, বিশ্বজুড়েই নজরদারি বা সিকিউরিটি পণ্যের বাজার বড় হচ্ছে। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড মার্কেটের তথ্য অনুযায়ী, ফিজিক্যাল সিকিউরিটি প্রোডাক্ট মার্কেট ২০১৮ সালে ছিল ৩১ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০১৭ সালের চেয়ে ৭ শতাংশ বেশি। চার বছর ধরে ৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ হারে নজরদারি পণ্যের বাজার বড় হচ্ছে। গবেষকেরা পূর্বাভাস দিয়েছেন, নজরদারি পণ্যের বাজার ২০২৩ সাল নাগাদ ৫১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে।

এর মধ্যে ভিডিও সার্ভিল্যান্স প্রোডাক্ট বা সিসিটিভির বাজার হবে সবচেয়ে বড়। ২০২৩ সাল নাগাদ ১৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ হারে বাড়বে এর বাজার। এর মধ্যে এআই ভিডিও অ্যানালিটিকসের চাহিদাও বাড়তে দেখা যাবে। এ খাতে বাজার আগামী পাঁচ বছরে বেড়ে আরও ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন যুক্ত করবে। আগামী ১০ বছরে এআই ভিডিও অ্যানালিটিকস খাতটি গেম চেঞ্জার হয়ে উঠবে। এ খাতটি ঘিরেই নতুন পণ্য বাজারে আসবে।

চীনসহ এশিয়ার বাজার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এর বাইরে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের বাজারে সার্ভিল্যান্স পণ্যের চাহিদা থাকবে। ভিডিও সার্ভিল্যান্স যন্ত্রপাতি তৈরিতে এগিয়ে থাকবে চীন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment